বহুল আলোচিত পারমাণবিক চুক্তিটি ইরান ‘মেনে চলছে’ কংগ্রেসকে এমন সার্টিফিকেট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গতকাল শুক্রবার দেওয়া এক ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বড় ধরনের এ পরিবর্তনের কথা জানিয়ে তিনি চুক্তিটি বাতিলও করতে পারেন বলে সতর্ক করেছেন, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
ইরান পারমাণবিক চুক্তিটি মেনে চলছে, অন্যান্য বিশ্ব শক্তিগুলো এমন সার্টিফিকেট দিলেও ট্রাম্প তা অগ্রাহ্য করলেন। ভাষণে ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী এবং মধ্যপ্রাচ্যের উগ্রপন্থি গোষ্ঠীগুলোর প্রতি দেশটির কথিত সমর্থনের বিষয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে কথা বলেন।
ইরান পারমাণবিক চুক্তির ‘ভাবধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে না’ বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তেহরান যেন কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতা অর্জন করতে না পারে তা নিশ্চিত করাই তার লক্ষ্য। এসব বলার মধ্য দিয়ে তিনি পারমাণবিক চুক্তিটির ভবিষ্যৎ যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের দায়িত্বে ছেড়ে দিলেন বলে মন্তব্য করেছে রয়টার্স।
ট্রাম্প ইরানের বিপ্লবী রক্ষীদলের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেন এবং সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরাকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে তেহরানের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো পথে চলতে পারি না ধারণাযোগ্যভাবে যা আরো সহিংসতা, আরো সন্ত্রাস এবং ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার অত্যন্ত বাস্তব হুমকিতে পরিণত হতে পারে।
কঠোর ভাষায় করা ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের প্রশংসা করেছে ইরানের আঞ্চলিক শত্রু ইসরায়েল, কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তার এসব বক্তব্যের সমালোচনা করেছে।
আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর বিষয়ে নিজের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করছেন ট্রাম্প। এই নীতির অংশ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ সংক্রান্ত বাণিজ্য আলোচনা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি, এবার ইরান পারমাণবিক চুক্তির ক্ষেত্রেও ওই নীতির প্রয়োগ ঘটালেন।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে ইরান পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, চীন ও ইইউয়ের অবস্থানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের অবস্থানের অসঙ্গতি তৈরি হল। অপরদিকে ইরানের বিষয়ে তার কৌশল নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে তেহরান।
ছয় বিশ্বশক্তি ও ইরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির আলোকে ইরানের ওপর থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প তার পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তিটি থেকে সরিয়ে না নিলেও ইরানের ওপর থেকে তুলে নেওয়া নিষেধাজ্ঞা আবার আরোপ করা হবে কি না তা ঠিক করতে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসকে ৬০ দিনের সময় দিয়েছেন।
কংগ্রেস যদি নিষেধাজ্ঞা আবার আরোপ করে তাহলে পারমাণবিক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাতে চুক্তিটি ভেঙে যেতে পারে; অপরদিকে কংগ্রেস যদি কিছুই না করে তাহলে চুক্তিটি কার্যকর থাকবে।