ইতিহাসে প্রথম ‘অবস্ট্রাকিং দ্য ফিল্ড’ অপরাধে আউট হওয়ার ঘটনা ঘটল বিগব্যাশে

0
বিগব্যাশ

বিগব্যাশে বুধবার হোবার্ট হারিকেনসের ছুড়ে দেওয়া ১৮০ রানের টার্গেটে ব্যাট করছিলেন ব্রিসবেন হিটের অ্যালেক্স রস। ম্যাচের তখন বেশ টানটান অবস্থা। ১৯ বলে দরকার ৪৯ রান। এ অবস্থায় মিড উইকেটে পুল করে দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড় দেন রস। হারিকেনসের ফিল্ডার জোফ্রা আর্চার বুলেটগতির থ্রো করেন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। রানআউট এড়াতে পড়িমরি করে ডাইভ দিয়েছিলেন রস। কিন্তু বলটা তাঁর শরীরে লেগে আঘাত হানল স্টাম্পে!
বিগব্যাশ
রানআউট ভেবে আবেদন করেছিলেন হারিকেনসের খেলোয়াড়েরা। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্পে আঘাত হানার আগেই ক্রিজে পৌঁছে গিয়েছিলেন রস। অর্থাৎ রানআউট হননি। কিন্তু বলের স্টাম্পে আঘাত হানা কিংবা উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে জমা পড়া বাধাগ্রস্ত করতে ব্রিসবেনের এ ব্যাটসম্যান বলের লাইনে দৌড়েছেন, এমনটা ভেবে থার্ড আম্পায়ার তাঁকে ‘অবস্ট্রাকিং দ্য ফিল্ড’ আউট ঘোষণা করেন!

যদিও ভিডিও রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে বলের আঘাত থেকে শরীর বাঁচাতে তিনি ওভাবে দৌড়েছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে থ্রো আটকানোর চেষ্টা করেননি। কিন্তু ভগ্ন মনোরথে ড্রেসিং রুমে ফিরে যাওয়া ছাড়া তাঁর আর কিছুই করার ছিল না। শেষ পর্যন্ত ব্রিসবেনও ম্যাচটা ৩ রানে হেরেছে। ম্যাচ শেষে ভিক্টোরিয়ান এ ব্যাটসম্যানের টুইট, ‘দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে পারি বলের আঘাত থেকে বাঁচতে লাইন থেকে সরে দৌড়েছি।’

বিগব্যাশের ইতিহাসে এটাই প্রথম ‘অবস্ট্রাকিং দ্য ফিল্ড’ অপরাধে আউট হওয়ার ঘটনা! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একই অপরাধে আউট হয়েছেন মাত্র আটজন। সর্বশেষ এমন ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ান কোনো খেলোয়াড়ের জড়িত থাকার নজির দেখা গেছে ২০১৫ সালে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। সেবার মিচেল স্টার্কের থ্রো হাত দিয়ে ঠেকিয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ‘অবস্ট্রাকিং দ্য ফিল্ড’ অপরাধে আউট হন বেন স্টোকস।

তবে অ্যালেক্স রসের আউটটি কিন্তু বেশ বিতর্ক ছড়িয়েছে। ম্যাচ শেষে ব্রিসবেন অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ভাষ্য, ‘প্রথমে আমি বিশ্বাস করি না এটা আউট ছিল। হারিকেনস এবং জর্জ বেইলি (অধিনায়ক) খেলার চেতনা তুলে ধরার সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।’ এ নিয়ে বেশ তোলপাড় চলছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে। ম্যাককালাম সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন অবস্ট্রাকিং দ্য ফিল্ড আউটটির ব্যাখ্যা পরিষ্কার কি না তা নিয়ে।

দ্বিতীয় রান নেওয়ার সময় দেখা যায় রস সোজা দৌড়াতে শুরু করে উইকেটের মাঝপথে বাঁয়ে বাঁক নিয়ে দৌড় দেন। সোজা দৌড়ালে বল তাঁর গায়ে বা ব্যাটে লাগলেও আম্পায়াররা নটআউট দিতেন। যেহেতেু তিনি দৌড়ের পথ বদলেছেন, আম্পায়ারের মনে হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ফিল্ডিং বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অতএব রস আউট। আইনের চোখে এটাই ঠিক।

আবার অবস্ট্রাকিং দ্য ফিল্ড আইনেই বলা আছে, কোনো ব্যাটসম্যান যদি ইনজুরি থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁকে এই আইনে আউট দেওয়া যাবে না। ম্যাককালামের যুক্তি হলো, রস যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বলটা আটকাতেই চাইতেন, তাহলে বাঁয়ে না বেঁকে তিনি যেতেন ডান দিকে; যেদিক থেকে থ্রো-টা এসেছে। রস বাঁয়ে গেছেন কেবল বলের আঘাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে। ম্যাককালাম মনে করেন, প্রতিপক্ষ অধিনায়কের উচিত ছিল ক্রিকেটীয় চেতনার জায়গা থেকে আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্তকে নাকচ করে রসকে নটআউট করার উদ্যোগ নেওয়া।

রস যখন আউট হন, ১৮ বলে ৪৮ রান দরকার ছিল ব্রিসবেনের। ওই অবস্থা থেকে ম্যাচটি হেরে যাওয়ার কারণেই হয়তো ব্রিসবেন কিছুতেই মানতে পারছে না এই আউট। মূল্যবান দুই পয়েন্ট হারিয়ে ব্রিসবেন যে টেবিলে দুইয়ের বদলে চারে।

এ নিয়ে চলা বিতর্কের মুখে অস্ট্রেলিয়ার হাইপারফরম্যান্স কোচ একের পর এক টুইট করায় ৩ হাজার ডলার জরিমানার মুখেও পড়েছেন!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে