হয়তো শুনে অবাকই হবেন। পৃথিবীতে এমন একজন মানুষ আছেন, যিনি তাঁর এলাকায় একাই বেঁচে আছেন। তাঁর গোত্রের আর কোনো সদস্য বেঁচে নেই। কত দিন ধরে তিনি একা বেঁচে আছেন? বিবিসি ও গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, তাঁর এই একাকিত্ব ২২ বছরের!
নিঃসঙ্গ বেঁচে থাকা এই মানুষটির বসবাস ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলে। বর্তমানে তিনি দেশটির রন্ডুনিয়া প্রদেশের আমাজন অঞ্চলে রয়েছেন। আমাজনে বসবাসরত স্থানীয় নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করে ব্রাজিল সরকারের ইন্ডিজেনিয়াস সংস্থা ‘ফুনাই’। সংস্থাটির দাবি, লোকটি এখনো সুস্থ আছেন। তিনি শিকার করছেন, পেঁপে ও ভুট্টা চাষ করছেন।
১৯৯৬ সাল থেকে ওই ব্যক্তির দিকে নজর রাখছে ফুনাই। ধারণা করা হচ্ছে, লোকটির বয়স ৫০ বছরের কিছু বেশি হবে।
একাকী বেঁচে থাকা এই ব্যক্তির ওপর অল্প কিছু নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র ও সংবাদপত্রের নিবন্ধ প্রকাশিত হলেও কেউই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। কারণ ওই ব্যক্তি বা তাঁর গোত্রের ভাষা কী, তা গবেষকদের জানা নেই। এ কারণে ওই ব্যক্তির নাম কী, তা জানা সম্ভব হয়নি। এমনকি ওই ব্যক্তি যে গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন, তার নামটিও জানা যায়নি।
ফুনাই যে ভিডিওটি প্রকাশ করে, তা খুব একটা স্পষ্ট নয়। দূর থেকে ওই ভিডিও করা হয়েছি বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি কুঠার দিয়ে গাছ কাটছেন। ভিডিওটি প্রকাশের পরপরই তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
ফুনাইয়ের একজন আঞ্চলিক সমন্বয়ক আলতেইর আলগায়ার গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমরা তাঁকে পুনরায় দেখতে পেয়ে খুব খুশি, বিস্মিত। তাঁর স্বাস্থ্য খুবই ভালো। তিনি শিকার করছেন, পেঁপে ও ভুট্টা পরিচর্যা করছেন।’ ফুনাই বিশ্বাস করে, আমাজনে ১১৩টির মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস করছে। গার্ডিয়ান বলছে, ব্যক্তির শিকারের তালিকায় রয়েছে শূকর, পাখি ও বানর।
এই ব্যক্তির শিকার পদ্ধতির ধরন দেখে ব্রাজিলের গণমাধ্যম তাঁর একটি উপাধিও ঠিক করেছে। আর তা হলো ‘দা হোল ইন্ডিয়ান’। ‘হোল’ বা গর্ত করে তার ওপর গাছের চটা বা পাতা দিয়ে বিশেষ ধরনের ফাঁদ তৈরি করা হয়। যার মধ্যে শিকার পড়ে থাকে।
ফুনাই বলছে, আগে ব্যক্তিটি একটি কুঁড়েঘরও বানিয়েছিল। সেখানে তাঁর কিছু আসবাবও ছিল। এর মধ্যে হাতে তৈরি কাঠ ও কষ দিয়ে তৈরি মশাল এবং তির অন্যতম। তবে এই ব্যক্তি বর্তমানে যে অঞ্চলে বসবাস করছেন সেখানে কাঠামোগত কোনো ঘরের অস্তিত্ব এখনো পাওয়া যায়নি।
বিবিসি ও গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, আমাজনের যে অংশে ‘নিঃসঙ্গ’ মানুষটির গোত্র বাস করত, ১৯৭০ থেকে ৮০ সালের দিকে সেখানে মহাসড়ক নির্মাণ হয়। ফলে গোত্রটি বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। সর্বশেষ বর্তমানে বেঁচে থাকা ব্যক্তিসহ একসঙ্গে বসবাস করতেন ছয়জন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে স্থানীয় কৃষকেরা তাদের ওপর হামলা করে। এতে এই ব্যক্তি ছাড়া বাকি পাঁচজন খুন হন।
ফুনাই বলছে, ১৯৯৬ থেকে তারা ব্যক্তিটিকে পর্যবেক্ষণ করছে। এই পর্যবেক্ষণের পেছনে কিছু কারণও উল্লেখ করে ফুনাই। যেমন প্রথমত, তিনি বেঁচে আছেন কি না তা দেখা। দ্বিতীয়ত, কোন কোন এলাকায় তিনি ঘোরাফেরা করেন, সে স্থানগুলো শনাক্ত করা। ব্রাজিলের সংবিধান অনুযায়ী, প্রতিটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমির অধিকার রয়েছে।
ফুনাই বলছে, লোকটি যে অঞ্চলে বর্তমানে ঘোরাঘুরি করছে, তা সংরক্ষিত করার জন্য সরকারের নতুন করে আদেশ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এ জন্য তারা এ ভিডিওটি ধারণ করেছিল। পর্যটকদের জন্য ওই স্থানটি সংরক্ষিত থাকবে। তাদের প্রতি নির্দেশ থাকবে, তারা যেন ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা না করে।
ফুনাইয়ের পক্ষ থেকে যে গবেষক দল আমাজনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্থানে গিয়েছিল, এর মধ্যে একজন ছিলেন ফিয়োনা ওয়াটসন। তিনি বলেন, ‘এই ব্যক্তির রয়েছে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। সে পৃথিবীকে একটি বিপজ্জনক স্থান হিসেবে দেখেছে।’ এর আগে ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলিয়ান সরকারে একটি তথ্যচিত্র এই ব্যক্তির মুখচ্ছবি দেখানো হয়। তবে তা-ও ছিল অস্পষ্ট।