বিবেকের দংশন ও পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে দীর্ঘ একযুগ পর ঢাকার ধানমন্ডিতে গৃহকর্মী রুবী (২৫) হত্যা ও লাশ ১৪ টুকরা করার রহস্য ফাঁস করেছেন অভিযুক্তের শ্যালক, রাজশাহীর বাসিন্দা মাফিকুল ইসলাম মুন্না। বুধবার দুপুরে রাজশাহীর পদ্মাপারের কফিবার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের জন্য নিজের ভগ্নিপতি ও রাজশাহীর ঠিকাদার আনিসুর রহমান ও পরিবার জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযোগকারী মুন্না রাজশাহী মহানগরীর চণ্ডীপুর এলাকার মৃত আলহাজ আবু বাক্কারের ছেলে। আর অভিযুক্ত ঠিকাদার আনিসুর রহমান সম্পর্কে তারই ছোট বোনের জামাই। লিখিত বক্তব্যে মুন্না বলেন, চণ্ডীপুর কদমতলা মোড়ে তার দখলীয় ৬ কাঠা জমি তার ভগ্নিপতি আনিসুর রহমান জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। যার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ছোট বোন শাহানাজ রহমান কেমির সাথে তার বিবাহের পর তাদের সম্পত্তি গ্রাস করার লক্ষ্যে সুপরিকল্পিতভাবে মুন্নাকে ভগ্নিপতি আনিসুর রহমান মানসিক রোগী বানানোর চেষ্টায় সাময়িকভাবে সফল হন।
এরপর ২০০৬-১০ সালে মানসিক চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মুন্নার জমিতে বড় বিল্ডিং করবে মর্মে মৌখিক শর্তে (৪০ শতাংশ ফ্ল্যাট প্রদান) কৌশলে দান স্বত্বে দুই দফায় ওই ৬ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করে নেন। দলিল নং- ১৬৪৪৭, তাং- ০৪/১০/২০১১ ও দলিল নং- ১২৫০৮, তাং- ১২/০৮/২০১২। এরপর ওই জমিতে ‘শুভেচ্ছা নিবাস-২’ নামের ৮ তলা ভবন নির্মাণ করেন। কিন্তু চুক্তি মোতাবেক এখন পর্যন্ত মুন্নার প্রাপ্য ৪০ শতাংশ ফ্ল্যাট প্রদান করা হয়নি। উল্টো মুন্নাকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। এ ঘটনায় গত ১০ জানুয়ারি রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানায় একটি জিডিও (নং-৫৫৭) করেছেন অভিযোগকারী মাফিকুল ইসলাম মুন্না।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, গত ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার ধানমন্ডির ভাড়া বাসায় গৃহকর্মী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটান তারই ভগ্নিপতি আনিসুর রহমান। ওইসময় ঘটনাটি দেশের সকল গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশও হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য আজও উম্মোচিত হয়নি। উদ্ধারকৃত ওই গৃহকর্মীর ১৪ টুকরো লাশ অজ্ঞাত হিসেবেই মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করেন।
তিনি আরও বলেন, সে সময় তিনি ব্যবসায়িক কাজে যশোরে ছিলেন। ভগ্নিপতি আনিসুর রহমান তাকে ফোন করে বলে দ্রুত ঢাকার ভাড়া বাসায় ডাকেন। এরপর তিনি ঢাকায় ভগ্নিপতি আনিসুর রহমানের বাসায় যান এবং ডাইনিংয়ে গৃহকর্মীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তিনি হত্যার ঘটনা তার কাছ থেকে জানেন এবং প্রতিবাদ করেন। তখন ভগ্নিপতি আনিসুর রহমান তাকে বলেন, ‘এ কথা (হত্যার বিষয়) বাইরে প্রকাশ করলে তোর বোনকে তালাক তো দিবই, উল্টো তুই নিজে এই মেয়েকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছিস’ এ কথা পুলিশের কাছে বলে ধরিয়ে দিব। বোনের সংসারের কথা বিবেচনা করে তখন তিনি মুখ বন্ধ রাখেন। কিন্তু এখন বিবেকের তাড়নায় আর সেই রহস্য চাপা রাখতে পারছেন না।
তিনি বলেন, সম্পত্তি ফিরে পাওয়া বা চুক্তিকৃত ৪০ শতাংশ ফ্ল্যাট পাবার আশায় ঘটনাটি এখন প্রকাশ করছি, এমনটি ভাবার কোনোই কারণ নেই বলেও লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন মুন্না। এসময় গৃহকর্মী খুনের রহস্য উদ্ঘাটন ও ভগ্নিপতি আনিসুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেন মুন্না।
সংবাদ সম্মেলনে মুন্নার প্রতিবেশী হাবিবুল বাশার, সবুজ হোসেন, রকেট খান, তানভীর হাসান ও মঈন উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে মুন্নার অভিযোগের বিষয়ে মতামতের জন্য বুধবার বিকেলে ঠিকাদার আনিসুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেন নি। তাই তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনারকে সম্প্রতি দেয়া অভিযোগকারী মাফিকুল ইসলাম মুন্নার এক লিখিত আবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার ধানমন্ডিতে হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই গৃহকর্মীর নাম রুবি (২৫)। বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর মহল্লায়। তার পিতা মৃত বাবর খান। মাতাও বেঁচে নেই। রুবির একমাত্র সহোদর বোবা (প্রতিবন্ধী) বেঁচে আছেন।