শেষ পর্যন্ত কাতালুনিয়ান পার্লামেন্ট তাদের অঙ্গরাজ্যকে স্বাধীন ঘোষণা করলো। এই মাসের ১ তারিখে তারা স্পেন সরকারের অনুমতি বাদেই স্বাধীনতার পক্ষে ভোটের আয়োজন করে। সেখানে কাতালুনিয়ার ৪২% মানুষ ভোট দেয়। মোট ভোটের ৯০ শতাংশ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়। এরপরই কাতালুনিয়ার স্বাধীনতাকামী নেতা, পার্লামেন্ট সদস্য এবং মেয়র স্বাধীনতা ঘোষণার কথা বলে আসছে। তবে বরাবরের মতই স্পেন প্রশাসন ও কতৃপক্ষ এই ভোটকে অসাংবিধানিক এবং অযোগ্য বলে আসছে। এই নিয়ে বর্তমানে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে সেখানে।
কাতালুনিয়ার স্বাধীনতা প্রশ্নে বরাবরই ঘুরে ফিরে আসছে একটি বড় প্রশ্ন। কাতালুনিয়া স্বাধীন হলে কোথায় খেলবে কাতালুনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি ‘ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা’? কেননা এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে নিজেদের অধিকার আদায়ের অভিনব এক পন্থা হিসবে। এরই মধ্যে বার্সেলোনার প্লেয়ার জেরার্ড পিকে কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন মিডিয়ায়। বার্সার সাবেক প্লেয়ার ও কোচ, বর্তমানে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির দায়িত্বে থাকা পেপ গার্দিওলা ম্যান সিটি বনাম নাপোলি ম্যাচে পাওয়া ম্যান সিটির জয়কে উতসর্গ করেছিলেন স্প্যানিশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া দুই স্বাধীনতাকামী নেতাকে।

প্রসঙ্গত, কাতালুনিয়ার স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ভোট গ্রহনের দিন ক্লাব বার্সেলোনা ‘দর্শকহীন মাঠে’ খেলে লাস পালমাসের বিপক্ষে সেদিনের ম্যাচ। ক্লাব কতৃপক্ষ এতদিন নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে কিছুই পরিষ্কার করেনি। গত সোমবার ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেপ বার্তেমিউও জানিয়েছে তারা লা লিগাতেই খেলতে চায়। এরই মধ্যে তাদের সামনে সূযোগ এসেছে পাশ্ববর্তী যে কোন দেশের লিগে খেলার। তারা চাইলে খেলতে পারবে বর্তমানে খেলা ‘লা লিগা’তেও। তবে কাতালুনিয়া যদি স্বাধীন হয়ে যায়, তাহলে লা লিগায় খেলাটা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে স্পেনের সাংবিধানিক কারনে। আবার অন্য দেশের শীর্ষ লিগে খেলাটাও ততটা সহজ হবে না কেবল জার্মান লীগ ‘বুন্দেস লীগা’ বাদে। কেননা বুন্দেস লীগায় বর্তমানে ১৭টি দল খেলে। বাকি সব শীর্ষ লিগে খেলে সর্বমোট ২০ টি করে ক্লাব। এছাড়া বার্সেলোনার সামনে সুযোগ আছে ‘ফ্রেঞ্চ লীগ ১’ সরাসরি খেলার সুযোগও। যেমনটা পেয়ে আসছে মোনাকো।
তবে বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ফুটবল আসর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে বার্সার। শর্তটা লিগের নিয়মের। প্রিমিয়ার লীগে খেলতে হলে হলে তার আগে ২য় বিভাগের চ্যাম্পিয়নশিপের বাঁধা টপকাতে হবে তাদের। যেমনটা করতে হবে ইতালিয়ান সিরি-আ কিংবা ‘ফ্রেঞ্চ লীগ ১’ এর বেলায়ও।
বার্সেলোনার মত ক্লাব ২য় বিভাগ খেলতে রাজি হবে কিনা সেটাই আসল প্রশ্ন। তবে শিথিলতা একটুতো অবশ্যই আছে বার্সেলোনার। যেমনঃ প্রতি সিজনে প্রিমিয়ার লীগে প্রমোশন পায় চ্যাম্পিয়নশীপের ৩ টি ক্লাব। আবার ডিমোশনও হয় তিনটি ক্লাবের। এই প্রমোশন পাওয়া তিনটি ক্লাবকে আবার পেরুতে হয় ‘কোয়ালিফাই’ নামক গন্ডি। এখন ইপিএল কতৃপক্ষ এবং বার্সা কতৃপক্ষ সম্মত হলে কোন নিয়ম না ভেঙ্গে এই কোয়ালিফাই রাউন্ড পার করেই প্রিমিয়ার লীগে খেলার সুযোগ পেতে পারে বার্সা। আর কে না চায় বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট লীগে খেলতে? আবার বার্সেলোনার মত ক্লাবকে খেলাতে প্রিমিয়ার লীগ কর্তৃপক্ষ একটু ছাড় তো দিতেও পারে! তবে এখনো এই সিজনের অনেক বাকি। কাতালুনিয়ারও নিজেদের সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তারপর ক্লাব বার্সেলোনা কোন কিছু করার আগে প্রয়োজন ক্লাব মেম্বারদের ভোট। এতসব প্রশ্নের সমাদান এক সাথে পাওয়া যাবে ২০১৮ সালের আগস্টের আগেই। তবে ততদিন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন পথ আমাদের সামনে খোলা নেই।
লেখকঃ সাব্বির আকিব
ফুটবল প্রেমী