রাজধানীর বাড্ডায় ডিশ ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বাবু ওরফে ডিশ বাবু (৩০) হত্যার পরিকল্পনা হয় মালয়েশিয়ায়। ডিশ ব্যবসা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ নিতে বাবুকে দুই দফায় হত্যার পরিকল্পনা করে সন্ত্রাসীরা। আর দ্বিতীয়বার তারা সফল হয়। গত বুধবার রাতে রবিন গ্রুপের সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে ডিস-ব্যবসায়ী বাবুকে। এর পুরো পরিকল্পনাই হয় মালয়েশিয়ায়। এমনটাই জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ দিকে এ হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাদের মধ্যে তানভীরকে নিয়ে অভিযানে গেলে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় তানভীর।
জানা গেছে, গত বছর রায়ান নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছিল এ তানভীর। তার বিরুদ্ধে রমনা, বাড্ডা ও গুলশান থানায় অন্তত চারটি হত্যা মামলা রয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আরো অন্তত আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সাম্প্রতিক রাজধানীর বাড্ডা এলাকার খুনোখুনি বেড়ে গেছে। দিন দিন ওই এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের খুনের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।
ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বাড্ডা, ভাটারা ও গুলশান এলাকার ডিশ ব্যবসা একচেটিয়াভাবে বাবুর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ডিশ বাবুর নিয়ন্ত্রণ থেকে এই ব্যবসা মালয়েশিয়া প্রবাসী রবিন নিয়ন্ত্রণ নিতে দির্ঘদীন ধরে চেষ্টা করছিল। রবিন কোম্পানি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে। ঢাকায় তার সহযোগীরা হলো ডালিম, রমজান, তানভীর, হেলাল, শুভ, সাফায়াত তানভীর ওরফে রনি ও অভি। তিনি বলেন, রবিনের এসব এলাকা থেকে অবৈধ কোনও আয় হচ্ছিল না। তাই ঢাকায় থাকা তার সহযোগীদের বাবুকে হত্যার নির্দেশ দেয়।
তিনি আরও বলেন, ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে তানভীর, সোহেল ও রাসেলকে গ্রেফতার করে। রাতভর তানভীর, সোহেল ও রাসেলকে আলাদাভাবে ও মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পারে, সোহেল ও রাসেল উৎসুক জনতা ছিল। তারা সেখানে মারামারি দেখে ভয়ে দৌড় দিলে জনতা ধাওয়া করে তাদের ধরে ফেলে। তাদের একজনের বাবা চা বিক্রেতা আরেকজনের বাবা গাড়ি চালক। তানভীরও তাদের চেনে না বলে জানায়। এরপর ডিবি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়, তারা দুই জন বাবু হত্যার সঙ্গে জড়িত না।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, প্রায় ১ মিনিটের এই কিলিং মিশনের তিন অস্ত্রধারী মোটরসাইকেলে করে ক্লাবের ভেতরে প্রবেশ করে। মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল অভি। মাঝে হেলাল এবং পেছনে বসা ছিল তানভীর। তাদের মাথায় ক্যাপ ও মুখে মাস্ক পরা ছিল। ক্লাব মাঠে গিয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে গুলি চালায়। এতে ওই সময় ক্লাবের ভেতরে থাকা কয়েকজন দৌড়ে বের হতে দেখা যায়। ঠিক ৯টা ৫ মিনিটে কিলিং মিশন শেষ করে খুব স্বাভাবিকভাবেই তানভির হেঁটে হেঁটে গেটের সামনে আসেন। ওই সময় সে তার হাতে থাকা পিস্তলটি নাড়িয়ে কোমরে লুকিয়ে বের হয়। বাকি দুইজন মোটরসাইকেল নিয়ে গেটের কাছে এলেই তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে দ্রুত ২ থেকে ৩ বার কিক মারতেই মোটর সাইকেল চালু হয়। বের হওয়ার সময় মোটরসাইকেলে দুইজনকে দেখা যায়।
গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. মশিউর রহমান বলেন, সাফায়াত তানভীরকে রাতে জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিবি জানতে পারে, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী রবিন। তার আরও সহযোগী রয়েছে আফতাব নগর এলাকায়। এরপর তানভীরকে নিয়ে অভিযানে যায় ডিবি পুলিশ। সেখানে যাওয়ার পর তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি করলে তানভীর গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে বাড্ডা থানা পুলিশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভোর ৫টার দিকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রানাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, ডিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত তানভীরের স্বজনরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ মর্গে আসেননি। তার লাশ মর্গে রয়েছে।