সভ্য সভ্যতার আদি অন্ত

0
সভ্য সভ্যতার আদি অন্ত

নীতি শব্দ বর্জন করলে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি এগুলোকে কেবলই কতগুলো নীর্জিব শব্দ মনে হবে। কারন এই নীতি শব্দ যাদের সাথে যুক্ত হয় তাদের মধ্যে এক নতুন মাত্রার যোগ হয়। মানুষের মধ্যে যেমন বয়সে যারা বিজ্ঞ ও প্রজ্ঞা সম্পন্ন তারা যেমন একটু অন্যরকম সমাদর পায় এই শব্দগুলো ও তেমনি বিশেষ সমাদর পাওয়ার দাবি রাখে। এই সাধারন কিছু বৈশিষ্ট্যের সাথেই যখন নিতি যুক্ত হলো তখন থেকে মানুষ এর মধ্যে ও এক ধরনের ভিন্নতা দেখা যায়। কারন নীতি-আদর্শের কারনেই মানুষ নিজেকে অন্য সকলের থেকে অন্যরকম মনে করে । মানুষ তাকে সভ্য বলে দাবি করে। সভ্যতা নিয়ে গর্ব করে।
সভ্য সভ্যতার আদি অন্ত
প্রানবন্ত মানুষ আর প্রানহীন সেই শব্দের মধ্যে পার্থক্য এইটুকুই যে শব্দ জোর খাটাতে পারে না, মানুষ পারে। মানুষের মধ্যে থেকে নীতি আদর্শ হারিয়ে গেলে কিংবা বিকৃত হলেও মানুষ আগের মতই সম্মান চায়। সম্মান-অবস্থান হারাতে সে নারাজ।

এগুলোই মানুষের স্বভাব। মূলত এখন ধর্ম কর্ম কাজ সবই এমন। সভ্যতা বলতে এক সময় যা বোঝানো হতো তা এখন আর নেই বললেই চলে। সভ্যতা থেকে যখন সভ্য শব্দই চলে যায় তখন তাকে কি আর সভ্য বলা যায় ?

আমরা প্রায়ই বলি কিংবা বলতে শুনি পৃথিবী বদলেছে, প্রযুক্তি বদলেছে, বদলেছে আমাদের চারপাশ। কিন্তু আমার কেনো জেনো মনে হয় পৃথিবী আসলে বদলায় নি। বদলেছে কিছু মানুষ। যারা বদলে দিয়েছে বাকি সবাইকে। কিছু মানুষ নিয়ন্ত্রনে রেখেছে বাকি সবাইকে । মানুষের মনস্তাত্ত্বিক যে আচরন, গুন ,বৈশিষ্ট্য তা আসলে খুব বেশি পরিবর্তন হয় নি। এই কারনে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত কিংবা ব্যাস্ত রাখা এখন খুব সহজ কাজ। আর যাদের কে আমি এখানে বদলেছে কিংবা বদলিয়েছে বলছি তারা কিন্তু আধুনিক যুগের আবিষ্কার না। বরং তাদের আবিষ্কারগুলোই আধুনিক যুগের সূচনা করেছে।

আমরা সারাদিন ফেইসবুক, ইউটিউবে নিজদের মগ্ন রাখছি, অথচ একসময় সকালে এক ঘন্টা পত্রিকা পড়ার একটা অভ্যেস ছিলো আমাদের। আমরা এখন সারাদিন খবর পড়ি, আর মনে মনে ভাবি, “আমি সারাদিন আপডেট থাকি, আমি সভ্য-আমি উন্নত”। আসলেই কি তাই?

আপডেট থাকার জন্যে কি সারাদিন তথ্য যোগাড় করা জরুরী। ব্যাক্তি জীবন, পেশাগত জীবন এগুলোতে আমরা কতটা সিরিয়াস। একটা ভালো বই পড়ার চাইতে টাইমলাইন জুড়ে স্ট্যাটাস আর মডেলদের কমেন্ট এ গিয়ে ঢুঁ মারাই জেনো এখন একমাত্র কর্ম।

স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে সার্টিফিকেট নিয়ে বের হচ্ছি । কিন্তু কয়টা বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে বাইরের একটা বই আমরা নিজ থেকে সংগ্রহ করে পড়ছি ? দেশে এখন স্কুল রাজনীতি হচ্ছে। এতটুকুই এগিয়েছে আমাদের সভ্যতা। ৬ টা থেকে সাতটা
সৃজনশীল, প্রশ্নফাস থেকে গলায়-ফাস সবই হচ্ছে, অথচ কোনোদিন নিয়ম করে বলা হয় নি পাঠ্যবই এর বাইরে যে যত বই পড়বে তার ভিত্তিতে তাকে নম্বর দেয়া হবে। কিংবা লাইব্রেরি তে যে যত বেশি সময় কাটাবে তার ভিত্তিতে তাকে মূল্যায়ন করা হবে। এতে করে হয়েছে কি? মা-বাবা, সমাজ থেকে শুরু করে সবার মনে একটাই চাওয়ায় আর তা হলো সার্টিফিকেট এ সর্বোচ্চ ফলাফল। ওটুকু পেলেই সন্তানের জীবন উজ্জ্বল।

মানুষ হতে হলে যে মনুষ্যত্ব থাকাটাও জরুরী সেই ভাবনা প্রায় বিলুপ্ত। এখন আমাদের ধারনা বদলেছে। এখন আত ভালো খেতাব পেতে ভালো হতে হয় না । আমরা এখন ভাবি, লাগলে চেয়ারম্যান এর কাছ থেকে একটা ‘চারিত্রিক সনদ’ নিয়ে নিবো। ব্যাস, মামলা শ্যাষ ।

মাঝে মাঝে মানুষ যখন নিজেকে সভ্য দাবি করে দারুন অবাক লাগে। আপনি দিনে জাগ্রত থাকবেন, সভ্যতার কথা বলবেন আর রাতে ঘরে গিয়ে গুগল করবেন নগ্ন নারীর অনাবৃত বক্ষের ছবি দেখবেন, তাহলে আপনি আপনার পূর্বপুরুষের তুলনায় কতটুকুই সভ্য হলেন। আদিম যুগে মানুষ পোশাক কম পরতো তাই তাদের গুগল করা লাগতো না, মানুষ এখন সভ্য হয়েছে কিন্তু মন তো এখন ও আদিম ই রয়ে গিয়েছে তাই গুগল করা লাগে।

আমাদের সমাজে নারীদের মধ্যে আরেক ধরনের সভ্য গোষ্ঠির উদয় হয়েছে। যারা সমতার নামে খোলামেলা চলতে চায়, চায় অবাধ মেলামেশার সুযোগ। এবং তাদের অনুপ্রাণিত করার জন্যেও রয়েছে এক শ্রেণির পুরুষ সমাজ। (মূলত এরাই গুগল প্রেমি সেই গোষ্ঠী)। এদের দেখলে আমার আসলে সত্যি ই শেয়াল আর মুরগির কথা মনে পড়ে যায়।

শেয়াল যেমন কখনোই চাইতো না মুরগি খোয়াড়ে থাকুক, ঠিক তেমনি নারীর উন্মুক্ত বদন দেখার জন্যে এরাও নারীর স্বাধীনতা চায়। আমি বুঝিনা নারীরা স্বাধীনতা বলতেই কেনো পোশাকের স্বাধীনতা চায়।

শিক্ষা, ব্যাবসা বানিজ্য অর্থনীতি রাজনীতিতে সর্বক্ষেত্রে নারীরা এগিয়েছে। পাশাপাশি থেকেই কাজ করবে। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত অগ্রগতি মানেই অতীত পরিবর্তন করা নয় বরং ভুল সংশোধন করা। একটু ইতিহাস ঘাটুন । দেখুন নগ্নতা আর অবাধ মেলামেশার ও একটা সভ্যতা ছিলো পৃথিবীর ইতিহাসে, দেখে আসুন তাদের কর্মফল।

সমাজ কিংবা শিক্ষা কিংবা রাজনীতি এসবের পরিবর্তন নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু এসবের আগে মানুষ হিসেবে আমাদের নিজেদের আজ নিজেদেরকে বিচার করা শিখতে হবে। নিজের বিবেক বুদ্ধি নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে নয় বরং যাচাই করে খুজে বুঝে জানতে হবে কোনটা পরিবর্তন করা উচিত কোনটা নয়। সভ্যতা কে উর্বর করার আগে সভ্য-কি তা জানতে হবে।

লেখক : শরীফুল ইসলাম

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে