এডলফ হিটলার, পৃথিবীর অন্যতম একনায়ক যাকে সবাই একনামেই চিনে, নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই এবং তার বাহিনীর নাম ছিল নাৎসী বাহিনী।
NAZI(নাৎসী): নাৎসী ১৯৩৩ সালে জার্মানীতে প্রভাব বিস্তার শুরু করে। তাদের বিশ্বাস ছিল জার্মানীর উন্নতি সমৃদ্ধি কিছু পঙ্গু ও গরিব মানুষের জন্য আটকে আছে!! তারা দেখল বিশেষ ভাবে ইহুদী(Jews)রা জার্মানীর জন্য আশঙ্কাজনক। তারা একে BIOLOGICAL THREAT বলে আখ্যায়িত করে। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত নাৎসী জার্মান বাহিনী দ্বারা জার্মানী সহ গোটা ইউরোপে ইহুদী , জিপসি(Roma), শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের হত্যা করা হয় তা হলকাস্ট(HOLOCAUST) নামে পরিচিত। তবে ইহুদী রা ছিল PRIMARY VICTIM. প্রায় ছয় মিলিয়ন ইহুদী তখন নাৎসী বাহিনীর হাতে মারা যায়। আরও কয়েক মিলিয়ন মানুষ HOMOSEXUAL, সোভিইয়েত যুদ্ধে বন্দী, বাম রাজনীতিবিদ সহ নাৎসী বাহিনীর ঘৃণ নৃশংসতার শিকার হয়।
হিটলারের জার্মান নীতি ও সূচনাঃ এডলফ হিটলার যখন ক্ষমতা দখল করলেন তখন জার্মানীর অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল করুণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঋন এর বোঝা মাথায় নিয়ে দেশকে পৃথিবীর ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র করার চিন্তা মাথায় ঢুকে ছিল এডলফ হিটলারের। দেশ থেকে তিনি অপ্রয়োজনীয় মানুষ সরানো ও ইহুদী হত্যা নীতি গ্রহণ করেন।
এডলফ হিটলার প্রথমেই সেন্ট্রাল ইউরোপে ক্ষমতা বাড়ানোর চিন্তা করেন। আস্ট্রিয়া কে যুক্ত করে ১৯৩৮ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যেই চেকস্লোভাকিয়া দখল করে নেন। নাৎসী বাহিনী তখন থেকেই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ হত্যা শুরু করে। নাৎসী বাহিনীর হাতে শুধু তখন ই প্রায় ৩০,০০০ জার্মান ও আস্ট্রিয়ান ইহুদী মারা যায়। এ জন্য তাদের অনেক গুলো ক্যাম্প ছিল, DACHAU ও KRISTALLNACHT ক্যাম্প ছিল অন্যতম। নাৎসী বাহিনীর ক্যাম্প গুলোয় গ্যাস চ্যাম্বার নামক এক বিশেষ ব্যাবস্থা ছিল যেখানে মানুষ হত্যা করা হত। এর পর ই ১৯৩৯ সালে নাৎসী বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমন করে, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নাৎসী(AXIS) বাহিনী ও মিত্র(ALLIES) বাহিনীঃ ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর নাৎসী বাহিনী আক্রমনের কিছু সপ্তাহের মাঝেই পোলিশ আর্মি হেরে যায়।পোল্যান্ড কে সাপোর্ট করে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানীর উপর যুদ্ধ ঘোষনা করে। পোল্যান্ড-সোভিয়েত সীমান্তে জার্মান ও সোভিয়েত ইউনিওনের মাঝে একটি গোপন শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।কিন্তু সোভিয়েত ইউনিওন ১৯৪১ পর্যন্ত অফিসিয়ালী নিউট্রাল ছিল। এডলফ হিটলার হাজার হাজার পোল্যান্ড নাগরিক কে হত্যার আদেশ দেন শুধু মাত্র জার্মান দের জন্য নতুন বাসস্তানের জায়গা করতে!! জার্মান পরিবার গুলো পোল্যান্ড এর খালি সম্পত্তি দখল করে নেয়। জার্মান কতৃপক্ষ ইহুদী জনগণ কে সামান্য কিছু জায়গায় বন্দী করে সরকারের নজরদারীতে থাকতে বাধ্য করে।
এর পরবর্তী দুই বছরে নাৎসী বাহিনী ভয়ংকর আকার ধারন করে। তারা ডেনমার্ক এবং নরওয়ে মানে নিম্নবর্তী এলাকা গুলো আক্রমন করে। বেলজিয়াম, নেডারল্যান্ড ও লুক্সেমবার্গ হল সেই নিম্নবর্তী এলাকা। একই সাথে ফ্রান্স আক্রমন করে বসে জার্মানী! তখনই ইটালী জার্মানীর Axis পার্টনার ফ্রান্স ও ব্রিটেন এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে।
সোভিয়েত ইউনিওন ও তখন বসেছিল না। সোভিয়েত তখন ফিনল্যান্ড আক্রমন করে এবং লিথুয়ানিয়া, ল্যাটভিয়া, ইস্টনিয়া যাদের কে Baltic country বলা হয়, দখল করে নেয়।
স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরী, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া পরবর্তীতে ফিনল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া জার্মানীর সাথে যুক্ত হয়। ১৯৪১ সালের জুন মাসে জার্মানী সোভিয়েত ইউনিওন আক্রমন করে বসে চুক্তি ভঙ্গ করে।জার্মান বাহিনী সোভিয়েত ইউনিওন এর বেশ ভিতরে ঢুকে পরে।তারা ১.৫ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করে mass shooting এর মাধ্যমে। যার অধহিকাংশই ছিল ইহুদি নারী, পুরুষ ও শিশু। জার্মান বাহিনী সোভিয়েত ইউনিওন ও পোল্যান্ড এর মাঝখানে mass shooting এর জন্য ক্যাম্প খুলে।
কার্বন মনোক্সাইড (carbon monoxide gas CO) এবং যাইগ্লন বি গ্যাস (ZYKLON B gas HCN) ছিল প্রথমিক হত্যা করার প্রক্রিয়া। এগুলো তারা গ্যাস চ্যাম্বারে ব্যাবহার করত!
১৯৪২ সালের শেষের দিকে ও ১৯৪৩ সালের প্রথম দিকে সোভিয়েত বাহিনী কাউন্টার এটাক শুরু করে এবং তাদের জায়গা পুনঃরুদ্ধার শুরু করে জার্মানীদের কাছ থেকে। অন্যদিকে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স বাহিনী ও ফ্রান্স স্বাধীন করে ইটালির মেইনল্যান্ড আক্রমন করে জার্মানীর সীমান্তে পৌছায়। অর্থাৎ একই সাথে দুই দিক থেকে আক্রমনে জার্মানী আটকে যায়। জার্মানীর ক্যাম্প গুলো তে তখন খাদ্যাভাবে বেশির ভাগ বন্দীই মারা যায় যাকে বলা হয় MASS DESTRUCTION।১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে এইসব ক্যাম্প এর অর্ধেক মানুষ ই মারা যায়।সোভিয়েত ইউনিওন পোল্যান্ড দখল করার পর ১৯৪৫ সালের মে(may) মাসে কোন শর্ত ছাড়াই মিত্র বাহিনীর কাছে জার্মানী আত্মসমর্পন করে।
জার্মানী সহ ইউরোপের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ইহুদী নাৎসী জার্মান বাহিনীর হাতে মারা যায়। জার্মান নাৎসী বাহিনীর এই নৃশংসতা HOLOCAUST নামে পরিচিত।