বলিউডে নাদুসনুদুস এক তরুণের আগমন হয় ‘মুঝকো ভি তো লিফট কারা দে’ গান দিয়ে। নাম তাঁর আদনান সামি। ২০০০ সালের দিকে মুক্তি পাওয়া সেই গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এরপর একে একে আসে তাঁর ‘ভিগি ভিগি রাতো মে’, ‘তেরা চেহরা’, ‘উড়ি উড়ি’, ‘কাভি নেহি’, ‘শুন জারা’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান। কিন্তু পাঁচ-ছয় বছর পর এই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকতেই হঠাৎ উধাও হয়ে যান আদনান সামি। অনেক দিন এই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত তারকা গণমাধ্যম থেকে দূরে ছিলেন। আর দূরে থাকার কারণ ছিল তাঁর অতিরিক্ত ওজন।
এক সময় আদনান সামি ছিল ২০০ কেজি। অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেকেই তাঁকে ব্যঙ্গ করতেন। আর ক্যামেরায়ও ভালো দেখাত না। এমনকি সাবেক স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে যাওয়ার কারণও নাকি স্থূলতা বা অতি ওজন। সবকিছু নিয়ে একপর্যায়ে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েন এই গায়ক। তখন গুজব শোনা গিয়েছিল, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাকি শরীরের মেদ ঝরাতে গেছেন সামি। কিন্তু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কোনো রকম অস্ত্রোপচার ছাড়াই কীভাবে ১৫৫ কেজি ওজন কমিয়েছেন।
আদনান সামি ওজন বেশি হওয়ার কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগতেন। চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়ে দেন, ওজন কমাতে না পারলে ছয় মাসের বেশি বাঁচবেন না তিনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে যান সামি। সেখানে চিকিৎসকেরা সামির সমস্যা শুনে বুঝতে পারেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকার কারণেই বেশি খান তিনি। আর এ কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। চিকিৎসক তাঁকে খাবার কমানোর আগে ‘খাই খাই ভাব’ কমানোর পরামর্শ দেন। তখন তিনি পুষ্টিবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুষ্টিবিদ তাঁকে হাই প্রোটিন খাবারে নিয়ন্ত্রণ আনতে বলেন। ওজন কমাতে আদনান সামির বাবাও তাঁকে অনেক সহযোগিতা করেন সে সময়।
এই গায়কের কঠিন পরিশ্রম এরপর থেকে শুরু হয়। ক্ষুধা থেকে খাওয়ার প্রতি তাঁর মানসিক আকর্ষণই ছিল বেশি। এটা নিয়ন্ত্রণে আনতেই প্রথম ধাক্কা যায় তাঁর ওপর। সামি বলেন, ‘ওজন কমানোর প্রক্রিয়া মোটেও সহজ ছিল না। আমার বিষয়টি ৮০ শতাংশই ছিল মানসিক আর বাকিটা শারীরিক।’
আদনান সামি পুষ্টিবিদের পরামর্শে লো ক্যালরি ডায়েট শুরু করেন। সে সময় প্রতিদিন সকালে তিনি নাশতা করতেন চিনি ছাড়া এক কাপ চা দিয়ে। দুপুরে খেয়েছেন সবজি, সালাদ আর মাছ। রাতের খাবারের তালিকায় ছিল সেদ্ধ ডাল আর মুরগির মাংস। এই খাবারের তালিকা মেনে তিনি ৪০ কেজি কমান। তারপর জিমে যাওয়া শুরু করেন। জিমে তিনি প্রথমে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতেন। কয়েক মাস যাওয়ার পর প্রশিক্ষক তাঁকে ওয়েট লিফটিং করতে দেন। তখন প্রতি মাসে ১০ কেজি করে ওজন কমাতে শুরু করেন এই তারকা। এভাবে ১৬ মাসে সামির ওজন এসে ঠেকে ১৫৫ কেজিতে। আর এখন তাঁর ওজন মাত্র ৬৫ কেজি, যা রীতিমতো অকল্পনীয়।
আদনান সামি ওজন কমিয়ে যে এখন অনেক সুদর্শন হয়েছেন শুধু তা-ই নয়, শরীরের পাশাপাশি মনও হয়েছে ফুরফুরে। বেশি ওজনের জন্য আগে হীনম্মন্যতায় ভুগতেন। ওজন কমিয়ে তাঁর মানসিক সমস্যাও এখন গায়েব। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে এখন সুখে জীবন পার করছেন সামি।