আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি। উত্তোলন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর দেওয়া গড়ে ৭৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রস্তাবে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বর্তমান গড় দাম সাত টাকা ৩৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৯৫ পয়সা করার কথা বলা হয়েছে।
তরলীকৃত আমদানি করা প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে এই মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর করার জন্য প্রস্তাবে বলা হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির হিসাব করা হয়েছে এলএনজি থেকে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালিত হবে ধরে নিয়ে। কিন্তু আপাতত দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস এলএনজি থেকে আসছে না। তা ছাড়া শুরুতেই দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্রিডে আসবে কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়। তাই এবারের দাম বাড়ানোর হিসাব-নিকাশ বিইআরসির জন্য জটিলতর হবে।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এলএনজি সরবরাহের জন্য পাইপলাইন নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে। তাই তারা গ্যাস সঞ্চালনের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। আজ জিটিসিএলের প্রস্তাব নিয়েই গণশুনানি শুরু হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সম্পর্কে মত হচ্ছে, দাম না বাড়িয়েই বাড়তি ব্যয় সমন্বয় করা সম্ভব। ক্যাব এ ব্যাপারে বিইআরসিতে উপস্থাপনের জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে বলে জানা গেছে। এর আগে গত বছরের ১ মার্চ ও ১ জুন থেকে দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর আদেশ দিয়েছিল বিইআরসি। সে আদেশ অনুযায়ী ১ মার্চ দাম বাড়লেও দ্বিতীয় দফায় ১ জুন থেকে দাম বাড়েনি। ক্যাবের একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট দ্বিতীয় দফার মূল্যবৃদ্ধি স্থগিত করেন।
জ্বালানি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার এলএনজির দাম পড়বে ২৫ দশমিক ২১৫ টাকা। এই এলএনজি পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করার জন্য প্রতি ইউনিটে ব্যয় হবে ১ দশমিক ৫১৪ টাকা। মূল্য সংযোজন কর ও অন্যান্য খরচ মিলে প্রতি ইউনিটে ব্যয় হবে ৩ দশমিক ৭৮২ টাকা। তবে এই হিসাবে ৪২ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ধরা হয়নি। কিন্তু সরকার সম্পূরক শুল্ক তুলে নেবে, এমন কোনো আদেশ এখন পর্যন্ত জারি করা হয়নি। তাই মূল্য নির্ধারণে বিইআরসিকে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হবে। সরকারি আদেশ ছাড়া বিইআরসি সম্পূরক শুল্ক বাদ দিয়ে গ্যাসের দাম হিসাব করতে পারবে না।
কোম্পানিগুলোর দেওয়া প্রস্তাবে গ্রিডে সংযুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসের দাম ২০৬ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরবরাহ করা প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়বে ১০ টাকা, যা বর্তমানে ২ টাকা ১৬ পয়সা। সিএনজির দাম ২৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে প্রতি ইউনিটের দাম বর্তমানের ৩২ টাকার স্থলে পড়বে ৪০ টাকা। সার কারখানায় সরবরাহ করা গ্যাসের দাম ৩৭২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে বর্তমানের ২ টাকা ৭১ পয়সার স্থলে দাম পড়বে ১২ টাকা ৮০ পয়সা।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে এলএনজি আমদানির দরকার হতো না।
পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, এলএনজি আমদানির ফলে গ্যাসের দাম বাড়লেও গ্যাস না থাকার চেয়ে বেশি দামের গ্যাস ব্যবহার করা অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভজনক হবে। প্রতিদিন ১০০ কোটি (এক হাজার মিলিয়ন) ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বাড়লে শিল্প, বিদ্যুৎ, সার ও অন্যান্য উৎপাদন খাত এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পাবে। ফলে মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) ২ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তি যুক্ত হবে।