এক জীবনে কি করেন নি মানুষটি!

0
দিপক নানালাল চুদাসাম

ছবি দেখে অনুমান করা যাচ্ছে, তিনি একজন ডাক্তার। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলতে পারি তিনি একজন ডেন্টিস্ট।

তার শিক্ষা জীবন ও ক্যারিয়ার বিস্তারিত শুধু অবাকই নন, বেশ চমকেও যাবেন অনেকেই। তার জন্ম কেনিয়ায়। ১৯৮৮ সালে ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি ডিগ্রি নেন ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২০০৩ সালে অর্থোডন্টিকসে এমএস করেন লন্ডনের ইস্টম্যান ডেন্টাল ইনস্টিটিউট থেকে।

২০০৪ সালে রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস অব লন্ডন ও রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস অব এডিনবরা থেকে ডিপ্লোমাস অব মেম্বারশিপও অর্জন করেছিলেন। এর পরপরই পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০৮ সালে সাউদার্ন অ্যাসোসিয়েশন অব অর্থোডিন্টকস থেকে পান ‘এক্সিলেন্স ইন অর্থোডন্টিক এডুকেশন’ অ্যাওয়ার্ড। একই বছরেই হন রথ উইলিয়ামস অ্যাডভান্সড অর্থোডন্টিক এডুকেশন প্রোগ্রামের ফেলো। ২০০৯ সালে ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থেডন্টিক গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম শেষ করেন। সেখানে তিনি অর্থোডন্টিকস পড়াতেনও এবং দুই বার মনোনীত হন অ্যাকাডেমিক প্রফেসর অব দা ইয়ার। আবার একই বছর জ্যাকসনভিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক্সিকিউটিভ এমবিএও শেষ করেন। এসবের ফাঁকে আর্চ ওয়্যার ডেন্টিস্ট্রি নিয়ে গবেষণাও বেশ পরিচিত পান ও জ্যাকসনভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টর অব রিসার্চ হিসেবে নিউ ক্লিয়ার ওয়্যারের ট্রায়াল পরিচালনা করেন।

২০১১ সালে তিনি যোগ দেন টেক্সাসের লুইসভিলে অ্যাপল অর্থোডন্টিকসে। যুক্তরাষ্ট্রে ডেন্টিস্ট হিসেবে পসার, খ্যাতি, পরিচিত… সবই পেয়েছেন বেশ…
ওপরের লেখায় নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, তার বিডিএস ও এমএসের মধ্যে ছিল লম্বা বিরতি। ওই সময়টায় তিনি কি করেছেন সেটা জানতে অবাক না হয়ে যে উপায়ই নেই। ওই সময় তিনি নাইরোবিতে বছর দশেক জেনারেল ডেন্টিস্ট্রি প্র্যাকটিস করেছেন। আর খেলেছেন।

কেনিয়ার হয়ে খেলেছিলেন টেবিল টেনিস। ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
পাশাপাশি খেলেছেন ক্রিকেট! এটাই সত্যি! ২০টি ওয়ানডে খেলেছেন কেনিয়ার হয়ে। খেলেছেন ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপেও!

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে নাইরোবিতে ১২২ রানের ইনিংসের পথে কেনেডি ওটিয়েনোর সঙ্গে গড়েছিলেন ২২৫ রানের জুটি, যা তখন ছিল উদ্বোধনী জুটির বিশ্বরেকর্ড! বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ের ম্যাচে, ১৯৯৮ সালে হায়দরাবাদে রান আউট হয়েছিলেন ৩৬ রানে। ১৯৯০ ও ১৯৯৪ আইসিসি ট্রফিতেও তিনি খেলেছিলেন কেনিয়ার হয়ে। প্রথম আসরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ রানে আউট হয়েছিলেন, পরেরবার ৭৫ রানে এনামুল হক মনির বলে।

কি? মিথ্যে মনে হচ্ছে? কিন্তু এটিই বাস্তব।

১৯৯৪ আসরের ম্যাচটি অনেকেই রেডিওতে শুনেছেন। মনেও পড়ে। মরিস ওদুম্বে ১১৯ ও চুদাসামার ৭৫ রানে কেনিয়া করেছিল ২৯৫। রান তাড়ায় বাংলাদেশ সেদিন ওপেনিংয়ে নামায় বুলবুল ভাইকে। জাহাঙ্গীর আলম ও আমিনুল ইসলাম বুলবুল উদ্বোধনী জুটিতে ১৩৯ রান তোলেন। দারুণ এক জয়ের আশায় তখন বাংলাদেশ। ৭৪ রানে আউট হওয়ার পরপরই জাহাঙ্গীর ৫৭ রানে রান আউট হয়ে যান। বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা একরকম শেষ হয়ে যায় ওই হারে।

ফেরা যাক ছবির ভদ্রলোকের গল্পে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর দল থেকে বাদ পড়েন। কেনিয়ার হয়ে আর কখনও খেলা হয়নি তার। উপরে উল্লিখিত ক্যারিয়ার গ্রাফ থেকেই পরিষ্কার, পরে তিনি মন দেন ডেন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার আরও সমৃদ্ধ করে তোলায়। এমন গৌরবদীপ্ত ক্যারিয়ার ডেন্টিস্ট হিসেবে,ক্রিকেট ও টেবিল টেনিসেও আছে সাফল্য। তার পরও, তার নাম শুনলেই শুরু হয় আমাদের হাসাহাসি, অন্য সব পড়ে রয় আড়ালে..
তার নাম দিপক নানালাল চুদাসাম

তথ্য সংগ্রহ: আরিফুল ইসলাম রনি