জানুন অমর এক প্রাণীর কথা, যে প্রাণী বৃদ্ধকাল থেকে ফিরতে পারে শিশুকালে

1

কবির সুমন গেয়েছেন,”অমরত্বের প্রত্যাশা নেই, নেই কোন দাবি দাওয়া…”এই চমৎকার লাইনগুলো। কিন্তু তাঁর অমরত্বের প্রত্যাশা না থাকলেও, পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা অমরত্বের প্রত্যাশা করেন। আবার অনেক কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ আছেন যারা বিভিন্ন সময়ে অনেক প্রাণী, এমনকি অনেক মানুষকেও অমর বলে দাবি করেন। তারা পূনর্জন্মের কথা বলেন।…এ সব কিছুর পরও শেষ পর্যন্ত আমরা সবাই জানি, এই নশ্বর পৃথিবীতে আমরা কেও অবিনশ্বর নয়। সবারই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মৃত্যু অনিবার্য।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে এমন এক প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন যারা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

“টারিটপসিস নিউট্রিকুলা”(Turritopsis Nutricula) নামের একশ্রেণীর জেলিফিস আছে যারা তাদের দেহের কোষগুলো পূণর্গঠনের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থা থেকে পুনরায় অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ফিরে যেতে পারে।এভাবে তারা অনির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এটিই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী যা অনন্তকাল বেঁচে থাকে।

এই শ্রেণীর জেলিফিস আকৃতিতে খুব ছোট, বেশিরভাগই ৪-৫ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই শ্রেণীর জেলিফিসদের জীবনকাল সীমাহীন। এদের শরীরের উপরিভাগ বেলাকৃতি যা একটি পাতলা আবরণে ঢাকা থাকে এবং বয়স হবার সাথে সাথে আবরণটি ওপরের দিকে পুরু হতে থাকে।

immortal jellyfish প্রথমে টারিটোপসিস নিউট্রিকুলা প্রজাতির এই জেলিফিসটির দেখা মেলে ১৮৮৩ সালে ভূমধ্যসাগর ও জাপানের কোন এক জলাশয়ে। এর আদি নিবাস প্রশান্ত মহাসাগরে। সেখান থেকে পরবর্তীতে সুমেরু অঞ্চল অতিক্রম করে এটি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ সময় এদের সমুদ্রের উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে দেখতে পা্ওয়া যায়।

এ প্রজাতির জেলিফিস এর মধ্যে সবাই যে অনির্দিষ্ট সময় বেঁচে থাকে তা কিন্তু না। কিছু জেলিফিস স্বল্প সময়ও বেঁচে থাকে। যারা তাদের পুরাতন কোষকে নতুন কোষ এ রুপান্তর করতে পারে, তারাই কেবল অনির্দিষ্ট সময়কাল বেঁচে থাকে এবং তাদের জীবনকালই শুধুমাত্র আলোচনার বিষয়। তবে তারা ঠিক কতোদিন এই প্রক্রিয়ায় বেঁচে থাকতে পারে তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। একারণে, এদেরকে অমর প্রাণী বলা হয়।

১৯৯০ সালের পূর্ব পর্যন্ত টারিটোপসিস নিউট্রিকুলার প্রজাতির জেলিফিস কি করে অনন্তকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে তা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় নি। কিন্তু এরপর পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এদের অনির্দিষ্ট জীবকালের রহস্য সম্পর্কে জানতে পারেন বিজ্ঞানীরা।

যখন এই প্রজাতির জেলিফিসরা প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন তারা সমুদ্রপৃষ্ঠের গভীরে অবতরণ করে। সমুদ্রপৃষ্ঠের গভীরের উষ্ণ পানির সংস্পর্শে এসে তারা নিজেকে ব্লব এ (blob-fish) রুপান্তরিত করে। ব্লব এ রুপান্তরিত হবার সময় এর কোষগুলো অন্য কোষে এ রুপান্তরিত হয়। মাংসপেশীর কোষগুলো স্পার্ম বা ডিম এ এবং স্নায়ুপেশীর কোষগুলো মাংসপেশীর কোষ এ রুপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় রুপান্তরের পরে এরা আবার পুনরায় শিশুকালে ফিরে যেতে পারে।

কিন্তু পুনোরোজ্জীবনের এই প্রক্রিয়া প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগেই সম্পন্ন হতে হয়। যদি প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর এ প্রক্রিয়া শুরু হয় তবে এদের মৃত্যু ঘটে। কীট থাকা অবস্থায় অসুস্থতার কারণেও এদের মৃত্যু হতে পারে। যদি না হয়, তবে এরা শিকারী প্রাণী হিসেবে বেড়ে ওঠে। এরা অন্য জেলিফিসদের শিকার করে খেয়ে ফেলে।

Immortal jellyfish life cycleসমু্দ্রপৃষ্ঠে থাকার সময় টারিটোপসিস নিউট্রিকুলা প্রবালকীট(Polyp) হিসেবে বেড়ে ওঠে। প্রবালকীট ও জেলিফিস একইধরণের ক্লোন থেকে জন্ম নেয়।কিন্তু প্রবালকীট বড় হয়ে এর শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে, অপরদিকে জেলিফিস স্বাধীনভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগে পর্যন্ত সমুদ্রে সাঁতরে বেড়ায়।

বিজ্ঞানীরা এই অমর প্রাণীটির জীবন সম্পর্কে আরও বেশি জানার চেষ্টা করছে, যাতে মানুষের জীবনকাল বাড়ানো ও অসুস্থতা নিরাময়ে সেটা কাজে লাগাতে পারে। কে জানে, অদূর ভবিষ্যতে কোন একদিন হয়তো বিজ্ঞানীরা এর জীবনপ্রণালী কাজে লাগিয়ে মানুষের আয়ুষ্কাল বাড়ানোর কোন উপায় বের করে ফেললেও ফেলতে পারে!

লেখকঃ ইতি মল্লিক

1 মন্তব্য

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে