রোববার দিনাজপুর জিলা স্কুলে বেলা ১১টায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজ আপনাদের দেখতে এসেছি। কারণ, দিনাজপুরসহ সারা দেশের ২১টি জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এ বন্যার পানি উত্তর দিক থেকে নেমে যাচ্ছে। আর দক্ষিণের নতুন নতুন জায়গা প্লাবিত হচ্ছে। এই দুর্যোগের কথা জানতে পেরে আমি এখানে আপনাদের পাশে ছুটে এসেছি।
তিনি বলেন, আগামী তিন মাস যতক্ষণ পর্যন্ত আবার ফসল না উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত খাদ্য সাহায্য অব্যাহত থাকবে। যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, সেই ঘরবাড়ি যাতে দ্রুতই তৈরি করা যায়, তার জন্য টিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পাশাপাশি ঘর তৈরি করা অথবা মেরামত করার ব্যবস্থা ইনশা আল্লাহ আমরা করে দেব। যেসকল ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করতে পারেনি বা বই-খাতা নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের মাঝে পুনরায় যাতে বই বিতরণ করা যায়, সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। বৃষ্টির পানি নেমে গেলে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হবে। আমাদের কৃষক ভাইয়েরা যাদের খেতের ফসল নষ্ট হয়েছে, তারা যাতে পুনরায় কৃষি ঋণ পেতে পারে, বীজ ও বীজতলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে যা যা করণীয়, তা তা করব।
উত্তরবঙ্গ থেকে আওয়ামী লীগের মঙ্গা দূর করার দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, উত্তরবঙ্গে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার ছিল। হাহাকার লেগেই থাকত। আওয়ামী লীগ ৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এই উত্তরবঙ্গে কোনো মঙ্গা হবে না। প্রত্যেক মানুষ যেন খাদ্য পায়, কাজ পায়, তার ব্যবস্থা আমরা করব। আমরা মন্দা দূর করেছিলাম। দুর্ভাগ্য, আমরা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি।
প্রত্যেকের কাছে রিলিফ পৌঁছানোর ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৫০ লাখ পরিবারকে আমরা ১০ টাকায় চাল দেব। বন্যা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, প্রশাসন, বিজিবি, পুলিশসহ প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে টিম তৈরি করে নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব দিয়ে সুষ্ঠুভাবে রিলিফ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারবার আসবেই, দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। মানুষের জানমালের ক্ষতি যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা করাই আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য। আমরা সেইভাবে সকল কর্মপরিকল্পনা নিচ্ছি।
যাদের ঘর নেই, বাড়ি নেই, যারা নদীভাঙনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জমি দেওয়ার আশ্বাস দেন শেখ হাসিনা।জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এবং দিনাজপুর-২ আসনের সাংসদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল হক, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল হাসান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে ১৫ জনের হাতে ত্রাণ তুলে দেন।এরপর তিনি বিরল উপজেলার ফরাক্কাবাদ ইউনিয়নের তেঘরা হাইস্কুল মাঠে ত্রাণ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে ত্রাণ বিতরণ করেন।