মারণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আজ ৪১ দিন ধরে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে বিধিনিষেধ ও সর্বাত্মক লকডাউন চললেও ঐ অঞ্চলের পরিস্থিতি তেমন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং করোনায় মৃত্যু, শনাক্ত ও শনাক্তের হার সবই অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীদের চাপ প্রতিনিয়ত যেন বেড়েই চলেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগী মারা যাচ্ছেন।
কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ–সংক্রান্ত জেলা কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রধানত তিনটি কারণেই এতো দীর্ঘ সময়ের বিধিনিষেধ ও লকডাউনের পরেও কোনো সুফল মিলছে না। কারণ গুলো হলোঃ সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার প্রবণতা; ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পথে এখনো অবৈধ চলাচল এবং করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে একই সাথে কোভিড ও নন–কোভিড রোগীদের চিকিৎসা, নমুনা পরীক্ষা, করোনা টিকাদান কেন্দ্র ও অন্যান্য টিকাদান কার্যক্রম।
জেলা সিভিল সার্জন এ এস এম মারুফ হাসান জানান, দু-এক দিনের মধ্যে টিকাদান কেন্দ্রটি করোনা ইউনিটের পাশ থেকে সরিয়ে হাসপাতালের পুরাতন ভবনে নেওয়া হবে। বিষয়টি যাতে দ্রুত করা যায় কর্তৃপক্ষ সে চেষ্টা করছে। তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি যত দিন জনগণের মাঝে পুরোপুরি নিশ্চিত করা না যাবে, তত দিনে করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যাবে না।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র থেকে আরো জানা যায়, গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে থেকে চলতি বছরের ১ জুন পর্যন্ত এই ১৪ মাসে চুয়াডাঙ্গা জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা ৬৮। বর্তমানের এই দীর্ঘ সময়ব্যপী লকডাউন ও বিধিনিষেধ চলাকালীনই জেলায় মারা গেছেন ৭২ জন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো.নজরুল ইসলাম সরকারের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, অনেকেই আইন জানার পরও তা ভাঙতে পারাকে গর্বের বলে মনে করেন। লকডাউন বাস্তবায়ন কেবল প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের কাজ, এই ধারণা যত দিন না মানুষ মন থেকে দূর করে আইনের প্রতি আনুগত্য হয়ে বিধি-নিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারবে, তত দিন পর্যন্ত এই ভয়ানক পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হওয়া সম্ভব নয়।
এদিকে বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চুয়াডাঙ্গা শাখার সভাপতি মার্টিন হীরক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, যদি মানুষকে একটানা ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউন দিয়ে ঘরে রাখা সম্ভব হতো, তাহলে আল্লাহ চাইলে সুফল অবশ্যই পাওয়া যেতো। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে চিকিৎসা পেশায় অভিজ্ঞ এই চিকিৎসক আরো বলেন, জুন মাসে দফায় দফায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন ও বিধিনিষেধ না দিয়ে পুরো জেলাকে এক সাথে লকডাউনের আওতায় আনা গেলে হয়তো এ জেলার চিত্র অন্য রকম হতে পারতো।














