সিনেমার শুরুতে চোখ আটকে যায় বুসান থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আর পাওয়া
অ্যাওয়ার্ড গুলোর দিকে।পজ করে তাই একবার চোখ
বুলিয়ে নেই! তন্মধ্যে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড দুইটা আর
বেষ্ট সাউন্ড ডিজাইন উল্লেখযোগ্য।
ঠিক তার মিনিট পাঁচেক পরেই পর্দায় যখন পলেস্তারা
খসে যাওয়া দেয়ালের সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে
সানাইয়ের করুণ সুর বেজে উঠে..চোখ ভিজে যাওয়ার
পাশাপাশি তখন টের পাই, কেন সাউন্ড ডিজাইনে এই ছবি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে!
সিনেমার গল্প মূলত এক নিম্ন মধ্যবিত্ত দম্পতির
প্রতিদিনকার ছোট্টছোট্ট ঘটনা নিয়ে।তাদের
জীবনযাপন, অভ্যাস, ঘরকন্না, নিত্যনৈমিকতার গল্পই
রয়েছে পুরো সিনেমা জুড়ে।
এখানে স্বামী-স্ত্রী দুজন ই চাকুরীজীবী.. স্ত্রী একটি
ব্যাগ কারখানার সুপারভাইজার .. ছুটেন সেই সাত
সকালে। অন্যদিকে স্বামী ফেরেন তখন.. কারণ তার
ছাপাখানায় কাজ..নাইট ডিউটি। আলাদা শিফট দুজনের..দেখা হওয়ার সুযোগ তাই খুব কম।মাঝেমাঝে হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া মিনিট দশেকের জন্য!ব্যাস..এত টুকুই। আর এই অংশ টুকুই সিনেমার সবচেয়ে সুন্দরতম দৃশ্য! তারপর আবার সেই একি ছুটে চলা..সারা বাড়ি জুড়ে একা থাকা..পুঁজিনির্ধারিত সময়..অপেক্ষা..আর রোজনামচার গল্প!
কিন্তু আমি মুগ্ধ হয়েছি..হতে বাধ্য হয়েছি ক্যামেরায়
তুলে ধরা সাধারণ তবুও অসাধারণ নিত্যনৈমিকতার ছোট্ট ছোট্ট গল্প গুলো দেখে। কি নিখাদ ভালোবাসা মিশেআছে সেখানে। ভেজা পায়ের ছাপ, উত্তর কলকাতার কানা গলি,ট্রামলাইন, তারে মেলে দেওয়া ভেজা শাড়ি,লাল মাটির ব্যাংক, টিনের কৌটায় মাইনের টাকা জমানো, বাজারের ফর্দ, কানকো দেখে মাছ কেনা,
সন্ধ্যাপ্রদীপ, সবুজ পেঁয়াজকলি, হলুদ-মরিচের ঝাঁঝ, চাল-ডাল-তেল-বড়ির রঙ! দেখেছি আর প্রতিটা শটে মুগ্ধ হয়েছি।
এইত..দেখা না হওয়া..কথা হওয়া.. যোগাযোগ না হওয়ার পরেও দুজন একি ছাদের তলায় রয়ে যাওয়া দিনের পর দিন। যেখানে একা খাওয়া..ফ্রিজের খাবার..তরকারি তে লবন কম-বেশি..সকালে গোসলের পর স্ত্রীর রেখেযাওয়া ভেজা কাপড় মেলে দেওয়া আবার সন্ধ্যায় সেটাতোলা.. শুকনো রুটি..এসব নিয়ে কোন অভিযোগ-অনুযোগনেই।ভালোবাসা তো এখানেই! কি নিপাট নিগুঢ় সুন্দর দাম্পত্যজীবন! ☺
দেখে যেমন মুগ্ধ,শুনেও তেমনি।শুরু আর শেষে সানাই
থেকে শুরু করে ফ্যানের বিরক্তিকর শব্দ,সাইকেলের
টুংটাং, ট্রামের তার, ভেড়ার পালের গলায় বাধা ঘন্টার
শব্দ, ছাপাখানার মেশিন,দিয়াশলাই জ্বালানো বাদ
যায়নি কিছুই..সাথে অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক।
এক জায়গায় ‘তুমি যে আমার..ওগো তুমি যে আমার” গান.. আহা!
শেষে ঋত্বিক এর অভিনয় নিয়ে বলি একটু.. একটা মানুষ এতটা সহজ-সাবলীল ভাবে চরিত্রের ভেতর ঢুকে যেয়ে কিভাবে অভিনয় করতে পারে আমার মাথায় ঢুকেনা। আমি তার অভিনয়ের প্রেমে পড়ে যাচ্ছি দিনদিন!
বাসবদত্তার ফেস পরিচিত ছিল টিভি সিরিজের দেখার
কারণে।আর এইখানেও চরিত্রে ভালো লেগে যাওয়ার
কারণ অনেক।
কিছু সিনেমার রেটিং দিতে ইচ্ছে করেনা.. IMDb যদিও
একে ৮ দিয়ে রেখেছে ১০ এ
আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, আদিত্য বিক্রম
সেনগুপ্তের এই সিনেমায় কথা/শব্দ থাকলেও প্রধান দুই
চরিত্রের মধ্যে কোন সংলাপ নাই!!
আসা যাওয়ার মাঝে যে একটা জিনিস স্থির.. কন্সট্যান্ট.. বদলায় না.. সেটা তুমি! শুধু তুমি!
লেখকঃ মেশকাতুল মাসাবিহ্ সঞ্চারী