‘টেন মিনিট স্কুল’ আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার বিকালের এই হামলার সময় অনুষ্ঠানের অতিথি ও ‘টেন মিনিট স্কুল’-এর উদ্যোক্তা আয়মান সাদিক প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন।
এছাড়া হামলার সময় হুড়োহুড়ির মধ্যে পড়ে গিয়ে অন্তত ২০ ছাত্রী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন টেন মিনিট স্কুলের সদস্য এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী। হুড়োহুড়িতে পড়ে একজন শিক্ষকেরও হাত কেটে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পরে পুলিশ পাহারায় আয়মান সাদিককে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছে দেয়া হয়।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজ মিলনায়তনে কলেজের ডিবেটিং ক্লাবের ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পশ্চিমা বিশ্বই প্রধান অন্তরায়’ শিরোনামে বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং ‘বার্ষিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও কর্মশালা-২০১৮’ এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ছিল। এরপই টেন মিনিট স্কুলের উদ্যোগে ‘এইচএসসি ক্রাশ কোর্স ও মাস্টার কোর্স’ এর আয়োজন করা হয়েছিল। এ অনুষ্ঠান প্রায় তিনটা পর্যন্ত চলে।
অনুষ্ঠানে নিউ ডিগ্রি কলেজসহ শহরের বিভিন্ন কলেজের প্রায় তিন-চার হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। কলেজের অধ্যক্ষ জার্জিস কাদির জানান, অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে শিক্ষার্থীরা উপভোগ করেছেন। তিনিও সেখানে বক্তব্য দিয়েছেন। এরপর আয়মান সাদিকের সঙ্গে ছেলেমেয়েরা সেলফি তোলার জন্য ভিড় করছিল। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা এসে অভিযোগ করেন যে, কলেজের দর্শন বিভাগের একজন শিক্ষক তাদের গালি দিয়ে অনুষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছেন। তার বিচার করতে হবে। অধ্যক্ষ বলেন, যেভাবে বিচার করলে তোমরা খুশি হও আমি সেইভাবে বিচার করব। আমাকে পাঁচটা মিনিট সময় দাও। এ কথায় তারা আশ্বস্ত হয়ে চলে যায়।’
অধ্যক্ষ জানান, এরপর তিনি আয়মানকে নিয়ে তার কার্যালয়ে এসে নাস্তার ব্যবস্থা করছেন। এমন সময় ছাত্রলীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম ওরফে বাপ্পি ক্যাম্পাসে আসেন। মুঠোফোনে তিনি অধ্যক্ষের সঙ্গে উত্তেজিত ভাষায় কথা শুরু করেন। অধ্যক্ষ বিচারের জন্য পাঁচ মিনিট সময় চান। কিন্তু সভাপতি তাকে দুই মিনিট সময় দেন। তাছাড়া কলেজের উন্নয়ন শেষ করে দেয়ার হুমকি দেন।
অধ্যক্ষ বলেন, এ কথা শুনে তিনি নিচে গিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতিকে বুঝিয়ে তার হাত ধরে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে তার কার্যালয়ে নিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তার কার্যালয়ে সামনের বারান্দায় ঢুকেই তিনি একজন ছাত্রকে থাপ্পড় দিয়ে ফুলের টব ও ডাস্টবিন ভাঙচুর শুরু করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাইতুল হোসেন ওরফে তরুণ, ছাত্রলীগের নেতা ইমন, শুভ, সুকান্ত, ফাহিম বখতিয়ার, হাফিজুল ইসলাম ও কয়েকজন বহিরাগতসহ ২০-২৫ জন যুবক ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করেন। তারা কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ার ভাঙচুর করেন। তারা অধ্যক্ষের টেবিলে সাজানো ক্রেস্ট ছুড়ে ফেলে দেন। আয়মান সাদিককে খুঁজতে থাকেন।
এ সময় আয়মান সাদিককে কলেজের অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত কক্ষে দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। সেখানে গিয়েও তারা দরজায় ধাক্কাধাক্কি করেন। করিডরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবিসংবলিত একটি ও মুজিব নগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ছবির ব্যানার টাঙানো ছিল। সেগুলোও তারা ছিঁড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। অনুষ্ঠানস্থলের চেয়ার ভাঙচুর করে। জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি মাইনুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, একজন শিক্ষকের কারণে অতি উৎসাহী কিছু ছেলে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, আয়মান সাদিকের আগমন উপলক্ষে কলেজের অধ্যক্ষ আগের দিনই তাকে এবং তার সাধারণ সম্পাদক বাইতুল হোসেন ওরফে তরুণকে ডেকে বলেছিলেন যেন কোনো ঝামেলা না হয়। সংগঠনের কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে থাকে। তাদের সেইভাবে বলে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, দর্শন বিভাগের একজন শিক্ষক ছাত্রলীগের বহিষ্কার করা তিনজন ছাত্রকে গালি ও ধাক্কা দিয়ে অনুষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছেন। তারপরে জায়গা না পেয়ে বাইরে হাইবেঞ্চে বসা সম্মান শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রকেও ওখানে বসার জন্য অপমান করেছেন। এরপর সংগঠনের অতি উৎসাহী ছাত্ররা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছেন।
বাপ্পি দাবি করেন, তিনি পরে গিয়ে সবাইকে ডেকে নিয়ে এসেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন এতে রাজশাহীর বদনাম হলো। কিন্তু তিনি নিজের ভাঙচুরের কথা অস্বীকার করেন। একজন স্বেচ্ছাসেবককে চড় দেয়ার অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, যাকে চড় দিয়েছেন তিনি তাদের সংগঠনের ছেলে। তার নাম আজিজুল। ছাত্রলীগ থাকতে কেন এমন হলো এ জন্যই চড় দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, অনুষ্ঠান শেষে চা-চক্র চলছিল। এ সময় অনুষ্ঠানের সামনে বসার জায়গা না দেয়ার অভিযোগ ছাত্রলীগ নামধারী কিছু ছেলে ফুলের টব ও চেয়ার ভাঙচুর করেছে। কাউকে মারেনি। কলেজের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগও দেয়া হয়নি।