আগামী ২০-২৩ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘ই-কমার্স ও অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা : বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই দাবি করেন। বাংলাদেশে ই-কমার্স বা অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্য চালু করার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
বেসরকারি সংস্থা ইক্যুইটিবিডির প্রতিনিধি সৈয়দ আমিনুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবু নাসের, ডিসিসিআইয়ের পরিচালক ফজলুল করিম, জাতীয় শ্রমিক জোটের ড. মেজবাহ উদ্দিনসহ অন্যরা।
সেমিনারে ইক্যুইটিবিডির প্রতিনিধি বরকত উল্লাহ মারুফ উল্লেখ করেন, ই-কমার্স বিষয়ে আলোচনার সুযোগ ছিল ১৯৯৮ সালের একটি বিধানে। কিন্তু ধনী দেশগুলো, বিশেষ করে গুগল, অ্যাপল, ফেসবুক, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটের মতো কম্পানিগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় আলোচনার সুযোগ বন্ধ করে দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা ও আইনি বাধ্যবাধকতা প্রতিষ্ঠা করতে। তারা চায় এ ক্ষেত্রে কর, শুল্কসহ সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকুক। আফ্রিকা এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। কারণ এ ধরনের আয়োজন বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করবে এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়বে। বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক অসমতা বাড়বে, যা এসডিজির ১০ নম্বর অভীষ্টের পরিপন্থী। তাই বাংলাদেশ সরকারকে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
ড. মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কারিগরি নানা সংকটের মধ্য দিয়েই ই-কমার্স এগিয়ে চলছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতিযোগিতা অভাব এবং বাজার ব্যর্থতার সুযোগে ই-কমার্স দ্রুতগতিতে বেড়ে উঠছে।
কিন্তু বাজার ব্যর্থতা নিরসন বা ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় সরকারের ই-কমার্স বিষয়ে কার্যকর কোনো নীতিমালা নেই।
আবু নাসের বলেন, ক্রমবর্ধমান আর্থসামাজিক অসমতা বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়, ই-কমার্স নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আয়োজন এই অসমতাকে দেশে এবং বৈশ্বিকভাবে আরো বাড়াবে। সংস্থাটির আসন্ন মন্ত্রীপর্যায়ের সভায় এই বিষয়ে একটি শক্তিশালী অবস্থান নেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা উচিত।
ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশের জন্য ই-কমার্স একটি অপরিপক্ব উদ্যোগ। কারণ সরকার এই অন্যায্য বাণিজ্য প্রতিযোগিতা, ইচ্ছামতো মূল্য নির্ধারণ, কর ফাঁকি রোধ এর কোনো কিছুই আসলে করতে পারবে না। আর তাই একটি যথাযধ নীতিমালা প্রণয়ন না করে তথ্য নিরাপত্তা পাকাপোক্ত না করে ই-কমার্সের পক্ষে দাঁড়ানো সরকারের উচিত হবে না।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য সাংবাদিক আসজাদুল কিবরিয়া বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উচিত নয় দোহা রাউন্ডের আলোচনা, বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, রুলস অব অরিজিন এবং কার্যকর বাণিজ্য সুবিধাবিষয়ক আলোচনা থেকে সরে আসা। কারণ এই বিষয়গুলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুবই দরকারি। ই-কমার্স বিষয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আসন্ন সম্মেলনে বাংলাদেশকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।