গতকাল ছিলো উত্তম কুমারের মহাপ্রয়াণ দিবস। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই এই মহানায়কের অন্তর্ধান দিন ছিলো। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের এই আয়োজন
প্রথম ছবি
অরুণ কুমার তথা উত্তম কুমার ছিলেন পোর্ট কমিশনারের কেরানি। হঠাৎ মাথায় ভুত চাপলো সিনেমা করবেন। সুযোগ ও পেলেন।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনের সময়টাতেই উত্তম কুমার অভিনয় করলেন ‘মায়াডোর ‘ ছবি। তার ভাগ্য ততো টা সুপ্রসন্ন ছিলোনা। ফ্লপের খাতায় লেখা হলো এই ছবি। তারপর ১৯৫৩ সালের ‘সাড়ে চুয়াত্তর ‘ দিয়ে স্বরুপে ফিরে এলেন উত্তম। শুরু হলো উত্তম যুগ। হয়ে গেলেন ‘বাংলার রবার্ট ব্রুস’।
ঘুরে দাড়ানোর গল্প
১৯৫৩ সাল। ‘সাড়ে চুয়াত্তর ‘ সিনেমা দিয়ে ফিরে এলেন স্বরুপে। নায়িকা নবাগতা সুচিত্রা সেন। সুচিত্রা পেলো সেরা সাফল্য আর উত্তম কুমার ও ঘুরে দাঁড়ালেন সিনেমা জগতে।
চলচ্চিত্রকার উত্তম
দুইশত এর বেশি বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। হিন্দি সিনেমাতেও স্বাক্ষর রাখেন সাফল্যপূর্ণ মনকাড়া অভিনয়ে। সফলতা পেয়েছেন প্রযোজক ও পরিচালনাতেও। ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী ‘ (১৯৮১), ‘বনাপলাশীর পদাবলী ‘ (১৯৭৩) এবং ‘শুধু একটি বছর ‘ (১৯৬৬) তার পরিচালনা করা ছবি।
উত্তম- সুচিত্রা
সুচিত্রা – উত্তম কিংবা উত্তম- সুচিত্রা যে যেভাবে ই বলুন না কেন বাংলা সিনেমায় সর্বকালের সেরা জুটি উত্তম-সুচিত্রা। এ জুটির বিশেষত্ব হলো তাদের কথোপকথনের ধারা। এরকম কথোপকথন কে বলা হয় ‘রোমান্স অন এ টি-পট’। সুচিত্রা সেন ই উত্তমকে ম্যাটিনি আইডল করে তুলেছিলেন। আজ ও সেরা এই জুটি। বাস্তবেও তাদের রসায়ন অনেক গভীরে গিয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে রসায়ন অধরা ই থেকেছে। পূর্ণতা পায়নি তাদের বাস্তবের সম্পর্ক। তাদের ভক্তরা সেসময় খুব করে চাইতেন তারা যেন পর্দার মতো করেই বাস্তবে ঘর সাজায়! কিন্তু বিধাতা চায়নি হয়তোবা। কিন্তু আজ ও তারা তরুণ – তরুণীর হৃদয়ে প্রেমের উপমা আর উৎসাহের প্রতীক হয়ে আছেন।
প্রতিভাধর উত্তম
অভিনয়ের পাশাপাশি সঙ্গীতেও সমান পাদচারণা ছিলো এই মহানায়কের। কবিগুরুর ‘আমার সোনার হরিণ চাই’, ‘অনেক কথা বলেছিলেম’, ‘তুমি ধন্য ধন্য হে’, এবং ‘তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী ‘ গানগুলো রেকর্ড করেছিলেন।
উত্তম- গৌরী
অভিনয় জগতে ঢোকার একবছরের মাথায় বিয়ে করেন বান্ধবী গৌরী দেবী কে। বান্ধবীর থেকেও বেশি কিছু গৌরীর যখন বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুনে উত্তম আর বসে থাকতে পারেননি। ঝোঁকের মাথায় হুট করেই পালিয়ে বিয়ে করেন তাকে (১৯৪৮)। বিয়ের দুই বছরের মাথায় ১৯৫০ সালে জন্ম নেয় তাদের একমাত্র সন্তান গৌতম। সুচিত্রার সাথে পর্দার রসায়ন যখন বাস্তবেও হতে শুরু করলো তখনি গৌরী উত্তম কে অভিনয় করতে বাধা দেন। আর এ কারণেই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়।
উত্তম-সুপ্রিয়া অধ্যায়
ভালোবাসার মানুষ কে আপন করে নেওয়ার পথে সমাজ, সংসারের কোনো বাধাই মানেননি এই মহানায়ক। লোকনিন্দা, অপবাদ সবকিছু মাথা পেতে নিয়েও জীবনের ১৭ টি বছর একসাথে ই বসবাস করে গেছেন উত্তম কুমার আর সুপ্রিয়া দেবী। আইনত বিয়ে করতে পারেননি। কিন্তু বিবাহিত দম্পতির মতো ই পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন তারা। ১৯৬৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর উত্তম কুমার চলে আসেন সুপ্রিয়া দেবীর ময়রা রোডের ফ্ল্যাটে। জীবনের বাকি ১৭ টি বছর তিনি সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গেই অতিবাহিত করেন।
না ফেরার দেশে উত্তম কুমার
১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন বাংলা ছবির এই মহানায়ক। ছবিতে অভিনয় করতে করতেই চলে গেলেন তিনি। টালিগঞ্জের স্টুডিও তে রাত ১০ টা ‘ওগো বধু সুন্দরী’র শুটিং করলেন। বাসায় ফিরে টের পেলেন বুকের বাম পাশটায় একটা ব্যথা লতিয়ে উঠছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ। বড় অসময়ে না ফেরার দেশে চলে গিয়েও তার রেখে যাওয়া কীর্তির মাঝে অমর হয়ে রইলেন চিরজীবন। বারে বারে তার কণ্ঠ গেয়ে উঠবে, ‘এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলো তো……