আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বানভাসি মানুষ ফিরছে বাড়ির দিকে। কিন্তু অনেকের ঘর মেরামত করা তো দূরের কথা, জুটছে না দুমুঠো খাবার। ফলে তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
গতকাল সোমবার উপজেলার বন্যাকবলিত দামোদরপুর ইউনিয়নের আমবাগান, চাপাতিপাড়া; রামনাথপুর ইউনিয়নের বটপাড়া ও দক্ষিণ বটপাড়া গ্রাম ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেল।
আমবাগান চাপাতিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য মাটির ঘর ধসে পড়েছে। ধসে যাওয়া ঘরের ভিটায় আনমনা হয়ে বসে ছিলেন এক বৃদ্ধা। মোটরসাইকেল থেকে নামার পর বললেন, ‘মোর নাম শান্তি বালা (৬০)। বাড়িঘর তলে যাওয়ার পর একটা স্কুলোত আছনো। পাঁচ দিন পর আসি দেখি, ঘরবাড়ি সউগ ভাংগি পলচে। খাই না খাই এই ঘরটাত শুতলে মোর খুব শান্তি নাগতো। কনতো, মুই এ্যালা কোনটে থাকিম, কী খাইম? টাকাও নাই যে ফির ঘরটা তুলি থাকিম।
আলাপচারিতায় জানা গেল, শান্তিবালার চার সন্তান। স্বামী গণেশ রায় মারা গেছেন অনেক আগেই। সন্তানেরা বিয়ে করে বউ নিয়ে আলাদা থাকেন, খান। তাঁদেরও কষ্টের সংসার। তাঁর পেট চলে এর-ওর বাড়িতে খেয়ে। সন্তানেরাও মাঝেমধ্যে খাবার দেন। শান্তিবালা এখন ঘর মেরামত করবেন কী দিয়ে, সেই চিন্তায় বিভোর।
বটপাড়া গ্রামের দিনমজুর রমজান আলী মণ্ডলের দুটি মাটির ঘর ভেঙে পড়েছে। তিনি ছয় সদস্য নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে সাত দিন থাকার পর গত রোববার বাড়িতে ফিরেছেন। রমজান আলী বলেন, ‘মুইতো মনে করচিনু বানের পানি নামি গেইলে আর কোনো সমস্যা নাই। আশ্রয়কেন্দ্র থাকি বাড়িত আসি দেকি, সউগ শ্যাষ। এ্যালা খাই কী, ঘর বানাই কী দিয়া?’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারি এক টাকারও অনুদান পাননি।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় দক্ষিণ বটপাড়া গ্রামের মানুষ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। ওই গ্রামে প্রায় ৪০টি বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি মাটির ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামের পান্না খাতুন (৩০), মুক্তা বানু (৪০), আঞ্জুয়ারা (৩০) বুলবুলিসহ (৪০) আরও ১০ নারী অভিযোগ করেন, তাঁরা সরকারি-বেসরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। ঘরে খাবার নেই। এই মুহূর্তে ঘরবাড়িগুলো মেরামত করার মতো টাকাও নেই তাঁদের। বুলবুলি বলেন, গ্রামের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সকাল থেকে না খেয়ে আছি। কারও হাতে টাকাপয়সা নাই। ধারদেনা দেওয়ারও লোক নাই। হামার কী যে হইবে এবার জানি না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া গতকাল সোমবার বলেন, অনেক গ্রামে জলমগ্ন ঘরবাড়ি থেকে এখনো বন্যার পানি নামেনি। কিন্তু পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ছে। তাই এখনো ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা করা হয়নি। তবে গৃহনির্মাণ মঞ্জুরির জন্য সরকারিভাবে টাকা বরাদ্দ চাওয়া হবে।