ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে সিরিজ জয় টাইগারদের

0
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে সিরিজ জয় টাইগারদের

৯ বছর পর বিদেশের মাটিতে সিরিজ জিতল ম্যাশ বাহীনি। তামিমের রেকর্ড সেঞ্চুরি ও মাহমুদউল্লাহর দুর্দান্ত ফিফটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩০২ রানের বড় টার্গেট ছুড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। তাকে পুঁজি করে লড়ে গেলেন বোলাররা। তাদের প্রচেষ্টা আলোর মুখও দেখল। দুই ডিপার্টমেন্টের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে স্বাগতিকদের ১৮ রানে হারালেন সফরকারীরা। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতল টাইগাররা।

এর আগে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ধবলধোলাই খেয়েছিলেন সফরকারীরা। তারই প্রতিশোধ নিল বাংলাদেশ। এ নিয়ে কথাও কম শুনতে হয়নি তাদের। ওয়ানডে সিরিজ জয়ে সেই জ্বালা মেটালেন মুশফিক-সাকিব-তামিমরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টাইগারদের এটি তৃতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়।

টাইগারদের দেওয়া জবাবে দারুণ শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুভসূচনা করেন গেইল ও লুইস। ভয়ংকর হয়ে উঠছিল সেই জুটি। তবে সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান মাশরাফি। দলীয় ৫৩ রানে লুইসকে (১৩) ফিরিয়ে তাদের বিচ্ছিন্ন করেন তিনি। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে হোপকে নিয়ে এগোতে থাকেন গেইল। তিনি একের পর এক চার-ছক্কায় এলোমেলো করে দেন বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ। একপর্যায়ে তুমুল চোখ রাঙাতে থাকেন ক্যারিবীয় দানব। তখনই বাদ সাধেন রুবেল। মিরাজের তালুবন্দি করে গেইলকে ফিরে যেতে বাধ্য করেন রিভার্সসুইং তারকা।

ফেরার আগে টি-টোয়েন্টি মেজাজে ৬৬ বলে ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৭৩ রান করেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বিস্ফোরক ব্যাটার। এটি টি-টোয়েন্টি ফেরিওয়ালার ৪৯তম ওয়ানডে ফিফটি। ঝুলিতে রয়েছে ২৩টি সেঞ্চুরি।

এরপরে হেটমায়ারকে নিয়ে এগিয়ে যান হোপ। জমাট বেঁধে গিয়েছিল তাদের জুটি। দোর্দণ্ডপ্রতাপে খেলছিলেন তারা। তাদের দম্ভ চূর্ণ করেন মিরাজ। দুর্দান্ত কুইকারে বোল্ড করে গেল ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হেটমায়ারকে ৩০ রানে সাজঘরের পথ দেখান তিনি। এতে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ।

এর কিছুক্ষণ পরই যৌথ প্রচেষ্টায় কাইরনকে (৪) রানআউটে কেটে ক্যারিবীয়দের চেপে ধরেন মাশরাফি-মিরাজরা। সেই চাপের মধ্যে হোপকে (৫৬) সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে ম্যাশ ফেরালে ধুঁকতে শুরু করেন তারা। একে একে ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে থেকে যান রোভম্যান। টাইগার বোলারদের ওপর রীতিমতো স্টিমরোলার চালাতে থাকেন তিনি। তবে তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি হোল্ডার। মোস্তাফিজের শিকার হয়ে ফেরেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন রোভম্যান। এতে ভীতি সঞ্চারিত হয় বাংলাদেশ সমর্থকদের মনে। তিনি আউট না হলে হেরে যাওয়ার একটি শঙ্কা জাগে!

তবে ক্যারিবীয় হিটম্যানও পারেননি। শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চ ছড়িয়ে হার মানতে বাধ্য হন। মাত্র ৪১ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেও পরাজিত সৈনিকে বেশে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।

কারণ নির্ধারিত ৫০ ওভারেও স্কোরবোর্ডে ২৮৩/৬ রানের বেশি তুলতে পারেননি তারা। বাংলাদেশের হয়ে মাশরাফি ২টি ও রুবেল, মিরাজ, মোস্তাফিজ নেন ১টি করে উইকেট।

এরআগে অঘোষিত ফাইনালে সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টস জিতে প্রথমে ব্যাট নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ফের ব্যর্থ এনামুল হক। ১০ রান করেই ফেরেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে সাকিবকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ওঠেন তামিম। আবারও জমে ওঠে তাদের জুটি। তাতে ভর করে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। তবে হঠাৎই ছন্দপতন। ৩৭ রান করে নার্সের স্পিন ভেলকিতে ফিরে যান সাকিব। তার আগে তামিমের সঙ্গে ৮১ রানের জুটি গড়েন তিনি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার পারলেও আগের দুই ম্যাচের ফর্মটা এ ম্যাচে টেনে আনতে পারেননি মুশফিক। ১২ রান করেই সাজঘরের পথ ধরেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

সঙ্গীরা যাওয়া-আসা করলেও থেকে যান তামিম। পরে তাকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন মাহমুদউল্লাহ। বাড়ে রান তোলার গতিও। সেঞ্চুরির পথে আগাতে থাকেন দেশসেরা ওপেনার। শেষ পর্যন্ত তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগার স্পর্শ করে মাঠ ছাড়েন তিনি। বিশুর শিকার হয়ে ফেরার অগে ১২৪ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ১০৩ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন ড্যাশিং ওপেনার।

তামিমের ১০০

এইদিন ক্যারিয়ারে ১১তম সেঞ্চুরির পথে একাধিক রেকর্ড গড়েন তামিম। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে দুটি ভিন্ন সিরিজে একাধিক শতক হাঁকানোর কীর্তি গড়েন তিনি। এ ছাড়া তিন ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সফরকারী দলের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড করেন এ হার্ডহিটার। এর আগে রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান ড্যারেন লেহম্যানের (২০৫) দখলে।

আগের দুই ম্যাচের কথা চিন্তা করলে এখানেই থেমে যেতে পারত বাংলাদেশের ইনিংসের গল্প। তবে ব্যাটিং লাইনআপে পরিবর্তন এনে দৃশ্যপট পাল্টে দেন মাশরাফি।সাব্বির-মোসাদ্দেককে বসিয়ে তিনিই নামেন মাঠে। ইনিংসের টার্নিং পয়েন্টে ৩৬ রানের ক্যামিও খেলে দলকে ৩০০ রানের মহাসড়কে রেখে আসেন ম্যাশ।

পরে সাব্বির-মোসাদ্দেককে নিয়ে ঝড় তোলেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ ৪ ওভারে আসে ৪৮ রান। এতেই ৩০১ রান তোলেন সফরকারীরা, যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এর আগে গেইলদের বিপক্ষে টাইগারদের সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড ছিল ২৯২।

শেষ দিকে দলকে ৩০০ প্লাস সংগ্রহ এনে দেয়ার কৃতিত্বটা পাবেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের মাঝপথে নেমে থাকেন শেষ পর্যন্ত। এই পথে ৪৯ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন মিস্টারকুল। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৯তম ফিফটি। ৫ বলে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। এর আগে ১২ রান করে ফেরেন সাব্বির।