কনক কর্মকারের লড়াইটা নিজের সঙ্গে

0
kanak-2

কনক কর্মকার। আগস্টের ৭ তারিখ পা দিলেন ২২ বছরে। জীবন বসন্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গড়েছেন রেকর্ড। ফুটবল ফ্রিস্টাইল ও ব্যালেন্সিংয়ে কনকের দখলে থাকা রেকর্ড সংখ্যা ১৯টি। নোয়াখালীর এই তরুণ স্বপ্ন দেখে রেকর্ডের শতক ছোঁয়ার। অথচ একটা সময় ভাবনাতেই ছিল না এসব। শূন্য থেকে শৃঙ্গে যাবার দৃপ্ত বাসনায় নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ জানানো কনকের গল্প শুনেছেন জহিরুল কাইউম ফিরোজ

• কনক কর্মকারের শুরুর গল্পটা…

কনক কর্মকার: এসএসসি শেষ করে ভর্তি হই ফেনী পলিটেকনিকে। ফুটবল ভালো খেলতাম। ডিপ্লোমা প্রথম বর্ষের শেষদিকে ভাবলাম, ভিন্ন কিছু করি। ইউটিউবে একদিন দেখলাম একজন জ্যাগলার জ্যাগলিং করছে। ঘাড়ে, কপালে, মাথায় ব্যালেন্স করতেছে। এছাড়া অনেক কসরত করছে। সেটি দেখে উদ্বুদ্ধ হই। সিদ্ধান্ত নিই, আমিও এমন কিছু করব। ছয় মাস অনুশীলন করি। এরপর মনে হলো আমি ব্যালেন্স করতে শিখেছি। কপাল, থুতনি, হাঁটু, মাথায় বল রাখতে পারি। তখন ফুটবল ব্যালেন্সিং নিয়ে গিনেজ রেকর্ড ছিল না। কাপ ব্যালেন্সিংয়ের রেকর্ড ছিল। সেটাই ভাঙি। ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি কপালে কাপ ব্যালেন্সিংয়ের রেকর্ড ভেঙে যাত্রা শুরু।

• গিনেজ রেকর্ডস সম্পর্কে জানলেন কীভাবে?

কনক: গিনেজ বুক সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই জানতাম। রেকর্ড করার কথা কখনও ওভাবে চিন্তা করিনি। পরে যখন ব্যালেন্সিং শিখলাম, দক্ষতা বাড়ালাম, তখন গিনেজ বুক নিয়ে বিস্তারিত ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করি। কীভাবে আবেদন করতে হয়, ভিডিয়ো পাঠাতে হয়, করণীয় কী কী! ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর গিনেজে আবেদন জমা দেই। এর আগে প্রায় ছয় মাস লেগে থাকি গিনেজের খুঁটিনাটি জানতে। এই ব্যাপারে বন্ধুবান্ধব, বড়ো ভাইরা সাহায্য করেছেন।

• সাধারণ বালক থেকে রেকর্ডবয়, যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা!

কনক: ফুটবল নিয়ে ফ্রিস্টাইল করব, রেকর্ড গড়বো, ওরকম আসলে উদ্দেশ্য ছিল না। ফুটবল ভালো পারতাম, চেষ্টা করতাম ভিন্নতা আনার। অভিজ্ঞতা তো অনেক হয়েছে। একটা মজার অভিজ্ঞতা বলি। যখন আমার দুইটা রেকর্ড, জানতে পারি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গিনেজ রেকর্ড তিনটি। মানে আমি আর একটা করলে যৌথভাবে সর্বোচ্চ, দুইটি করলে একাই টপার। সৌভাগ্যবশত, পরেরবার দু’টো রেকর্ড একসাথে হয়। দুই থেকে চার। এক লাফে উপরে উঠি। কিন্তু কাউকে জানাইনি। আমাকে নিয়ে আয়মান সাদিক ভাই একটি লাইভে বিষয়টি বলেন। সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, ঘটনা সত্য না-কি? মূলত, আমি পাবলিশ করার আগে উনি করাতে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। সকলে অবশ্য বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নেয়। 

 রেকর্ডের সংখ্যায় অনেককে ছাড়িয়ে গেছেন। লড়াইটা এখন নিজের সঙ্গে। নিজেকে কোথায় দেখতে চান ভবিষ্যতে?

কনক: আমার লড়াইটা আসলে নিজের সঙ্গেই। আমার সঙ্গী যারা বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড গড়লো তাদের কারও ৬টি, কারও ৭টি। আমার সংখ্যা ১৯টি। যেহেতু ভালো অবস্থানে আছি, চাচ্ছি নিজেকে আরও উপরে নিয়ে যেতে। গোটা বিশ্বের সাতশো কোটি মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা করে আমার ক্যাটাগরিতে প্রথম হতে চাই। স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতে ১০০টি রেকর্ড ভাঙব। বাংলাদেশি হিসেবে এটি অর্জন করে বিশ্বের দুয়ারে দেশকে প্রেজেন্ট করতে চাই।

• এসবের পেছনে কাদের অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি?

কনক: আমার একজন বন্ধু সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তার পরামর্শ ভীষণ কাজে দেয়। আমি মোটামুটি ব্যালেন্সিং শিখে গেছি ততদিনে। চাচ্ছিলাম রেকর্ড গড়তে। কিন্তু ওভাবে তথ্য বা সহায়তা পাচ্ছিলাম না। বন্ধু তখন বলল, তুই এখন রেকর্ডের পিছনে ছুটিস না। নিজেকে আরও ঝালিয়ে নে। অথবা, একটা ছোট চেষ্টা করতে পারিস। সেটিই করলাম। পকেটে তিনশো টাকা ছিল। ওই টাকা দিয়ে সাড়ে চারশো কাপ কিনি। কপালে কাপ ব্যালেন্সিংয়ে ইতালির একজনের রেকর্ড ছিল ৩২০ টা কাপ ব্যালেন্স করা। আমি ৪৫০ টা দিয়ে প্রথমদিনেই ভাঙি। ওই বন্ধু ছাড়াও আরও অনেকেই বিভিন্ন সময়ে সাহস জুগিয়েছেন। সবচেয়ে বড়ো কথা, নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ করে গেছি বারবার।

• তরুণদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?

কনক: তরুণ প্রজন্ম টিকটক, লাইকির অসুস্থ কনটেন্টে বুঁদ হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও অসঙ্গতিপূর্ণ এগুলো। এখান বেরিয়ে আসতে হবে। অথচ আমার দেশের অনেকে বাইরের দেশে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। যারা ভালো কাজ করছে, প্রতিভা বেরিয়ে আসছে তাদের জন্য শুভকামনা। ভালো কিছু করলে একদিন বিশ্ব আপনাকে চিনবেই।