গত মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) সাতক্ষীরার আশাশুনির কুল্যা গুনাকরকাটী ব্রিজ থেকে নিচে নদীর কাদাপানির মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে হত্যা করা সেই
সদ্যজাত নবজাতক শিশুর পরিচয় মিলেছে।
নবজাতক কন্যাশিশুটির জন্মদাতা মায়ের নাম দিপীকা মন্ডল ও বাবার নাম মৃন্ময় মন্ডল। ওই উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামে তাদের বাড়ি।
জানা যায়, শিশুটি কন্যা হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে তার দাদা কার্তিক মন্ডল তাকে ব্রিজ থেকে ফেলে হত্যা করেন। কার্তিক মন্ডল পেশায় একজন তেল ব্যবসায়ী। কার্তিক মন্ডল ও তার স্ত্রী উর্মি মন্ডল ওই একই এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ভোরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কার্তিক মন্ডল শিশুটিকে নিয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসার কথা বলে বের হয়ে পরবর্তীতে তাকে আশাশুনির কুল্ল্যা গুনাকরকাটী ব্রিজের ওপর থেকে নিচের চরে ছুঁড়ে ফেলে দেন। এতে শিশুটির মাথা থেতলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। খবর পেয়ে কুল্ল্যা ইউপি চেয়ারম্যান মো. হারুন শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ শিশুটিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
কিন্তু মস্তিষ্কে অতিরিক্ত আঘাত পাওয়ায় মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মারা যায় সদ্যজাত শিশুটি। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার নিউজইনসাইড সহ বিভিন্ন নিউজপোর্টাল ও দৈনিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিপীকা মন্ডল অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আশাশুনির বুধহাটা জনসেবা স্বাস্থ্য ক্লিনিকের কেয়ারে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রচণ্ড প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পর তাকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেসময় তার আল্ট্রাসনো করা হলে গর্ভের শিশুটি কন্যা এবং বিকলাঙ্গ বলে জানা যায়।
সোমবার সন্ধ্যায় সিজারের মাধ্যমে দিপীকা মন্ডল ওই কন্যা শিশুটির জন্ম দেওয়ার পর রাতেই তার অবস্থা গুরুতর খারাপের দিকে যাওয়ায় তাকে সাতক্ষীরায় চিকিৎসার জন্য আনা হয়।
সন্তান হারা মা দিপীকা জানান, তার শ্বশুর কার্তিক মন্ডল শিশুটিকে তার কাছ থেকে নিয়ে যান। এরপর তিনি আর জানেন না তার শিশুটি কোথায়!
প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, দিপীকার স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজন আগেই বলেছিল মেয়েশিশু হলে তারা তাকে ঘরে রাখবে না। দরকার হলে শিশুটির মা-কেও তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এজন্যই হয় তো কার্তিক মন্ডল শিশুটিকে ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দিয়েছেন বলে ধারণা করছেন তারা।
এ বিষয়ে আশাশুনি থানার ওসি মো. গোলাম কবিরের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, তিনি নিজেও ফেসবুকএবং বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে এসব খবরগুলো পেয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি জেনেছি শিশুটি কন্যা হওয়ায় তাকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি যাচাই বাছাই করছি এবং খুব দ্রুতই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।”
জানা যায়, ঘটনার পর থেকে কার্তিক মন্ডল নিখোঁজ রয়েছেন। তবে দিপীকা মন্ডল ও তার শাশুড়ি উর্মি মন্ডল এখনো বুধহাটা জনসেবা ক্লিনিকে অবস্থান করছেন।