কারাতের ইতিহাস:
কারাতের উৎপত্তি কোথায় বা এর অতীত ইতিহাস নিয়ে খুব স্পষ্ট করে কিছু না বলা গেলেও এটা নিশ্চিত যে, কারাতের উৎপত্তি হয়েছে হাজার বছরেরও বেশি আগে এবং এর জনক হচ্ছেন একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী যিনি বর্তমানে সর্বাধিক পরিচিত ‘দারুমা’ নামে। আনুমানিক ৫০ খৃষ্টপূর্বাব্দে এই ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মগুরু চীনের একটি ছোট উপাসনালয়ে প্রথম বারের মত নিয়মতান্ত্রিক ব্যায়ামের প্রচলন করেন। দেহ ও মনকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে উদ্ভাবিত এই কলা কালক্রমে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে ‘কারাতে’ এর বর্তমান রূপ লাভ করে।
কারাতের এই বর্তমান রূপ বা আধুনিক কারাতের উৎপত্তিস্থল হলো জাপানের রিউকু দ্বীপ (যার বর্তমান নাম আকিনাওয়া)।
এটা আংশিকভাবে দেশীয় যুদ্ধ পদ্ধতি নাম তে (? 手 আক্ষরিক অর্থ, “হাত”; ওকিনাওয়ান তি ) থেকে এবং চীনা কেনপো থেকে বিকশিত হয়েছে। কারাতে হলো এমন একটি আঘাত করার কৌশল যা ঘুষি, লাথি, হাঁটু এবং কনুইয়ের আঘাত ও মুক্তহস্ত কৌশলের মাধ্যমে করা হয়। কারাতের মাধ্যমে বেশ কয়েক পদ্ধতিতে কাউকে আঁকড়ে ধরা, আবদ্ধ করা, বাঁধা, আছাড় দেওয়া এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আঘাত শেখানো হয়। কারাতে অনুশীলনকারীকে ‘কারাতেকা (空手 家?)’ বলা হয়।
কারাতে শেখা হয়তো বা বেশ সহজ মনে হলেও, এর কৌশলগুলো রপ্ত করতে হলে প্রচুর পরিশ্রম ও সাধনার প্রয়োজন। তবুও বেসিক কিছু জিনিস জানা থাকলে একজন ‘কারাতেকা’ হয়ে ওঠার দিকে আপনি অন্যদের থেকে অন্তত এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারবেন। চলুন তাহলে, কারাতের বেসিক কয়েকটি জিনিস সম্পর্কে জেনে আসা যাক!
ধ্যান বা মেডিটেশন:
আমাদের মানবদেহের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কোনটি? অবশ্যই আমাদের মস্তিষ্ক! আমাদের সকল কাজই এই মস্তিষ্কের ইশারাতেই হয়ে থাকে৷ তাই আমাদের এই মস্তিষ্ককে সতেজ রাখা খুব জরুরি৷ আর মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখতে মেডিটেশনের জুড়ি মেলা ভার! কারাতের প্র্যাক্টিস শুরু করার আগে কমপক্ষে ৫ মিনিট মেডিটেট করতে হবে৷
প্রথমেই একটা নিস্তব্ধ কক্ষের সমতল জায়গায় আসন গ্রহণ করুন৷ এরপর মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসার পর চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলুন। পড়াশুনার ভাবনা, সিজিপিএর চিন্তা, দৈনন্দিন জীবনের ঝামেলা- এসব কিছু ভুলে যান। এমনভাবে ভুলে যান, যাতে চোখ বন্ধ করার পর মনে হবে, আপনি যেন একটা বদ্ধ কামরায় বসে আছেন৷ সেই কামরায় কিচ্ছু নেই, শুধু একটি অগ্নিগোলক ছাড়া৷ আস্তে আস্তে আপনার মনে হবে, অগ্নিগোলকটা আপনার চারপাশে ঘোরাফেরা করছে৷ এই গোলক হলো আপনার অন্তরের শক্তি ও তেজ, যা আপনি কারাতে শেখার মাধ্যমে অর্জন করতে চান৷ এই গোলকটা নিজের মধ্যে এমনভাবে পাকাপোক্ত করে রেখে দিতে হবে, যাতে চোখ খোলার পরেও তা আপনার সামনে থেকে না যায়৷ এরপর আস্তে আস্তে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়তে থাকুন। ১০ বার শ্বাস-প্রশ্বাসের এই প্রক্রিয়া চালানোর পর আস্তে আস্তে আপনার নিজেকে বেশ সতেজ ও প্রাণবন্ত মনে হবে৷
কারাতের পেছনের দর্শন
সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে, কারাতেকে অনেকেই শুধু মারামারি বা সহিংসতার এক প্রকার রূপ হিসেবে দেখে থাকেন। কিন্তু কারাতে হলো একধরনের নিখাদ খেলা ও আত্মরক্ষার কৌশল৷ শুধু আত্মরক্ষার কৌশল বলে থাকলে ভুল হবে, কারাতের মূল বিষয়ই হচ্ছে ‘শান্তি’।
স্ট্রেচিং:
শরীরকে একটু ঢিল ও নমনীয় করতে, প্র্যাক্টিস শুরু করার আগে স্ট্রেচিং করে নেওয়াটা বেশ জরুরি। বিশেষ করে পায়ের স্ট্রেচিং আপনাকে প্রায় সব ধরণের ইনজুরি থেকে রক্ষা করবে৷ মূলত ওয়ার্ম আপের পরেই স্ট্রেচিং পর্বটা শুরু হয়৷ কেননা আপনার মাংসপেশি যখন বেশ উষ্ণ থাকবে, তখনই আপনি ভালো মতন কারাতের প্র্যাক্টিস করতে পারবেন। কমপক্ষে ১৫ মিনিট স্ট্রেচিং করাই যথেষ্ট।
ঠিক থাকুক পায়ের পাতার অবস্থান
আপনার কিক, স্ট্রাইক, ব্লক- কোনোকিছুই কাজে দেবে না, যদি না আপনি আপনার পায়ের পাতার অবস্থান ঠিক রাখতে পারেন। যেমন: কেউ যদি ঠিকমতো ক্রিকেট ব্যাটই ধরতে না পারে, তাহলে সে কীসের ক্রিকেটার? ঠিক তেমনি, কেউ যদি তার পায়ের অবস্থান ঠিকমতো ধরে রাখতে না পারে, তাহলে সেও কখনোই একজন ভালো কারাতে খেলোয়াড় হতে পারবে না।
শরীর ওয়ার্ম আপ করুন
যেকোনো ব্যায়াম করার আগেই অন্তত ১০-২০ মিনিট ওয়ার্ম আপ করে নেওয়া জরুরি৷ ওয়ার্ম আপের কারণে আপনার শরীরের মাংসপেশিগুলো একটু শিথিল ও সচল হয়৷ ওয়ার্ম আপ না করেই প্র্যাক্টিস শুরু করে দিলে মাংসপেশিতে টান পড়ার সম্ভাবনা থাকে৷ তখন সাধারণ স্টেপগুলো করতেও বেশ কষ্ট হবে এবং দেখা যাবে, আপনি খুব দ্রুতই হাঁপিয়ে উঠছেন।
ওয়ার্ম আপের জন্য একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ১৫ মিনিটের মতন জোরে জোরে দৌড়াতে থাকুন৷ এরপর ৫ মিনিট পুশ আপ (কমপক্ষে ২০ বার) ও ৫ মিনিট সিট আপ, লেগ লিফটিং, রিভার্স পুশ আপ বা ক্রাঞ্চিংয়ের (কমপক্ষে ২০ বার) মাধ্যমে ওয়ার্ম আপ সেশন শেষ করুন।