চলতি মাসে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা

0

অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) বিদায় নেবে। তবে বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। চলতি মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতও হবে। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
চলতি মাসে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা
বৈঠকে সেপ্টেম্বর মাসে সংঘটিত আবহাওয়ার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনাকালে পরিলক্ষিত হয়, এ মাসে দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও দিন সংখ্যা পূর্বাভাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল।

এদিকে ভবিষ্যতে বৃষ্টির মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিপদ আসবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এম আমানত উল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘গতবার বৃষ্টি কম হয়েছে। এবার বেশি হয়েছে। এমন হতেই পারে। এটিকে অস্বাভাবিক কোনো কিছু মনে হচ্ছে না। তবে আগামী বর্ষা মৌসুমে বা পরের কয়েক বছর বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি হলেই বিপদ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এবার অক্টোবরের প্রথমার্ধে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে পারে। কিন্তু এর পরপরই কয়েকটি নিম্নচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। যার একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

অক্টোবর-নভেম্বর মাসকে ঘূর্ণিঝড় প্রবণ সময় বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের মতো ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছিল উল্লেখ করেন তিনি।

আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বরের পর দিনের ব্যাপ্তি কমে রাত বড় হয়। এ সময় সূর্য বঙ্গোপসাগরে লম্বভাবে কিরণ দেয়। আন্দামান সাগর বা এর আশপাশের অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপ জলীয় বাষ্পসহ শক্তিসঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে থাকে। কিন্তু সাগর উপকূলের কাছাকাছি সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপ শক্তি সঞ্চয় করতে পারে না। উপকূলে আঘাত হানার আগেই এ ধরনের নিম্নচাপ বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে যায়।

এবারের পুরো বর্ষাকালে ছিল মৌসুমি বায়ুর দাপট। জুন মাসে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের বিস্তৃত ঘটার পরপরই উত্তর বঙ্গোপসাগর সৃষ্টি হয়েছিল বেশ কয়েকটি নিম্নচাপ। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তাল হয়ে ওঠে বঙ্গোপসাগর। ৩০ মে কক্সবাজারের টেকনাফে ১৩৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’। এরপরও ছিল ‘মোরা’র প্রভাব। কিছুদিন পর স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে। বৃষ্টিকে ১৩ জুন চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড়ধসে নিহতের সংখ্যা ছিল শতাধিক। পরের মাস জুলাইয়ে অর্ধেক সময়ে বন্যা দেখা দেয় দেশের উত্তর পশ্চিম, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে।

সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে, যেটা স্বাভাবিকের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। আর বৃষ্টিপাতের দিনের সংখ্যা ৩০ দিন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এটি পরবর্তীতে পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেয় এবং ২০ সেপ্টেম্বর মৌসুমি বায়ুর অÿের সঙ্গে মিলিত হয়।

সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত ০১, ৯-১১ এবং ১৬-১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং রংপুর বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়। বৃষ্টিপাত, বৃষ্টিপাতের দিন সংখ্যা, মৌসুমি লঘুচাপ, কৃষি আবহাওয়া এবং দেশের নদ-নদীর অবস্থা পূর্বাভাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল।

প্রাপ্ত আবহাওয়া উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুম-লের বিভিন্ন স্ত্মরের বিশেস্নষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ু মডেল, এল নিনো/লা নিনা’র অবস্থার বিশেস্নষণ করে অক্টোবর মাসের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে পারে।’ এই মাসে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় স্বাভাবিক প্রবাহ থাকতে পারে।

কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই মাসে দেশের দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ৩-৪ মি. মি. এবং দৈনিক গড় সূর্য্য কিরণকাল ৫ দশমিক ৫ ঘণ্টা থেকে ৬ দশমিক ৫ ঘণ্টা থাকতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে