ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমুর্ষ একজন রুগির মৃত্যকে কেন্দ্র করে যে ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ হয়ে গেল, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে চুপ করে থাকার কোন সুযোগ নাই। ৫২ বছর বয়সী রুগি নওশাদ গতকাল সকালে যখন এই হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে ভর্তি হন, তখন থেকেই উনার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আজকে দুপুরে উনি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত সিনিয়র এবং জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অথচ উনি মারা যাবার সাথে সাথে উনার আত্মীয় পরিচয় দেয়া ৪ জন সন্ত্রাসী হামলা শুরু করে। প্রথমে ভাংচুর করা হয় হৃদরোগ বিভাগের রুগিদের রুম, যেখানে আরো অনেক মুমুর্ষ রুগি ভর্তি ছিল। আনসাররা বাধা দিতে গেলে তাদের পিটিয়ে বেহুশ করে ফেলা হয়। এরপর সেই চারজনই একই বিভাগের ক্লাসরুমে হামলা করে, যেখানে প্রফেসর ডাঃ ওয়াদুদ স্যার পোস্ট গ্রাজুয়েশন ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিচ্ছিলেন। চেয়ার, টেবিল, আলমারি, সব ভেঙ্গে চুরমার করা হয়। আলমারির ভাঙ্গা কাঁচ নিয়ে ডাক্তার উপর ঝাঁপিয়ে পরা হয়। একজন ডাক্তার ঠেকাতে গেলে তার দিকে চেয়ার ছুঁড়ে মারা হয়। যার আঘাতে তাঁর হাতের হাড় ভেঙ্গে যায়। সন্ত্রাসীরা এরপর হাসপাতালের পরিচালকের রুম ভাঙ্গতে উদ্যত হয়। ততক্ষণে হাসপাতালের অন্যান্য আনসার এবং ডাক্তাররা তাদের প্রতিহত করে। মারধোর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে আনসাররা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেয়। রুগির স্ত্রীর বক্তব্য এবং ছবিগুলো দেখলে ঘটনার কিছুটা হয়ত আঁচ করতে পারবেন। কিন্তু তার আগে আপনার চোখ আর মাথাকে নিরপেক্ষ বানাতে হবে। সেটা কি পারবেন?
সন্ত্রাসীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময় চিৎকার করে নিজেদের যে রাজনৈতিক নেতার কর্মি বলে উল্লেখ করেছে, ঘটনাক্রমে তিনি ডাক্তারদের একমাত্র জাতীয় সংগঠন বিএমএরও সভাপতি। তাই আশা করি উনি নিজের স্বচ্ছ ভাবমুর্তি রক্ষা করার জন্য হলেও অপরাধীদের শাস্তি দিতে আইন শৃংখলা বাহিনী এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের সহায়তা করবেন। উনার উপর আমাদের এই বিশ্বাসটুকু এখনো আছে। আমরা আশা করি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের অডিও/ভিডিও ফুটেজ এবং অন্যান্য প্রমাণাদি দেখে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। এটা কোন গ্রাম্য সালিসি না যে, স্রেফ মাফ চেয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে।
লেখক: ডা: জাহিদুর রহমান
(তারিখ – ২৯/১০/২০১৭)
ছবি কৃতজ্ঞতা : মারজুক আল তুহিন