ভালো ছাত্র, জিনিয়াস – এসমস্ত মন গড়া ভুয়া কথা এখনো ক্যানো যে প্রচলিত আছে আমি জানি না। আমি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ক্লাসে সেকেন্ড লাস্ট বয় ছিলাম। ক্লাস এইট থেকে নাইন ওঠার সময় অংকে ১০০ তে ১২, বিজ্ঞান এ ১৭/১০০ আর ইংরেজিতে ২৩/১০০ পাইছিলাম। আমার পরে যে ছেলেটা ছিলো সে অসুস্থতার জন্য পরীক্ষাই দিতে পারে নাই। নইলে আমি লাস্ট বয় ই হইতাম।
ক্যাডেট কলেজে খারাপ রেজাল্ট করার যে কি অপমান তা ভুক্তভোগীই জানে। আমার একার জন্য পুরো হাউজ এর overall result খারাপ হইলো। আমারে সিনিয়র রা আমাকে অনেক মারামারি করলো, বন্ধুরা টিটকারি দিলো। আর কলেজ কর্তৃপক্ষ বাইর না কইরা দিলেও তার চেয়েও বেশী অপমান করলো। আমারে Science Group না দিয়া জোর কইরা Arts Group এ দিয়া দিলো! আমার বাবা অইদিকে বলছেন Science নিয়া পড়তে। আমারো নিজের ইচ্ছা তাই। অপমানিত, rejected, dejected, isolated শাব্বির গেলো Vice Principal এর অফিস এ। কান্নাকাটি করলাম, হাতে পায়ে ধরলাম। কিন্তু আমারে Science দিবেই না। আমি Science এর যোগ্য ই না। কয়েকদিন এর কান্নাকাটি তে একটু মন গললো উনাদের। লিখিত মুচলেকা দিলাম আমারে Science দিলে SSC HSC তে অন্তত 1st Division পাবো!
লিখিত মুচলেকা!
এর পরের আবারো অপমান, টিটকারী। কত্তদিন যে বাথরুম এ, ছাদে, অন্ধকার এ রুমে কাঁদছি। ১৪ বছর বয়সের এক বাচ্চা ছেলের অপমান সহ্য করার কি ই বা ক্ষমতা?
আর পিঠ যখন দেয়ালে তখন আয়নার সামনে দাঁড়াইয়া একদিন ঠিক করলাম,না- আর না। এই অসম্ভব অপমানের জবাবটা দেয়ার সময় আসছে!
শুরু করলাম। সব কিছু ছাড়লাম। বন্ধু বান্ধব, টিভি সিনেমা, আত্নিয় স্বজন। সব কিছু। খালি বইয়ের পাতায়। কি আছে শালা এর মধ্যে? পাগল হইলাম শুধু অপমান টার উচিৎ শিক্ষা দেবার জন্য। বাংলার প্রশ্ন উত্তর তৈরী করলাম বিশ্বভারতী র বই ঘাটাঘাটি কইরা। অংকের পারমুটেশন/ কম্বিনেশন / ইন্টিগ্রেশন রিয়েল লাইফে কিভাবে কাজ করে তা জানার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইব্রেরির রেফারেন্স ঘাটলাম। ইংরেজি কবিতার কবির জীবনী আর লিখার criticism পরলাম শুধুমাত্র একটা উত্তর তৈরী করবার জন্য। ৪ বছর প্রতিদিনে ১৪-১৬ ঘন্টা খালি বই, রেফারেন্স, খাতা, – শুধুমাত্র অপমান এর জবাব দেবার জন্য। আমার খেয়াল আছে ঈদের দিন ছুটিতে শুধু নামাজ পড়তে বাইরে গেছি। সবার বাবা মা পড়তে বলে- আমার বাবা মা বলে “বাবা এইবার থাম”। আমার বন্ধুরা বলে “তুই তো কবরে”! আমি মনে মনে বলি “একটু দাঁড়া বাপ”!
৪ বছর।
শুধু HSC Syllabus ই শেষ করেছি ৭ বার! বিশ্বাস করার কোন প্রয়োজনই নাই। অবিশ্বাস করতে থাকেন।
১৯৮৬ সালের HSC পরীক্ষার ফল বের হইলো। ক্লাশের সেকেন্ড লাস্ট বয়, অংকে ১২ পাওয়া, অপমানিত হওয়া, Science না পাওয়া ছেলে!
পুরো বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় 1st Stand করলাম প্রায় ১৫০,০০০ ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে! President ডাকলো, টিভি ডাকলো, পত্রিকায় ছবি ছাপাইলো!
Sweet revenge!
এর পর আর পিছন ফিরে তাকাই নাই। আসো শালা কে আসবা সামনে?!
এই সব কিছুর মধ্যে একটা জিনিশ ই শিখলাম। খুবই important lesson learnt.
ভালো ছাত্র/ জিনিয়াস এ সব ভুং চুং মাত্র। Only frigging Hard Work is real. আসল কথা আমি কিছু সত্যিই পাইতে চাই কিনা। আমি অইটা পাইতে চাইসি, অইটা হইতে চাইছি আর পাই নাই বা হই নাই – এইটা এখন অসম্ভব! আমি যখন কোন কিছু চাইবো অইটা পাইতেই হবে আর পাবোই। না পাওয়া মানে আমি মন থেকেই চাই নাই।
বি সি এস এ ফার্স্ট হন নাই? – আপনি আসলে চান ই নাই।
ভালো ইউনিভারসিটি তে হন নাই? – আপনি আসলে চান ই নাই।
মিলিওন ডলার ব্যবসা নাই? – আপনি আসলে চান ই নাই।
আমরা শুধু success এর চেহারটা দেখেই অভ্যস্ত! এর পেছনে যে কান্না,যে ত্যাগ, সে শ্রম, যে কস্ট সেইটা দেখি না।
একটা কিছু পাইতে/ হইতে/ করতে চাইতেছেন? না পাইলে/ হইলে/ করলে সম্পূর্ণ আপনার চাওয়ার ই অনুপস্থিতিতা। ব্যাস।
রুটিন ফুটিন বাদ দ্যান। জীবনের মাইলস্টোন প্ল্যান করেন। তারপর go for it like frigging crazy. No option B. Failure is NOT accepted. Be successful or die trying.
সৃস্টিকর্তা আমাকে সৃস্টির শ্রেষ্ঠ জীব বানাইছেন। আমার চেয়ে ভালো জিনিষ বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডে নাই। আমি তো হারতে পারি না।
সৃস্টির শ্রেষ্ঠ জীব হারতে পারেই না।
এই পোস্টের উদ্দেশ্য অহংকার করা নয় অবশ্যই। উদ্দেশ্য আপনারা যারা নিজের ওপর এখোনো সন্দেহ প্রকাশ করছেন তাদের আংগুল তুলে ভুল ভেংগে দেয়া।
লেখকঃ Shabbir Ahsan