জাফর ইকবালের ওপর হামলা একটি ‘চক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই চক্রান্তকারীদের পৃষ্ঠপোষকতায় মদদ দিচ্ছে বিএনপি। কে ঘটনা ঘটিয়েছে, কারা কারা হামলাকারীকে দিয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে—বিষয়টি ইতিমধ্যে পরিষ্কার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আজ রোববার সকালে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা উপলক্ষে গুলিস্তানে লিফলেট বিতরণের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন। গতকাল শনিবার বিকেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান চলার সময় অধ্যাপক জাফর ইকবাল হামলার শিকার হন। পেছনে থাকা ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল নামের এক যুবক তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই হামলা চক্রান্ত, এটা সত্য। চক্রান্ত তাঁদের, যাঁদের বিএনপি পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। কে ঘটনা ঘটিয়েছে, কারা কারা তাঁকে দিয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে, এই বিষয়টি ইতিমধ্যে পরিষ্কার। এই বিষয় নিয়ে একথা-সেকথা বলে বিভ্রান্তি যারা সৃষ্টি করে, তাঁরা আজকে দেশের স্বার্থের পক্ষে কাজ করছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর নেপথ্যে যারা আছে, তাঁদেরও খুঁজে বের করা হচ্ছে। আক্রমণকারী যা স্বীকার করেছে, সেই আলোকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে নেপথ্যের কালপ্রিটরাও বেরিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে সরকার কোনো ছাড় দেবে না।’
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অধ্যাপক জাফর ইকবাল সবকিছুতে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অবিচল সৈনিক। তিনি বলেন, ‘হামলাকারী ধরা পড়েছে, কিন্তু এটাই হচ্ছে উদ্বেগের বিষয়। হামলাকারীর স্বীকারোক্তি শুনে আমরা বিস্মিত হয়েছি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা দেশের একটি অশুভ শক্তির অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অশুভ ইঙ্গিত। হামলাকারীর স্বীকারোক্তিতে যেটা আছে, হামলাকারী যাদের প্রতিনিধিত্ব করেন, তিনি নিজেই বলেছেন, জাফর ইকবাল ইসলামবিরোধী। কাদের আরও বলেন, ‘কিন্তু জাফর ইকবালের ইসলামবিরোধী কোনো ভূমিকা রেখেছেন বলে আমার জানা নেই। এমনকি দেশের কেউই এমন জানেন বলে আমার মনে হয় না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধ্যাপক জাফর ইকবালের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন এবং তিনি নিজেই তাঁর চিকিৎসার বিষয়টি তদারক করছেন। তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। এই হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। শুধু হামলাকারী ধরা পড়েছে, তা-ই না, এর নেপথ্যে একটি অশুভ শক্তি আছে। তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে যেন কোনো প্রকার গাফিলতির সুযোগ না থাকে—এ বিষয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এর আগেও অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে, যা সাম্প্রদায়িক শক্তি ঘটিয়েছে। আজকে আবারও সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গিবাদী শক্তি জাফর ইকবালের ওপর হামলা করে জানিয়ে দিচ্ছে, তাঁরা তলে তলে আরও অনেক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরা কিছুটা দুর্বল হলেও নিষ্ক্রিয় হয়নি। তিনি বলেন, তাঁরা এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে সক্রিয় আছেন এবং মাঝে মাঝে এঁরা এঁদের হিংস্র থাবা বিস্তার করছেন। এই ঘটনা ঘটিয়ে তাঁরা হয়তো জানিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা আরও বড় ধরনের ভয়াবহ হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাজেই এই পরিস্থিতিতে ৭ মার্চের জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে না। সরকার নিষ্ক্রিয় নেই, যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।