ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ‘গড়িমসি’

0
ডিআইজি মিজান

পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এক নারীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে বিয়ে করার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার এক মাসেও তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা কিছু বলতেও চাইছেন না। এর মধ্যে অভিযোগ তোলা নারীর সঙ্গে ডিআইজি মিজান আপসের চেষ্টা করছেন বলে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা আভাস পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ডিআইজি মিজান
মিজানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ প্রধানের হাতে জমা পড়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি। দুই দিন পরেই তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ শাখায় পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ডিআইজি মিজানের বিষয়ে কী সুপারিশ আছে, তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের সত্যতা কতটুকু-এ বিষয়েও পুলিশ সদর দপ্তর বা তদন্ত কমিটির সদস্য সবাই চুপ।

এক নারী অভিযোগ করেছেন, পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের কাছে তার বাসা থেকে তাকে কৌশলে গত বছরের জুলাই মাসে তুলে নিয়ে যান ডিআইজি মিজান। পরে বেইলি রোডের তার বাসায় নিয়ে তিন দিন আটকে রাখেন। এরপর বগুড়া থেকে তার মাকে ১৭ জুলাই ডেকে আনা হয় এবং ৫০ লাখ টাকা কাবিননামায় মিজানকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। পরে লালমাটিয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে তাকে স্ত্রী হিসেবে রাখেন মিজান। অথচ মিজান পূর্ব-বিবাহিত।

ওই নারী আরও জানান, কয়েক মাস কোনো সমস্যা না হলেও ফেসবুকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি ছবি তোলার পর ক্ষেপে যান মিজান। বাড়ি ভাঙচুরের একটি মামলায় তাকে গত ১২ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর মিথ্যা কাবিননামা তৈরির অভিযোগে আরেকটি মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়।

দুটি মামলায় জামিনে বেরিয়ে আসার পর পুলিশ কর্মকর্তা মিজানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন ওই নারী। জানুয়ারির শুরুতে পুলিশ সপ্তাহ শেষেই ব্যবস্থার ঘোষণা ছিল গত ৮ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ শুরুর আগেই বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। আর এ কারণে পুলিশ সপ্তাহে যোগ দেননি মিজান। পুলিশ সপ্তাহের সময় বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, পুলিশ সপ্তাহ শেষ হলেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আর ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মঈনুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শাহাবুদ্দিন কোরেশী এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন) হাবিবুর রহমানকে নিয়ে কমিটি করার কথাও জানানো হয়। এই কমিটি বেশ গোপনীয়তার সঙ্গে ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। আর দুই দিন পর এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।

দুই দিন পর প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ শাখায় পাঠানো হয়। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে জানতে পারেন গণমাধ্যমকর্মীরা। পুলিশ শাখা থেকে ওই তদন্ত প্রতিবেদন যায় আইন শাখায়, সেখান থেকেই মূলত সিদ্ধান্ত হবে ডিআইজি মিজানের কী শাস্তি হতে পারে। মিজানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, পুলিশ (২) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিষয়টি দেখছেন পুলিশ শাখা-১ এর যুগ্ম সচিব মো. হারুন অর রশীদ বিশ্বাস। আপনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ তবে হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের ফোনে বহুবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

পুলিশ শাখার একজন কর্মকর্তা এটা নিশ্চিত করেছেন প্রতিবেদনটি বর্তমানে আইন শাখায় আছে। তবে ওই শাখায় ঘুরে কারও মুখ খোলানো যায়নি। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও ডিআইজি মিজানের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি। ড তিনি বলেন, ‘ডিআইজি মিজানের ব্যাপারে বর্তমান তথ্য আমার জানা নেই।’ তার তদন্তের ফাইল আইন শাখায় রয়েছে সেটি কোন পর্যায়ে রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কিছুই জানা নেই।’

পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিআইজি মিজানের কর্মকাণ্ডকে ‘অসদাচরণ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।

আইজিপি প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান আর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এলেই বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা। ডিআইজি মিজানের সম্ভাব্য শাস্তি কী হতে পারে- এমন প্রশ্নে পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন অপরাধের সবচেয়ে বড় শাস্তি চাকরিচ্যুতি। আর সবচেয়ে কম তিরষ্কার। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ইনক্রিমেন্টও (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) বন্ধ হতে পারে।’

‘কিন্তু যে নারীকে নিয়ে এই অভিযোগ, তিনি যদি আপস মীমাংসা করে ফেলেন তাহলে তো কিছুই করার নেই।’ পুলিশ সদর দপ্তরের অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই নারী মিজান স্যারের সঙ্গে আপস করে ফেললে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’ বেশকিছু কারণে এই সন্দেহ হওয়ার বিষয়টিও বলেছেন ওই কর্মকর্তা। ভুক্তভোগী নারী মোহাম্মদপুরের বসিলা রোডের যে বাড়িটিতে থাকতেন সেখানে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার একটি মুঠোফোন নম্বর ছিল। ওই নম্বরে ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

তাহলে কি আপস হচ্ছে?-এমন প্রশ্ন ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এখানে পুলিশ সদর দপ্তরে যা অতি গোপনীয় দেখা হয়, সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনেকটাই ওপেন। সবচেয়ে ভাল হয় আপনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন।’

এ ব্যাপারে জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার জেষ্ঠ্য সহকারী সচিব আবু হাসনাত মো. মঈনুদ্দীনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি তিনি রিসিভ করেননি।