বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা মোহাম্মদ সাদের অংশগ্রহণ নিয়ে তাবলিগ জামাতের মধ্যকার বিরোধ ইস্যুতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে চায় না সরকার। ‘তাবলিগের মুরুব্বিরাই এর সমাধান করুক’ এমনটাই চায় সরকার।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘মাওলানা সাদের আগমন নিয়ে তাবলিগ জামাতে দুটি ধারা দেখা যাচ্ছে। এক অংশ চায় তিনি যেন ইজতেমায় অংশ নেন। অপর অংশ চায় যেকোনো মূল্যেই হোক তাঁর অংশগ্রহণ ঠেকাতে। এটি হচ্ছে তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা এ বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে চাই না। আমরা চাই তাবলিগ জামাতের মুরুব্বিরাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এর শান্তিপূর্ণ সমাধান করবেন।’
একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণই তাবলিগের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাবলিগ জামাতের ওপর সরকারের কোনো ধরনের কর্তৃত্ব নেই। তারপরও এ তাবলিগ জামাতের উদ্যোগ টঙ্গীতে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অংশগ্রহণে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এ ইজতেমার সঙ্গে দেশের ভাবমর্যাদা জড়িত। এ কারণেই আমরা চাই এ বিষয়টি নিয়ে যেন আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। মুরব্বিরা যেন নিজেরাই বসে এর সম্মানজনক সমাধান করেন।’
তাবলিগ জামায়াতের দিল্লি মারকাজের মুরুব্বি মাওলানা সাদের কিছু বক্তব্যকে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন আকিদা ও নীতি পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেই তাবলিগ জামাত দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে টঙ্গীতে অনুষ্ঠেয় ইজতেমায় মাওলানা সাদের আগমনের বিষয়ে দুই পক্ষই শক্ত অবস্থান নেয়। এতে পরিস্থিত আরো জটিল হয়ে পড়ে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাওলানা মোহাম্মদ সাদ তাবলিগ জামাতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন, এমন বক্তব্য দিয়ে আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের প্রধান পথে বিক্ষোভ-সমাবেশে অভিযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। তারা দাবি করে, মাওলানা সাদকে দিল্লিতে ফেরত পাঠাতে হবে।
বিক্ষোভ-সমাবেশ ও অবরোধের ফলে ওই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়তে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ যাত্রী ছাড়াও দেশের বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। অনেকে বাধ্য হয়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হয়।
বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভ করছে তাবলিগ জামাত ও কওমিপন্থীরা। এদের মধ্যে তাবলিগ জামাতের এক ইউনিটের নেতা মাওলানা লুকমান বলেন, ‘মাওলানা সাদকে আমরা বিশ্ব ইজতেমায় ঢুকতে দেব না। প্রয়োজনে আগুন জ্বলবে, তবুও আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে সরে যাব না।’
তাবলিগ জামাতের সৃষ্ট বিরোধকে দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত হিসেবে উল্লেখ করে ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নেয়। এর সঙ্গে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি জড়িত। তাবলিগ একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে টঙ্গীতে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এ সংগঠনে বিরোধ সৃষ্টির বিষয়টি দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত।’
বিমানবন্দরে সড়ক অবরোধ ও যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে ধর্ম সচিব বলেন, ‘মাওলানা সাদের আগমনে ক্ষুব্ধ হয়ে তাবলিগ জামাতের কর্মীরা বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে অন্য একটি মন্ত্রণালয়ের একজন সচিব মহোদয়ও আটকা পড়েন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে আমাকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করেন।’
ধর্ম সচিব বলেন, ‘তাবলিগ জামাত সরকারের কোনো অংশ নয়। এ সংগঠনের উপর সরকারের কোনো কর্তৃত্ব নেই। তারপরেও আমরা সবার কল্যাণের জন্যই এর সম্মানজনক সমাধান চাই। আর এর সমাধান তাবলিগের মুরুব্বিরাই নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করবেন, এটাও আমরা প্রত্যাশা করি।’