দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে নরেন্দ্র মোদি , এখন নিজেই ব্যাংক জালিয়াতি নিয়ে বিপাকে

0
নরেন্দ্র মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময়টা কি খারাপ যাচ্ছে? না হলে রাফায়েল-বিতর্ক না মিটতে সাড়ে ১১ হাজার কোটি রুপির ব্যাংক জালিয়াতির খবর মাথাচাড়া কেন দেবে? রাফায়েলের মতো এই দুর্নীতির ক্ষেত্রেও বিরোধীরা সরাসরি আঘাত হেনেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। কারণ, বিরোধীদের অভিযোগ, জালিয়াতির খবর জানানো চিঠি পাওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী দুই বছর ধরে কোনো ব্যবস্থা নেননি। যার দরুন এই জালিয়াতির প্রধান পান্ডাসহ অন্যরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পেরেছেন।
নরেন্দ্র মোদি
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে নরেন্দ্র মোদি ভারতেরয় এসেছেন, দেশ শাসনের চার বছরের মাথায় তাঁরই বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ মোদিকেও সতর্ক করে তুলেছে। প্রথম দফার ত্রিপুরা সফরে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে তীব্র আক্রমণ করা প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় দফায় তাই চুপ করে থেকেছেন। দেশের দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি একটি আক্রমণাত্মক কথাও তিনি বলেননি।

ব্যাংক জালিয়াতির পান্ডা নীরব মোদি আদতে গুজরাটের মানুষ। ৪৭ বছরের এই হীরার ব্যবসায়ী মুম্বাইয়ে ঘাঁটি গেড়ে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ১১ হাজার ২০০ কোটি রুপি জালিয়াতি করে এই বছরের ১ জানুয়ারি বিদেশ পালিয়ে গেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর স্ত্রী, ভাইসহ ব্যবসার অন্য চাঁইয়েরাও দেশত্যাগী হন। নিয়ম ভেঙে এই বিশাল অঙ্কের ঋণ নেওয়ার কাজে তাঁর সহায়ক ছিলেন ওই ব্যাংকেরই এক কর্তা। যিনি ইতিমধ্যে অবসর নিয়েছেন। ২০১১ সাল থেকে এই জালিয়াতি শুরু হলেও তা ধরা পড়তে কী করে সাত বছর সময় লাগল, বিস্ময় সেখানেও।

দেশত্যাগের পর সুইজারল্যান্ডের দাভোসে আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে নীরব মোদিও উপস্থিত ছিলেন। সেই ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর কংগ্রেস সরাসরি দুই মোদির মধ্যে যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছে। বিরোধীদের হাত শক্ত হয়েছে নীরবের একসময়ের এক ব্যবসায়ী সঙ্গীর চিঠিতে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এক চিঠি লিখে ওই ব্যবসায়ী এই জালিয়াতির বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু দুই বছরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জালিয়াতির আঁচ পেয়ে ঋণ বন্ধ করে দেয়। নীরব মোদিও সপরিবার ও সবান্ধব পালিয়ে যান।

জালিয়াতি করেও দেশত্যাগী হয়েছেন আইপিএল-খ্যাত ললিত মোদি। ললিতের সঙ্গে সখ্য ছিল বিজেপির রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের। এরপর জালিয়াতি করে দেশত্যাগী হন শিল্পপতি বিজয় মালিয়া। অভিযোগ, তাঁর দেশত্যাগেও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন শাসক দলের কেউ কেউ। কিন্তু কোনো অভিযোগই দাগ কাটতে পারেনি নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তিতে। এবার নীরব মোদির জালিয়াতি ও পিঠটান দেওয়ার পেছনে মোদি দায় এড়াতে পারছেন না, যেহেতু তাঁর মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল।

বিজেপির বিব্রত নেতারা বলছেন, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কেউ পার পাবেন না। কংগ্রেস কটাক্ষ করছে, কুশীলবেরাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকাও হাওয়া। ললিত মোদি, বিজয় মালিয়া কারও টিকিও ছোঁয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রেও যাবে না।
নীরব মোদি ও তাঁর সহযোগীদের আস্তানায় হানা দিয়ে গোয়েন্দারা ইতিমধ্যে ৫ হাজার ১০০ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে। কিন্তু তাতে সমালোচনা বন্ধ হচ্ছে না। যে প্রক্রিয়ায় এই জালিয়াতি, তাতে অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কোনো কোনো মহলের আশঙ্কা, ক্ষতির অঙ্ক আরও বাড়বে। তেমন হলে ভোটের বছরে মোদি সরকারের বিড়ম্বনাও বাড়বে।