যশোর জেলার একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুল হত্যাকাণ্ডের ২৩ বছরেও বিচার শেষ হয়নি। এ দীর্ঘসময়ে নানা জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতায় আটকে গেছে মামলার সব বিচারকাজ। এতে ক্ষুব্ধ সাইফুল আলম মুকুলের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ।
খুব দ্রুত প্রতিবন্ধকতা দূর করে মামলা সচল করা সম্ভব হতে পারে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইদ্রিস আলী।
তিনি গণমাধ্যমকে জানান, খুব তাড়াতাড়ি এ মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হবে। এরপরই রায়ের মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি হবে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল শহর থেকে বেজপাড়ার নিজ বাসভবনে যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। পরদিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন কারও নাম উল্লেখ না করে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
এক পর্যায়ে আইনি জটিলতার কারণে মামলার কার্যক্রম একদম থেমে যায়।ফলে, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি হাইকোর্ট থেকে বাতিল করে দেয়া হয়।
দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ থেকে মুকুল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর সিআইডি কর্মকর্তা মওলা বক্স নতুন দুজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দেন। ২০০৬ সালের ১৫ জুন যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (৩) এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (২) ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মুকুল হত্যা মামলার চার্জগঠন করা হয়। এ সময় মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামে আরেক আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ২০১০ সালে মামলার ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মুকুল হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আসামি ইত্তেফাকের সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। তিনি উচ্চ আদালতে যাওয়ায় ফের মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত ফারাজী আজমল হোসেনের অংশ বাদ রেখে ফের বিচার কার্যক্রম শুরু করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এম ইদ্রিস আলী গণমাধ্যমকে জানান, মুকুল হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব দ্রুতই এ হত্যা মামলার বিচার পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।
যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন জানান, ২৩ বছরেও মুকুল হত্যার বিচার না হওয়া কষ্টের। এতে হত্যাকারীরা উৎসাহী হবেন। সাংবাদিকদের মনোবল ভেঙে পড়বে। তাই আমি আশা করবো সরকার মুকুল হত্যার বিচারকাজ দ্রুত শুরু করবে।
অপরদিকে আজ পালিত হচ্ছে সাংবাদিক সাইফুল আলমের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে যশোর প্রেসক্লাব ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন বিভিন্ন কর্মসূচির পদক্ষেপ নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শোকর্যালি, শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিল।