নিথিয়া মেনন: অ্যান্টি-সোশ্যাল এক অভিনেত্রীর গল্প

0
নিথিয়া মেনন: অ্যান্টি-সোশ্যাল এক অভিনেত্রীর গল্প

দক্ষিণ ভারতের ফিল্মপাড়ায় নিথিয়া মেনন একটা শান্তির নাম। যেমন অভিনয় তেমন গ্ল্যামার। কোঁকড়া চুলে মন ভোলানো হাসিতে মাতিয়ে রাখেন সকলকে। ভক্তদের কাছে তারকারা খোলা তরবারির মতো উন্মুক্ত। তাদের ব্যক্তিজীবন, সেলুলয়েড লাইফ সবকিছুর খবর রাখে ভক্তরা। তারকারাও চান মানুষ জানুক। কিন্তু নিথিয়া এখানে আলাদা। পর্দার আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন তিনি।

২০১৫ সালের তামিল রোমান্টিক ক্লাসিক ফিল্ম ওকে কানমানি। পরিচালনায় কিংবদন্তি মনি রত্নম আর হিরো হিসেবে দুলকার সালমান। সেই ছবির নায়িকা ছিলেন নিথিয়া মেনন। তাকে তখন জিজ্ঞেস করা হয়, মনি রত্নমের কাছ থেকে কতটুকু শিখতে পারলেন? তার সোজাসাপ্টা জবাব, ‘আমি এখান থেকে কিছু শিখিনি। আমি মনি স্যারকে পছন্দ করি। সিনেমার সেটে আমি, দুলকার, মনি রত্নম একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করেছি। ওকে কানমানিতে আমার চরিত্র অত কঠিন ছিল না, যতটা কাঞ্চনা সিরিজের দ্বিতীয় ছবিতে আমার করা গঙ্গা চরিত্রটিতে ছিল। সেটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং একটা চরিত্র। আর প্রতিকূল অবস্থায় আপনি সবচেয়ে ভালোভাবে শিখতে পারবেন। কাঞ্চনা টুতে তার অভিনয় দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন চ্যালেঞ্জ তিনি নিতে পারেন জোরালোভাবে।’

নিথিয়া গান ভালবাসেন। গানের সাথে আত্মার সম্পর্ক যেন। কারো কাছে সেভাবে শেখা না হয়ে উঠলেও চমৎকার গলায় গাইতে পারেন। মেনন বলেন, আমি কারও জন্য বা কোথাও পারফর্ম করতে গান গাই না। গান গাইলে নিজের আত্মার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব। এটা আমি উপভোগ করি। যখন গান করি অন্যরকম শান্তি অনুভূত হয়।

তিনি উপভোগ করেন একা থাকতে। একাকীত্বের ব্যাপারে তেত্রিশ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর মতামত, ‘যে মানুষ একা থাকতে পারে না, একাকীত্ব উপভোগ করতে পারে না তার সমস্যা আছে। অবশ্য আজকাল মানুষ নিজের সাথে থাকতেই সবচাইতে বেশি অস্বস্তিতে ভোগে। অথচ আমি আমার একাকীত্ব উভোগ করি।’

রোমান্টিক ড্রামা সিনেমায় পরিচালকদের অন্যতম পছন্দের অভিনেত্রী নিথিয়া। ক্যারিয়ারে বড় বাজেটের ছবি নেই বললেই চলে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, নিথিয়া নিজেই চান না বড় বাজেটের ছবিতে অভিনয় করতে। চান না প্রতিশোধ, রাগ, হিংসার ছবি করতে। সিনেমার মাধ্যমে মানুষকে দিতে চান সামাজিকতার বার্তা। নিথিয়ার ভাষায়, বড় বাজেটে তৈরি হওয়া অধিকাংশ ছবিগুলোতে রাগ, প্রতিহিংসার বার্তা ছড়ানো থাকে। এমনকি এসব ছবি নিয়ে মিডিয়াও নেগেটিভিটি ছড়ায়। আমি চাই শান্ত ছবি করতে। হোক স্বল্প বাজেট, সেখানে ভরপুর আন্তরিকতা থাকবে।

যে নিথিয়াকে আমরা চিনি তার অভিনয়গুণে, একটা সময় সেই অভিনয়ই উপভোগ করতেন না তিনি। নাস্তিক পরিবারে বেড়ে ওঠা তার। ভীষণ খিটখিটে আর রগচটা স্বভাবের ছিলেন। ইচ্ছার বিরুদ্ধে করতেন যাবতীয় কাজ। সেসবের জন্য কখনও অনুতপ্ত হতেন না। ২০০৯ থেকে সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করলেও ভালো লাগত না তার। ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে শিখেন।

তিনি বরাবরই খুব অকপট। যা বলেন, সোজা সাপটা বলেন। কোনো লুকোছাপা নেই। আবার নিজের ব্যাপারে একান্ত কাছের মানুষ ছাড়া শেয়ার করেন না কিছু। এমনকি তিনি নেই সোশ্যাল মিডিয়াতেও। অনেকে তাঁকে অ্যান্টি-সোশ্যাল বলে। তা নিয়ে নিথিয়া মেননের ভাবনা নেই। অভিনয় মূখ্য তার কাছে। সিনেমাপ্রেমীদের কাছেও তাই। যে জিনিসকে ভালো না বেসেও উপহার দিয়েছেন চমৎকার একেকটি কাজ, এখন উপভোগের দিনগুলিতে ভক্তদের দিতে চান আরও সুন্দর ও অনবদ্য কাজ। প্রিয় তারকার কাছে ভক্তরাও এতটুকু প্রত্যাশা রাখতেই পারে। নিথিয়ার অভিনয় তাদের হতাশ করে না।