নিপাহ ভাইরাস একটি প্যারামিক্সোভাইরাস । ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়াতে সর্বপ্রথম নিপা ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে । সেখানকার পোষ্য কুকুর , বেড়াল , ঘোড়া এবং ছাগলের দেহে নিপা ভাইরাসের ব্যাপক উপস্হিতি পাওয়া যায় । গবেষণায় দেখা যায় মালয়েশিয়ার যেসব এলাকায় কৃষকরা শুয়োর পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের অধিকাংশই মস্তিষ্কে প্রদাহ ( এনকেফালাইটিস /encephalitis ) ও শ্বাসকষ্ট ( acute respiratory distress) নিয়ে খুব অল্প সময়েই মৃত্যুবরণ করছেন । বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হার তথ্য মতে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৭০ ভাগ । প্রথম দিকে জ্বর , তীব্র মাথা ব্যাথা এবং ঝিমুনি নিয়ে অধিকাংশ রোগী চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন , কিন্তু অতি দ্রুত তীব্র মস্তিষ্ক প্রদাহ ( এনকেফালাইটিস / encephalitis) এবং শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যায় রোগী মৃত্যু মুখে পতিত হন । এখন পর্যন্ত চিকিৎসকরা নিপাহ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেন নি । ২০০৪ সালে প্রথম বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয় । প্রায় ৩৩ জন রোগী নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন । ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৯টি মহামারি হয়েছে বাংলাদেশে। এসব মহামারিতে ১৫৩ জন লোক আক্রান্ত হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে ১১১ (৭৩%) জন মারা গিয়েছিল। সর্বশেষটি হয়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা লালমনিরহাটে ২০১১ সালের জানুয়ারির শেষে ও ফেব্রুয়ারির শুরুতে। সেই মহামারিতে ২০ জন লোক আক্রান্ত হয়েছিল এবং তাদের সবারই মৃত্যু হয়েছিল।
বাংলাদেশ এবং ভারতে মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। আমাদের দেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ সময়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয় এবং বাদুড় গাছে বাঁধা হাঁড়ি থেকে রস খাওয়ার সময় ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। সেই বাদুড় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং সেই রস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভাইরাস। আবার বরই জাতীয় খাবার যা বাদুর খেয়ে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখে, সেই বরই খেলে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে ভয়ানক তথ্য হলো-নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে এ রোগ।
নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষনঃ
নিপাহ ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ৮ থেকে ১২ দিন পর সাধারনতঃ রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। আবার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও ভাইরাসটি ৪ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে। জেনে নিন লক্ষন গুলো :
আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমত জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয় এবং সে মানসিকভাবে অস্থিরতায় ভোগে।
মন-মেজাজ সব সময় উত্তেজিত থাকে। মাঝে মাঝে খিচুনিও হতে পারে।
বমি বমি ভাব, পেশিতে ব্যথা, আলো সহ্য করতে না পারা।
ঘুম ঘুম ভাব, মাথা ঝিমঝিম করা, জাগ্রত/সচেতন অবস্থার পরিবর্তনসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যা হতে পারে।
নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য কোন টিকা নাই। যেহেতু সংক্রমিত খেজুরের রস ও বাদুরে খাওয়া ফলমূলের মাধ্যমে ভাইরাসগুলো মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে, তাই কাঁচা খেজুরের রস ও বাদুরে খাওয়া ফলমূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খেজুরের রস ভাল করে ফুটিয়ে নিলে নিপাহ ভাইরাস মরে যায়। তাই খেজুরের রস ভাল করে ফুটিয়ে খেতে হবে। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে সাবধান থাকতে হবে। ভাল করে ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিতে হবে।
সংকলন : ডা: আসিফ উর রহমান
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক , আইসিইউ এন্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার
এপোলো হসপিটাল ঢাকা