গুজরাট, রাজস্থান, ম্যধপ্রদেশ এবং হরিয়ানা সরকার তাদের রাজ্যে মহা বিতর্কিত ‘পদ্মাবত’ ছবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ‘পদ্মাবত’ থেকে ২৬টি দৃশ্য কর্তন এবং নাম পরিবর্তনের শর্ত মানার পরও চার রাজ্যের এমন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে শীর্ষ আদালতের দারস্থ হয় ছবিটির প্রযোজক সংস্থা। পরে আদালত রায় দেয় যে, সব রাজ্যেই মুক্তি দিতে হবে ‘পদ্মাবত’। এমনকী, এসব রাজ্যে যে সকল দর্শক ‘পদ্মাবত’ দেখতে হলে যাবেন, তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব নেবে পুলিশ।
এমন রায়ের পর আর্জি নিয়ে হাইকোর্টের যায় গুজরাট ও ম্যধপ্রদেশ সরকারও। তারা রায় পুনর্বিবেচনা করার জন্য হাইকোর্টের কাছে আর্জি জানায়। কিন্তু দুই রাজ্যের এই আর্জি মঙ্গলবার খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। উল্টো গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকারের ভূমিকাকে কটাক্ষ করে আদালত বলে, ‘তারা নিজেরাই সমস্যা তৈরি করে ‘পদ্মাবত’ ছবিকে নিষিদ্ধ করতে শীর্ষ আদালতে এসেছে। শীর্ষ আদালত এও বলে, ‘রায় মেনে সকল রাজ্যই যেন নির্দিষ্ট দিনে ‘পদ্মাবত’ মুক্তি দেয়।’
হাইকোর্টের এমন রায়ের পর নির্মাতা সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘পদ্মাবত’ ছবির মুক্তির সকল বাধাই কেটে যায়। কিন্তু তাতে খুশি হতে পারেনি গুজরাটের রাজপুত সেনারা। ‘পদ্মাবত’ মুক্তির পক্ষে হাইকোর্টের দেয়া শেষ রায়ের দিন পেরোতেই মঙ্গলবার রাত থেকে সেখানে তাণ্ডব চালায় রাজপুতরা। আহমেদাবাদে কমপক্ষে ২০০টি গাড়ি ও আটটি দোকান ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে তারা। আগুন দেয়া হয়েছে আরও কমপক্ষে ৫০টি যানবাহনে।
গুজরাটের যে পাঁচটি মাল্টিপ্লেক্স ‘পদ্মাবত’ মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল, অস্ত্র নিয়ে সেসব হলেও চালানো হয়েছে নানা তাণ্ডব। আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় সেসকল মাল্টিপ্লেক্সেও। মাল্টিপ্লেক্সগুলিতে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে বলে গুজরাট সরকার দাবি করলেও সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, কীভাবে নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। মাল্টিপ্লেক্সগুলির আগুন নেভাতে সেখানে ছুটে যায় আহমেদাবাদের দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা।
শহরের বিভিন্ন অংশেও যথেষ্ট হামলা চালানো হয়েছে। গুজরাটের স্যাটেলাইট গুলমোহর পার্ক মল ও ওয়াইড অ্যাঙ্গল, অ্যাক্রোপলিসের পিভিআর সিনেমা হল, গুরুকুল রোডের হিমালয়া মল এবং বস্ত্রপুরের আহমেদাবাদ ওয়ান মলে পাথর ছোড়া হয়। সেখানে অবস্থানরত যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। হিমালয়া মলের বাইরের আটটি দোকানেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেখানেই সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালানো হয় বলে ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে। হিমালয়া মল এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে ফাঁকা দুই রাউন্ড গুলিও চালাতে হয়।
উল্লেখ্য, শুরু থেকেই ‘পদ্মাবত’ ছবির বিরোধিতা করে আসছে গুজরাটের রাজপুত সেনারা। তাদের সঙ্গে ছিলেন করণি সেনারাও। বরাবরই তাদের অভিযোগ, ছবিতে ভারতের বহু বছরের পুরনো ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে এবং রাণী পদ্মিনীর চরিত্রকে খাটো করে দেখানো হয়েছে। ছবির এই বিতর্কিত চরিত্র ‘রাণী পদ্মাবতী’র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দীপিকা পাড়ুকোন। আরও আছেন রণবীর সিং ও শহিদ কাপুর। ২৫ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার মুক্তি পাচ্ছে বিতর্কিত এই ছবিটি।