প্রকাশিত হলো “বিলের জীবনঃ নমশূদ্রদের বারো মাসের তেরো পার্বণ”

0
নমশূদ্রদের বারো মাসের তেরো পার্বণ

আজ প্রকাশিত হলো “সুধাংশু শেখর বিশ্বাস” এর বহু বছরের পরিশ্রমের ফসল গবেষণা গ্রন্থ –
“বিলের জীবনঃ নমশূদ্রদের বারো মাসের তেরো পার্বণ”
প্রকাশক : নালন্দা
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
মূল্য : চারশো টাকা।
নমশূদ্রদের বারো মাসের তেরো পার্বণ
কালের প্রবাহে সময়ের সাথে বদলায় সমাজ, সভ্যতা। বদলে যায় অর্থনীতি। তার সাথে বদলে যায় গ্রামীন জীবন, সংস্কৃতি।

বিল এলাকার জনজীবনও আমূল বদলে গেছে মাত্র ষাট সত্তর বছরেই। একসময় বিল থাকতো কানায় কানায় ভরা। থৈ থৈ জলে ঢেউ খেলে বয়ে যেতো বাতাস। বাড়ির ঘাটে ঘাটে থাকতো নৌকা। ভরা বর্ষায় গ্রামগুলো ভাসতো দ্বীপের মতো। সেই বিল এলাকায় গ্রামের পর গ্রাম ছিল শুধুই নমশূদ্রদের বাস। লেখাপড়ার কোন বালাই ছিল না। অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর কুসংস্কারের গহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল তারা।

জীবন ছিল তাদের পুরোপুরি প্রকৃতি নির্ভর। বন্যা-খরা, অভাব-অনটন ছিল তাদের নিত্য সঙ্গী। কিন্তু সে সব খুব একটা স্পর্শ্ব করতো না। অফুরন্ত আমোদ ফুর্তির মধ্যেই দিন কাটাতো তারা। তারা কৃষিকাজ করত, ফসল ফলাত, জাল বুনতো, বিলে মাছ ধরতো। ভরা বর্ষায় নৌকা বাইতো, গলায় তুলতো ভাটিয়ালীর সুর। সন্ধ্যায় তুলসি তলায় প্রদীপ জ্বলত। খোল-করতালের সাথে রাতভর চলতো কীর্তন, দেহতত্ত্ব, কবি গান, যাত্রা, রামায়ন। এত সব বৈপরীত্য নিয়েই তখন কাটতো নমশূদ্রদের জীবন। এই রচনা সেই সময়ের নমশূদ্রদের জীবনধারা কেন্দ্রিক। তাদের সুখ-দুঃখ, আশা-স্বপ্ন, তাদের সংস্কৃতি, পূজা-পার্বন, উৎসব ইত্যাদির সাথে যুক্ত হয়েছে তাদের ইতিবৃত্ত, অতীত ইতিহাস, এই বঙ্গে তাদের আগমন, নম এর সাথে শূদ্র কিভাবে যুক্ত হয়েছে সেসব বিষয়।

আজ বদলে গেছে নমশূদ্রদের জীবন। বদলে গেছে বিল এলাকার সেই গ্রামীন চিত্র। নদীগুলোর পাড়জুড়ে উঁচু উঁচু বাঁধ এখন। বিলে এখন আর জল হয় না। আউশ-আমনের আবাদ হয় না আর। গোটা মাঠ জুড়ে এখন ইরি ধানের চাষ। ভটভট শব্দে চলে পাওয়ার টিলার, ডিপ টিউবওয়েল, শ্যালো মেশিন। বিলের ভিতর দিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা। সেই রাস্তায় চলে ভ্যান, রিকসা, টেম্পু, বাস, ট্রাক। কেরোসিনের টিমটিমে বাতির জায়গায় বাড়িতে বাড়িতে জ্বলে এখন উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক বাল্ব।

নমশূদ্ররা এখন আর হত দরিদ্র নয়। তারা এখন শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পদে কর্মরত। তারা এখন শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়র, উকিল, বিচারক, ব্যবসায়ী। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উচ্চপদে যারা আসীন, তাদের নব্বইভাগই নমশূদ্র। কিন্তু বৃটিশ আমলে বা পাকিস্তান আমলের প্রথমদিকে এই চিত্র ছিল সম্পুর্ণ বিপরীত।

একসময় বৈশাখ থেকে শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত সারা বছর ধরে নমশূদ্ররা পালন করতো হরেক রকম উৎসব। শত অভাব অনটনেও জীবন তাদের বয়ে চলতো অপার আনন্দধারায়। সময়ের সাথে সাথে ভৌগলিক আর অর্থনৈতিক পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে সেই জীবন ধারা। বদলে যাচ্ছে সংস্কৃতি, উৎসব পালনের ধারা।

বিস্মৃতির অতলে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে সারা বছর ধরে পালিত নমশূদ্রদের সেই সব উৎসব, আনন্দ, পাবন তথা সামগ্রিক জীবনধারা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার প্রয়াসে এই রচনা –
‘বিলের জীবনঃ নমশূদ্রদের বারো মাসের তের পাবন’

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে