ত্রিপুরার সর্বিক উন্নয়ন ও বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ চেয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় আগরতলার রবীন্দ্রশতবার্ষির্কী ভবনে আয়োজিত এক আলোচনা চক্রে বিপ্লব দেব বলেন, ‘ত্রিপুরার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সহায়তা করা এবং ট্রানশিপমেন্ট ও ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ায় এ রাজ্যের মানুষ বাংলাদেশ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। ত্রিপুরার পালাটানায় ৭২৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পিছনে শেখ হাসিনার অনেক অবদান রয়েছে। তাঁর অনুমতি প্রদানেই বাংলাদেশের সড়কপথ ও জলপথ ব্যবহার করেই ভারী যন্ত্রপাতি এরাজ্যে আনা হয়েছিল’।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের মা’য়ের মতো উল্লেখ করে বিপ্লব দেব আরো বলেন, ‘রাজ্যের বিজেপি সভাপতি হিসাবে এক বছর আগে যখন প্রথমবারের জন্য ঢাকা সফরে গিয়েছিলাম, তখন শেখ হাসিনাকে মা’য়ের মতো দেখেছিলাম এবং ত্রিপুরার প্রতি তাঁর যে ভালবাসা সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজের ছেলের মতো করেই আমায় আপ্যায়ণ করেছিলেন’। বিপ্লব দেব’এর অভিমত হাসিনার প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত আনুগত্য রয়েছে। তাঁর সেবাপরায়ণ মানসিকতাই তাঁকে ওই স্থানে বসিয়েছে।
বিপ্লব আরো জানান, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও প্রতিবেশি দেশের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে যাওয়ার আগেও বিপ্লবকে ফোন করে আশীর্বাদ করেন শেখ হাসিনা। ফোন করে বিপ্লব দেবকে বাংলাদেশ সফরে যাওয়ারও আমন্ত্রন জানান হাসিনা।
দুই দেশের মানুষের সম্পর্কে আন্তরিকতা প্রসঙ্গে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শুরু থেকেই দুই দেশের মানুষের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক ছিল। এখন এই সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ উভয়ই তাঁর কাছে বরাবর মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে জানান তিনি। তাঁর অভিমত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাথে অনেক আবেগ জড়িয়ে গেছে। এই আবেগ রয়ে যাবে’।
ভারত-বিরোধী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের কঠোর মনোভাবেরও প্রশংসা করেছেন বিপ্লব দেব। উত্তরপূর্বের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলিকে নির্মূল করতে শেখ হাসিনার সরকার প্রতিবেশি রাষ্ট্রসূলভ মনোভাবের পরিচয় বলে বর্ণনা করেছেন ত্রিপুরা মুখ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারও ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক, যোগাযোগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছে।
এদিনের আলোচনা চক্রে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার মহম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, ত্রিপুরার প্রখ্যাত সিনিয়র সাংবাদিক প্রদীপ দত্ত ভৌমিক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সকলেই মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও ত্রিপুরা রাজ্যের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
মহম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন ‘ত্রিপুরার মানুষ বাংলাদেশের প্রতি সবসময়ই নমনীয় ও আন্তরিক। ত্রিপুরার একটা বিশাল সংখ্যক মানুষকে প্রতি বছর ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর’এর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা যায়। আসলে ত্রিপুরার মানুষই সবসময়ই বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামের পিছনে রয়েছে’।
আলোচনা পর্ব শেষে দুই দেশের বিশিষ্ট শিল্পী সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।