প্রায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর একটি সাধারণ অভিযোগ থাকে পড়া মনে থাকে না নিয়ে। পড়াশোনা করতে হলে কম-বেশি সবাই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়। এটি নিয়ে হতাশায় ভুগেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল। আপনি যদি এদেরই একজন হয়ে থাকেন, তবে আজকের এই লেখাটি আপনার জন্য। চলুন, পড়া মনে রাখার কৌশলগুলো দেখে নেওয়া যাক:-
১: আপনি যেটি শিখছেন তা মন দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করুন। অনেকেই না বুঝে পড়েন। ফলশ্রতিতে অল্প সময়েই তা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বুঝে পড়লে মনে থাকার সম্ভাবনা ৯ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। আর এ মনোযোগ ধরে রাখতে লক্ষ্য স্থির করুন। বইয়ের কত পৃষ্ঠা থেকে কত পৃষ্ঠা পর্যন্ত কত সময়ের মধ্যে শেষ করবেন তা ঠিক করে নিন।
২: বিশ্রাম নিন। একটানা অনেকক্ষণ না পড়ে ৩০ মিনিট পড়ার পরে ৫ মিনিট এর বিশ্রাম নিন। এছাড়াও মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
৩: সারমর্ম তৈরি করুন। বড় কোনো অধ্যায়ের মূল সারমর্ম তৈরি করুন যেনো ঐ সারমর্মটি দেখলেই পুরো অধ্যায়টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এবার সারমর্মটি ছোট একটি কাগজে লিখে অধ্যায়টি বই এর যে পৃষ্ঠায় রয়েছে তার কোণায় পিন করে দিন। তাহলে মুখস্থ করা সহজ হয়ে যাবে। এছাড়াও কন্সেপ্ট ট্রি এর মাধ্যমে লিখতে পারেন। একটি গাছ অংকন করে পয়েন্টগুলো গাছের পাতার মধ্যে এঁকে ফেলুন। গাছটিকে একটি অধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এর প্রতিটি পাতায় অংশ গুলোর নিচে একটি করে সারমর্ম লিখে পড়লে পড়া মনে রাখতে সহজ হবে।
৪: গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো মুখস্থ করার চেষ্টা করুন। এছাড়াও বড় কোনো বাক্যকে একটি কিওয়ার্ডের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন, যেন ওই কিওয়ার্ডটি দেখলেই পুরো লাইনটি মনে পড়ে যায়। তাহলে, পরীক্ষার সময় ওই কিওয়ার্ডটি মনে করতে পারলে পুরো লাইনটিই আপনার মনে পড়ে যাবে।
৫: নিয়মিত রিপিট করুন। আজ যেটি পড়লেন সেটি পড়ার ৩০ মিনিট পর একবার, ১ দিন পর একবার, ১ সপ্তাহ পর একবার, ১ মাস পর আরেকবার-এভাবে রিপিট করতে থাকুন। বারবার রিপিট করার ফলে ব্রেইনের স্মৃতি তৈরির স্থানে গাঠনিক পরিবর্তন হয় যা লং টার্ম মেমোরি তৈরিতে সাহায্য করে।
৬. দুই দিন আগে বাসায় ডিনারে কি খেয়েছিলেন মনে নেই, কিন্তু ২ মাস আগে বন্ধুর সঙ্গে রেস্টুরেন্টে কি খেয়েছেন তা নিশ্চয়ই ভালো মনে আছে আপনার? এর কারণ বন্ধুর সঙ্গে খাওয়ার ঘটনায় আপনার ইমোশন জড়িয়ে আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের ইমোশনের সঙ্গে যা জড়িয়ে যায় তা আমাদের সহজেই মনে থাকে। সুতরাং পড়াটিকেও এভাবে ইমোশনের সঙ্গে জুড়িয়েই দেখুন না!
৭: যা মুখস্থ করতে চান, তা গল্পের আকারে সাজিয়ে তুলুন। যেমন, অনেক পয়েন্ট মুখস্থ করতে চাইলে সব পয়েন্ট ব্যবহার করে নিজের মত করে গল্প তৈরি করুন। পড়া মনে থাকতে বাধ্য।
৮: পড়া রেকর্ড করুন ও শুনুন। আপনার রেকর্ড করা পড়া প্রতিদিন শুধু শুনলেই কয়েকদিনের মধ্যে সহজেই মুখস্থ হয়ে যাবে। নিজের খালি গলার রেকর্ড শুনতে বিরক্ত লাগলে প্রয়োজনে হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যোগ করে দিতে পারেন।
৯: নিজের মাইন্ড পেলেস তৈরি করুন। অর্থাৎ আপনার পড়ার সঙ্গে আশেপাশের জিনিসপত্রের তুলনা করুন ও বারবার রিপিট করুন।
১০: আপনি এরইমধ্যে যা জানেন তার সঙ্গে নতুন শেখা শব্দের লিংক তৈরি করুন।
১১: ঘুমানোর আগে পড়ুন। এক রিসার্চে দেখা গেছে আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের স্মৃতিগুলো শর্ট টার্ম মেমোরি থেকে লং টার্ম মেমোরিতে রুপান্তর করে। সুতরাং ঘুমানোর আগে পড়লে তা সহজেই লং টার্ম মেমোরিতে চলে যায়। তাই কঠিন বিষয়গুলো রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেই পড়ুন।
১২: হেঁটে হেঁটে পড়ার চেষ্টা করুন। মনে থাকবে ভালো।
১৩: গান বা কবিতার মাধ্যমে পড়া মুখস্থ করার চেষ্টা করুন। কোনো গান যেমন বারবার শুনতে শুনতে আমাদের মুখস্থ হয়ে যায়, তেমনি কোনো পড়া গানের আকারে তৈরি করে নিয়মিত শুনলে তা আপনার মুখস্থ হয়ে যাবে।
উদাহরণস্বরুপ, সুকান্ত ভট্টাচার্য্য রচিত ‘১৮ বছর বয়স’ কবিতাটি মুখস্থ করতে ইউটিউব থেকে কবিতাটি থেকে বানানো গানটি শুনতে পারেন। কয়েকদিন শুনলেই কবিতাটি পুরোপুরি মুখস্থ হয়ে যাবে।
১৪: নিয়মিত ব্যায়াম করুন৷ কারণ ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিস্কে সিন্যাপসিসের সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে নতুন কোষ তৈরি হয়। এছাড়া পড়া শুরু করার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটুন। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গিয়েছে পড়ার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা প্রায় ১০ শতাংশ পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
১৫: ছড়া, ছন্দ বা টেকনিক তৈরি করে মনে রাখার চেষ্টা করুন। পড়া মনে রাখার এই কৌশল কে নিমনিক (mnemonic) বলা হয়। যেমন, মোগল শাসকদের নাম ক্রমানুযায়ী মনে রাখতে নিচের বাক্যটি মনে রাখুন:-
‘বাবার হইলো আবার জ্বর, সারিলো ঔষধে’- এখানে,
বাবার = বাবর;
হইলো = হুমায়ুন;
আবার = আকবর;
জ্বর = জাহাঙ্গীর;
সারিলো = শাহজাহান;
ঔষধে= আওরঙ্গজেব।
১৬: শেয়ার করুন। আজ আপনি যা পড়েছেন তা আগামীকাল অন্য কারো সঙ্গে শেয়ার করুন। এতে বিষয়টি আপনার মনে সহজেই গেঁথে যাবে।