নতুন রাষ্ট্র গঠনে সহায়তার জন্য ফিলিস্তিনকে ৫ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের নতুন তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের শান্তি আলোচনার যেকোনো প্রচেষ্টা এককভাবে না নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানানোর পর গত বুধবার এই ঘোষণা এল। ফিলিস্তিনের উন্নয়ন সহায়তা সমন্বয়বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক কমিটির জরুরি বৈঠক বুধবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই নতুন এই অর্থ-সহায়তার ঘোষণা আসে।
ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মঘেরিনি সাংবাদিকদের বলেন, ফিলিস্তিন নিয়ে যেকোনো ধরনের আলোচনার বিষয়বস্তু বহুপক্ষীয় হতে হবে এবং এতে সব পক্ষ ও সহযোগীর অবশ্যই অংশগ্রহণ থাকতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন বা অন্যজনকে বাদ রাখলে এই প্রক্রিয়া কাজে আসবে না। এটা বাস্তবসম্মতও হবে না। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বা যুক্তরাষ্ট্র একা চললে কিছুই হবে না। কাজেই একপক্ষীয় পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি আলোচনার পথ রুদ্ধ করবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মঘেরিনি বলেন, ‘সংঘাত নিরসনে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টি বুধবারের বৈঠকে তুলে ধরা হবে। আশা করছি, এটা বিশ্বাস ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে।’
বৈঠকে ইসরায়েল, মিসরের মন্ত্রীদের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের পদস্থ কর্মকর্তা অংশ নেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট দুই রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সমাধানের নীতি থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা দেওয়ার পর প্রথম এ রকম কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। বৈঠক শুরু হওয়ার পরই ইইউ ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন এ তহবিল ঘোষণা করে, যেটি তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাস্তবিক অর্থে সাহায্য করবে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএকে সহায়তা দেওয়ার জন্যও এই বৈঠক ডাকা হয়। ইউএনআরডব্লিউএর মোট অর্থের এক-তৃতীয়াংশ সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু চলতি বছরের জন্য দেশটির ঘোষিত সহায়তা ট্রাম্প প্রশাসন অর্ধেকে কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। এরপরই বড় ধরনের অর্থসংকটে পড়ে সংস্থাটি। এ অবস্থা কাটাতে সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, জার্মানি, রাশিয়া, কুয়েত, নেদারল্যান্ডস ও আয়ারল্যান্ড অর্থ-সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
এদিকে সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, ব্রাসেলসে ওই বৈঠকের পর আলোচনার বিষয় জানাতে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হন মঘেরিনি। এ সময় তিনি বলেন, এই তহবিল গঠনের লক্ষ্য হলো পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের উপস্থিতি সুসংহত করা। পাশাপাশি একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা করা।
ফিলিস্তিনিদের অর্থ সহায়তার বিষয়টি সমন্বয় করতে অ্যাডহক লিয়াজোঁ কমিটি (এএইচএলসি) ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কমিটি ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ, ইসরায়েল সরকার ও দাতাদের সঙ্গে আলোচনার পথ প্রশস্ত করে থাকে।
ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন। তবে চার বছর ধরে অচল শান্তি আলোচনা ফের শুরু করার জন্য ফিলিস্তিনের ওপর চাপ দিয়ে আসছে মার্কিন প্রশাসন। দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের আলোচ্যসূচিতে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু থাকলেও ফিলিস্তিনের উদ্দেশে ট্রাম্প হুমকির স্বরে বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় না বসলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তা কমানো হতে পারে।