জাবের রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সা. বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে তাকদির অনুযায়ী মৃত্যুর পর অধিকাংশ মৃত্যুই হবে বদ নজর লাগার কারণে’।(সহীহুল জামি)
বদনযর ইসলামে বিশুদ্ধতম ঈমানী আক্বিদার অংশ। কোরআন ও হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত। রাসুল সা. আরও বলেছেন, “যদি কোনও কিছু তাকদীরকে অতিক্রম করতে পারে তা হলো বদনযর।”(সহীহ মুসলিম)
তাকদির আল্লাহ্ মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই লিখে রেখেছেন। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় আছে যা পরিবর্তনশীল তাকদিরের অন্তর্গত। যেমন কখন কার মৃত্যু হবে, এটা পরিবর্তনশীল।
কিন্তু প্রত্যেকেই মরবে এটা অপরিবর্তনীয় তাকদির। যাই হোক সেরকম পরিবর্তনশীল তাকদীরে কিছু কিছু জিনিস এমন আছে, যা বদল আনতে পারে। যেমন দোয়া, বদনযর, স্বপ্নের তা’বীর।
বদনযর যেমন অসুস্থতার তৈরি করে সীমাহীন দুর্ভোগ আনতে পারে তেমনি মৃত্যুও ঘটতে পারে এর প্রভাবে। মৃত্যুর ব্যাপারে উম্মতের জন্য নির্ধারিত কারণের বাইরে বদনযরই সবচে’ বেশি কারণ হয়ে উঠবে।
যেমন জাবের রা. বলেন, রাসুল বলেছেন, “বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌঁছে দেয় এবং উটকে পাতিল (মানে রান্নার জন্য চুলায়) পর্যন্ত পৌঁছে দেয়”।(সহীহুল জামি)
বদ নযর দু ধরণের। একটা হচ্ছে, জ্বীনের দ্বারা, আরেকটা হচ্ছে মানুষের দ্বারা। ইবনে হাজার আসকালানী বদনযরের সংজ্ঞায় বলেন, কোন উত্তম বস্তুর প্রতি যখন মন্দ স্বভাবের কেউ হিংসার চোখে তাকায় আর এর ফলে সেই মানুষ বা প্রাণী অথবা অন্য কিছুর ক্ষতি সাধিত হয়, তখন তা বদ নযর।
অর্থাৎ, হিংসা, বিদ্বেষ ও প্রবল লোভপূর্ণ দৃষ্টির মাঝে এক ধরণের অদৃশ্য বিষ রয়েছে। কোনও কোনও হাদীসে বদ নযরকে আল-হামার অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায় এমন কিছু যাতে ‘প্রাণঘাতী বিষ’ (Lethal poison) আছে।
ইবনুল কাইয়্যুম রহ. আরও চমৎকার আলোচনা করেছেন। বদনযর যে কারো দ্বারা হতে পারে, ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছায়। তাছাড়া বদনযর মূলত অন্তরের প্রভাবে, তাই অন্ধ ব্যাক্তির দ্বারাও বদনযর হতে পারে।
উত্তম স্বভাবের কোনও ব্যাক্তির মুগ্ধতার নজরেও কখনো কখনো বদনজর পড়তে পারে। কিম্বা কিছু না দেখে কেবল বর্ণনা শোনার দ্বারা অনুপস্থিত ব্যাক্তি বা বস্তুর উপর বদনযরের প্রভাব পড়তে পারে। ফলত আমাদের সোশাল মিডিয়া বদনযরের আওতামুক্ত না।
সূরা ইউসুফে দেখা যায় ইয়াকুব আ. তাঁর সন্তানদের ব্যাপারে বদনযর নিয়ে বিচলিত হচ্ছিলেন! আর আমাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, একটা বড়ো অংশই আমরা বদনযরের ব্যাপারে সচেতন নই। আর এই জন্য এই অদৃশ্য রোগে মৃত্যুহার বেশি।
বদনযরের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে, রোগ হওয়া অথচ দীর্ঘদিনেও সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতিতে আরোগ্য না হওয়া। অহেতুক শারীরিক অবসাদ, ক্লান্তি, চেহারা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া এইসব। হাদিসে স্পষ্ট ভাবে বলা আছে, বদ নযরের চিকিৎসা হচ্ছে ঝাড়ফুঁক।
কার দ্বারা বদনযরে আক্রান্ত হয়েছে, জানতে পারলে তাকে ওযু করিয়ে সে পানি আক্রান্ত ব্যাক্তির গায়ে ঢেলে দিলে বদনযরের প্রভাব মুক্ত হবে, এটাও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
বদনযর কিম্বা যাই হোক, আল্লাহ্র ইচ্ছে ছাড়া কিছুই হয় না। এটাও এক ধরণের আজাব হিসেবেও ক্ষেত্র বিশেষ আসতে পারে। তাই গুনাহের ক্ষেত্রে তওবা করা, নামাজে যত্নশীল হওয়া জরুরি।
বদনযর থেকে বাঁচতে ফজর ও মাগরিবের পর আয়াতুল কুরসি, তিন কুলের (ইখলাস, ফালাক, নাস) আমল করবে। আক্রান্ত ব্যাক্তিদের এইসব পাঠ করে ফুঁ দিলেও আরোগ্য মিলবে। এই ব্যাপারে দোয়াও আছে হাদীসে।
নিজের দ্বারা অন্য কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাই সুন্দর জিনিস দেখলে বরকতের দোয়া করবে। আর অতি অবশ্যই আধুনিকতার নাম করে, বিজ্ঞানের বুলি তুলে বদনযর অস্বীকার করাটা যেন ঈমান আর জীবন দুইয়েরই নাশকারী না হয়, সেদিকে আমাদের সাবধান থাকা উচিত।
লেখকঃ আরজু আহমাদ