গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রতিইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বিইআরসি। ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর মাত্র কয়েক মাসের মাথায় বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি শিল্প খাত ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র। দেশীয় শিল্পকারখানা ধ্বংস করে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধের মাধ্যমে দেশকে বড় ধরনের বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। এই বৃদ্ধির ফলে দেশীয় শিল্প খাত মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম বলেন, চলতি বছরই দুদফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর আবারও দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সাধারণ মানুষ ও ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলবে। বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি সময়োপযোগী হয়নি বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ভবিষ্যতে বিভিন্ন নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ বা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তখন বিদ্যুতের ব্যয় এমনিতেই বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বর্তমানে কোনো ধরনের অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়াই বারবার মূল্যবৃদ্ধি সত্যিই হতাশাজনক। এ ছাড়া আমাদের দেশে জ্বালানি সংযোগের অভাবে অনেক কলকারখানা চালু হচ্ছে না। এর মধ্যে যদি দাম বৃদ্ধি পায়, তা হলে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহী হয়ে পড়বেন।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুতের দাম নিয়ে কয়েক দফা আমাদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বৈঠক হলেও সেখানে ব্যবসায়ীদের কোনো প্রস্তাবনা গ্রহণ না করেই দাম কার্যকর করা হয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় তৈরি পোশাকশিল্পে উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এতে রপ্তানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে। পোশাক খাতের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো তাই আরও সুযোগ পাবে। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সরকার তাদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে যখন, তখন আমাদের এখানে বিদ্যুতের বারবার মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, উদ্যোক্তারা বর্তমানে যে পোশাকগুলো উৎপাদন করছেন, সেগুলোর রপ্তানি আদেশ আগেই ঠিক করা আছে এবং রপ্তানি আদেশের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ীই উৎপাদন চলছে। তাই এখন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ কারণে বাতিল হয়ে যেতে পারে অনেক রপ্তানি আদেশ, যার প্রভাব পড়বে পুরো রপ্তানি খাতে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বিদ্যুতের সঙ্গে অন্য সব খাতও জড়িত। বিদ্যুতের দাম বাড়ালে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। তাই কোনোভাবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যৌক্তিক হয়নি।
সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি না করার জন্য ক্যাব বিইআরসির গনশুনানিতে অংশ নিয়েছে। যেভাবে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে, তাতে গনশুনানি মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। আমরা বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, আমাদের যে হারে উৎপাদন আছে, তাতে সরকার মূল্য কমাতে পারে। বিশেষ করে এ মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তাদের ওপর চাপ তৈরি করবে। এমনিতেই বছরের বিভিন্ন সময় অনেক কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।