আজ বৃহস্পতিবার অনেক প্রতীক্ষার পর রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা সাড়ে ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই উড়াল সড়কের উদ্বোধন করবেন।
ভিডিও কনফারেন্সের জন্য মৌচাক মোড়ে অস্থায়ী একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে সেখানে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজবাসীকে মগবাজার থেকে মৌচাক সড়কটি এড়িয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাঈদ খোকন।
সাঈদ খোকন বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা ব্যক্তি ও সংগঠনের লোকজন মৌচাকের অস্থায়ী মঞ্চে আসবেন। এতে যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন হতে পরে। তাই এই এলাকা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে বেলা দুইটার পর এই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
যাতায়াতে স্বস্তি ফিরবে
ডিএসসিসি’র মেয়র বলেন, এই উড়ালসড়কটি নির্মাণের সময় নাগরিকদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এখন উদ্বোধনের কারণে সেই কষ্ট লাগব হবে। অল্প সময়ে শান্তিনগর থেকে রামপুরা, রাজারবাগ থেকে নিউ ইস্কাটন, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে সাত রাস্তা ও কারওয়ান বাজার পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে। এ ছাড়া উড়ালসড়কের নিচের সব রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। এতে যাতায়াতে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরবে।
এই উড়ালসড়কটি তিন ভাগে করা হয়েছে। একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। এটা নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। গত বছরের মার্চ মাসে এই অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত উড়ালসড়কের এক দিক খুলে দেওয়া হয়। এই অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন। তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) মোড় থেকে কারওয়ান বাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় গত ১৭ মে। এই অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। এখন খুলে দেওয়ার অপেক্ষায় আছে উড়ালসড়কের মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশ। এটা নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।
২০১৩–তে শুরু, শেষ ২০১৭
উড়ালসড়কটির বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় নয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে কয়েক দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। প্রথমে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় গিয়ে পৌঁছেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা দিয়েছে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, চার লেনের এই উড়ালসড়ক ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে। এগুলো হলো সাতরাস্তা, বিএফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগ মোড়। এর মধ্যে মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজারে রেললাইন অতিক্রম করেছে এই উড়ালসড়ক প্রকল্প। মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশে গিয়ে দেখা যায়, উড়ালসড়কের ধোয়ামোছা, রং, বিদ্যুতের খুঁটি এবং বাতি লাগানোর কাজ শেষ। সড়কের দুই পাশের রেলিংয়ে বিভিন্ন রঙের কাপড় ও বাতি লাগানো হয়েছে। এর ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন রঙের পতাকা উড়ছে। উড়ালসড়কের প্রতিটি লেনে নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন। নিচের প্রতিটি সড়কও সংস্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে মৌচাক মোড়ের উত্তর-পশ্চিম অংশ (রামপুরা যাওয়ার রাস্তা) অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করছেন শ্রমিকেরা। এতে আশপাশের সব সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
চার বছর ধরে এই এলাকার রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি পর অবশেষে এই উড়ালসড়কটির উদ্বোধন হবে, তা ভাবতেই আনন্দ লাগছে বলে জানিয়েছেন শান্তিনগরের বাসিন্দা হারুনুর রশীদ। মৌচাক মোড়ে আলাপকালে তিনি বলেন, এই উড়ালসড়ক নির্মাণের কারণে আমাদের ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, যা কখনো ভোলার নয়। তবে উড়ালসড়কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় আমরা খুশি।
জানতে চাইলে এলজিইডি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও এই প্রকল্পের পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ইতিমধ্যে উড়ালসড়কের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার উদ্বোধনের পরপরই যান চলাচলের জন্য তা খুলে দেওয়া হবে।
প্রকল্পের অন্যতম ঠিকাদার তমা কনস্ট্রাকশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টা উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মৌচাক-মালিবাগ উড়ালসড়কটি দৈর্ঘ্যে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক (গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী)।