ব্লগার নিলয় নীল হত্যার দুই বছর পূর্তিতে সোমবার (৭ আগস্ট) বিকাল ৫টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক অবস্থান ও আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্লগার নিলয় নীলসহ সব মুক্তমনা লেখক হত্যার সঠিক বিচার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি তুলেছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা।এসময় অনুষ্ঠানটি আয়োজনে তাদের বাধা দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
‘মুক্তচিন্তা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে জনতা’র ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, প্রকাশক রবিন আহসান, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, লেখক অদিতি ফাল্গুনী, সংগঠক আকরামুল হক, নিলয় নীলের স্ত্রী আশা মনি, নিলয় নীলের বন্ধু সাগর হোসেন, অ্যাডভোকেট জান্নাতুল মরিয়ম তানিয়া, যুব ইউনিয়নের নেতা হাফিজ আদনান রিয়াদ, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লাকী আক্তার, সমাজকর্মী জাকিয়া শিশির, অ্যাকটিভিস্ট সনাতন উল্লাস, জামশেদ আনোয়ার তপন, জীবনানন্দ জয়ন্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন৷

এসময় অধ্যাপক এম এম আকাশ তার বক্তব্যে বলেন, ‘সভ্যসমাজে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সত্যের একচেটিয়া অধিকার দাবি করতে পারেন না। মতপ্রকাশের অধিকার সবারই আছে। প্রতিযোগিতামূলক মতামতের মাধ্যমেই সত্য আবিষ্কার করতে হয়। নিলয় নীলসহ সব মুক্তচিন্তকদের হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত। কোনো আইনকে এমন জবরদস্ত করা উচিত নয়, যাতে সত্যটা পালিয়ে যায়।’
এক বক্তব্যে রবিন আহসান বলেন,’২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ ঘটেছিল। কিছু গণমাধ্যম শাহবাগ আন্দোলনকে অন্যভাবে তুলে ধরতে শুরু করলেন। এরপর একের পর এক মুক্তচিন্তককে হত্যা করা শুরু হলো। সেই হত্যাকাগুলোর বিচার আজও হয়নি,পরিবার গুলো পায়নি সুবিচার। হত্যাকারীদের প্রকাশ্যে না এনে ক্রসফায়ারে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও অসাম্প্রদায়িকতার জন্য আরও খারাপ সময় আসছে। যারা সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে, তাদের বয়কট করতে হবে। যারা মুক্তচিন্তকদের বাঁচাতে চায়নি, তারাই আগামী দিনের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শত্রু।’
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া মুক্তচিন্তকদের কেউই দেশের মানুষের অমঙ্গল চাননি। তারা বৈষম্যহীন ও আলোকিত একটা সময় নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। মানুষের পক্ষে, আলোর পক্ষে লেখা চলবে। মুক্তচিন্তকদের খুন করে শারীরিকভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় করা যায়,নিশ্চিহ্ন করা যায় না।’
তারা বলেন,’অনেক ব্লগার ও লেখককে জীবন বাঁচানোর জন্য দেশান্তরী হতে হয়েছে। যে মুক্তচিন্তকরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, সেসব হত্যাকাণ্ডের বিচারই আমাদের দাবি, যতদ্রুত সম্ভব বিচার কার্যকর করতে হবে।’
বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকীকরণের চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘রাষ্ট্র মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। রাজনৈতিক হীনস্বার্থে মুক্তচিন্তকদের মধ্যে কৌশলে বিভাজন সৃষ্টি করছে। মুক্তচিন্তার আন্দোলন থামেনি, থামবে না।’
এসময় কর্মসূচিতে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান বক্তারা। এ কর্মসূচি যাতে বন্ধ রাখা হয় সেজন্য সোমবার (৭ আগস্ট) সকালে হুমকি পেয়েছেন বলে জানান আয়োজকরা। তারা অভিযোগ করেন, এ কর্মসূচি বন্ধের জন্য তাদের জবাই করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বক্তব্য শেষে মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে ব্লগার নিলয় নীলের (নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়) প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় কর্মসূচিটি শেষ হয়।