ভিটামিন-সি সংক্রান্ত সাধারণ তথ্য

0

->এটি পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন
->রাসায়নিক নাম ‘এসকরবিক এসিড’
->স্কার্ভি প্রতিরোধক ভিটামিন নামে বহুল পরিচিত।
ভিটামিন-সি

নামকরণ: প্রাচীনকালে দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় টাটকা ফল ও সবজির অভাবে নাবিকদের স্কার্ভি রোগ দেখা দিত। ১৭৫৩ সালে জেমস্ লিণ্ড সর্বপ্রথম কমলা লেবুর রসে স্কার্ভি প্রতিরোধক উপাদানের অস্তিত্বের তথ্য প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে বহু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর লেবুর রস হতে এই স্কার্ভি প্রতিরোধক উপাদানের নাম দেওয়া হয় ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিড।

প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য:
->সাদা, দানাদার।
->সহজেই পানিতে দ্রবীভূত হয়।
->অস্থিতিশীল। তাপ,আলো,বাতাস,ক্ষার ও ধাতবের সংস্পর্শে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়।
->শক্তিশালী বিজারক পদার্থ।
->মানুষ,বাঁদড়,গিনিপিগ প্রভৃতি প্রাণীর দেহে ভিটামিন সি তৈরি হতে পারে না বলে খাদ্য হতে সরবরাহের প্রয়োজন হয়।
->দেহে সঞ্চিত হয় না,তবে সব কোষকলাতে উপস্থিত থাকে।

প্রাণ রাসায়নিক ভূমিকা: সংযোজক কলার প্রধান গঠনকারী প্রোটিন হলো কলাজেন,যা অস্থি,দাঁত,কার্টিলেজ,ত্বকে থাকে।ভিটামিন সি এর অভাবে কলাজেন সংশ্লেষণ ক্রূটিপূর্ণ হয়,ফলে অস্থি ও দাঁতের সংযোজক কলা দূর্বল ও ক্যাপিলারিসগুলো দূর্বল ও সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত হয়। ফলে ক্যাপিলারি রক্তপাত হয়,দাঁতের মাড়ি স্পঞ্জের মতো ফুলে ওঠে,রক্ত পড়ে এবং প্রকট অবস্থায় দাঁত পড়ে যায়। এগুলো ভিটামিন সি এর অভাবজনিত রোগ স্কার্ভিতে দেখা দেয়।

এছাড়াও কার্নিটিন সংশ্লেষণ,নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষণ,হরমোন সক্রিয়করণে,হিমোগ্লোবিনে লৌহ সংযোজন,পরিবহনে ভিটামিন সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অভাব: ভিটামিন সি এর অভাবে দেহের সংযোজক পেশী,কলা ও রক্তনালী বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সংযোজক প্রোটিন কলাজেনের গঠন ঠিকমত হয়না।ফলে পেশী দূর্বল হয়, হাড় ও পেশীর সংযোজন নরম হয়।সামান্য আঘাতে রক্তনালীর প্রাচীর হতে সহজেই রক্তক্ষরণ হয়।এতে দেহের বিভিন্ন স্হানে কালশিটে দাগ পড়ে।ছোট শিশুদের হাটুর গিড়ায় রক্তক্ষরণ হয়ে ফুলে ওঠে ও ব্যথা হয়।এর অভাব তীব্র হলে স্কার্ভি রোগ হয়।

স্কার্ভি রোগের বৈশিষ্ট্য গুলো হল:
->দাঁতের মাড়ি স্পঞ্জের মত ফুলে, রক্ত পড়ে।দাঁতের গোড়া হালকা হয়ে দাঁত অকালে পড়ে যায়।
->চামড়া খসখসে হয়,চুলকায়।লোমকূপের গোড়ায় রক্তক্ষরণের ফোটা ফোটা দাগ পড়ে।
->দেহের বিভিন্ন স্হানে ব্যথা অনুভূত হয়।অস্থিসন্ধি ফুলে ওঠে,শিশুদের হাড় দূর্বল হয়।
->অন্ত্র হতে লৌহের পরিশোষণ ও রক্ত গঠনে ফলিক এসিডের ব্যবহার যথাযথ না বলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় দেরিতে, ক্ষত নিরাময়,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া প্রভৃতি ভিটামিন সি এর অভাবে দেখা দেয়।

খাদ্য উৎস: আমলকি,পেয়ারা,কমলালেবু,কুল,কামরাঙা,আমড়া, আনারস,জাম্বুরা,লেবু এগুলোতে প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়।গাছের বাড়ন্ত ফল,ডগা,পাতা,বীজের অঙ্কুরে সি বেশি পরিমাণে থাকে।

শুকনো ফল ও বীচিতে এই ভিটামিন থাকেনা।টিনজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যেও এই ভিটামিন থাকেনা।

চাহিদা: দৈনিক কমপক্ষে ১০ মি.গ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করলে স্কার্ভি প্রতিরোধ করা যায়।জ্বরে ও অসুস্থতায়, শরীর পুড়ে গেলে,বাড়ন্ত বয়সে এর চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক (৪৫-৫০)মি.গ্রাম,শিশুদের জন্য (২০-৩৫)মি.গ্রাম এবং ১৫বছরের উপরে ৪৫মি.গ্রাম ধার্য করা হয়েছে।গর্ভাবস্থায় ও প্রসূতিকালে (৭০-৮০)মি.গ্রাম চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে।

লেখা: সাবরিনা ফারিন প্রত্যাশা

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে