ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণ : তামিলদের অধিকার আদায়ে আত্মদানকারী এক কিংবদন্তী

0
ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণ

২০০৯ সালের ১৯ মে, শ্রীলংকান সেনাবাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন LTTE ( Liberation Tigers of Tamil Eelam বা সংক্ষেপে তামিল টাইগার্স) এর প্রতিষ্ঠাতা ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণ । তাঁর মাথার খুলিতে বুলেটের আঘাতের গভীর ক্ষত পাওয়া যায় । প্রভাকরণের মৃত্যুর সাথে সাথে নিভে যায় শ্রীলংকান তামিলদের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন । শ্রীলংকান সেনাবাহিনী ভিল্লুপিল্লাইকে হত্যা করার দিনটি গৌরবের সাথে উদযাপন করলেও সংখ্যালঘু তামিলদের কাছে দিনটি ছিলো অভিভাবক বা পিতা হারানোর শোকে মূহ্যমান একটি দিন । ২০০৯ সালের ১৯ মে অবসান হয় ২৬ বছরের রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের । ইতিহাসের এটাই ছিলো একমাত্র গৃহযুদ্ধ যার প্রভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন ভারত এবং শ্রীলংকার সরকার প্রধান ।

প্রভাকরণ
ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণ

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকা। আয়তন ২৫,৩৩২ বর্গমাইল বা ৬৫,৬১০ বর্গ কিমি । আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১২১ তম দেশ। আয়তনে ছোটো হলেও দেশটিতে ৯ টি প্রদেশ রয়েছে। প্রদেশগুলোর আবার রয়েছে আলাদা সরকার। জেলা মাত্র ২৫ টি। ১৯৪৮ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে সিলন(Ceylon) নাম নিয়ে। ১৯৭২ সালে এর নতুন নামকরণ করা হয় শ্রীলংকা (Democratic Socialist Republic of Sri Lanka )। বর্তমান লোক সংখ্যা ২১.২ মিলিয়ন (বিশ্বব্যাংক, ২০১৬)। প্রধান ভাষা সিনহালা, তামিল ও ইংরেজি। প্রধান ধর্মীয় জনগোষ্ঠী হচ্ছে- বৌদ্ধ ৬৯.১%, হিন্দু, ৭.১%, মুসলিম ৭.৬% ও খৃস্টান ৬.২% অন্যান্য ১০% । শিক্ষার হার ৯০.৭%। ব্রিটিশ শাসনাধীন শ্রীলংকার মোট জনসংখ্যার ৬০-৮০ শতাংশ মানুষের ভাষা ছিলো সিংহলীজ আর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ লোকের ভাষা ছিলো তামিল । দেশটির উত্তর পূর্বাংশে বাস করতো তামিল ভাষাভাষী মানুষ আর দক্ষিণ মধ্যভাগে বাস করতো সিংহলীজ ভাষাভাষীরা ।

১৯৫৬ সালে শ্রীলংকা সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সিংহলীজ ভাষাকে অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে সংখ্যালঘু তামিলরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্হ হয় , তারা চাকুরী হারাতে শুরু করে । অথচ ব্রিটিশ শাসনামলে তামিলরা ছিলো শিক্ষা , প্রশাসন ও দাপ্তরিক কাজে বেশ অগ্রসর। সরকারী চাকুরীতে একক আধিপত্য ছিলো কেবল তামিলদেরই ! তামিল ভাষাভাষীরা মূলত ছিলো হিন্দু ধর্মাবলম্বী । ১৯৫৬ সালে শ্রীলংকা সরকারের এই বৈষম্যমূলক আচরণ তামিলদের মনে গভীর ক্ষতের জন্ম দেয় , সে সময় সরকার অনেকটা আক্রোশের বশবর্তী হয়ে প্রায় সকল তামিল মিডিয়াকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করে । তামিলদের শিক্ষাব্যবস্হায় কোটা আরপের ফলে তামিলরা শিক্ষায় পিছিয়ে যেতে থাকে । ১৯৫৬, ১৯৫৮ সালে বড় ধরণের জাতিগত দাঙ্গার মুখোমুখি হয় শ্রীলংকা । সরকারের এসব সিদ্ধান্ত তামিলদের ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং এর ফলশ্রুতিতে ১৯৭৫ সালের ৫ ই মে গঠিত হয় LTTE , সংক্ষেপে তাদের বলা হতো তামিল টাইগার্স । তামিল টাইগার্স ছিলো অত্যন্ত সুসংগঠিত একটি সংগঠন যার নেতৃত্বে ছিলো ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণ এবং প্রভাকরণ ফরাসী বিপ্লবের নায়ক নেপোলিয়নের আদর্শে প্রভাবিত ছিলো । তামিল টাইগারদের লক্ষ্য ছিলো স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা । তাদের ছিলো নিজস্ব সেনা , নৌ এবং বিমান বাহিনীও ! LTTE ছিল একমাত্র গেরিলা সংগঠন যাদের বিমান বাহিনীও ছিল।  LTTE সেনাসদস্য এবং কর্মকর্তাদের নিজস্ব রেংক নির্ধারিত ছিলো । এলটিটিইর একটি আলাদা রাষ্ট্রীয় কাঠামো ছিল। ছিল জাতীয় পতাকা, বিচার বিভাগ, ব্যাংক সব। মুলত শ্রীলংকার উত্তরাঞ্চলে দ্বৈত শাসন চলত। একদিকে সরকারী শাসন। অন্যদিকে এলটিটিই র শাসন।

সবুজ চিহ্নিত এলাকাগুলো নিয়ে তামিল রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন ছিল তামিল টাইগারদের। হলুদ চিহ্নিত অঞ্চলে হয় শেষ যুদ্ধ এবং পরাজিত হয় LTTE

১৯৮৩ সালে ২৩ শে জুলাই তামিল টাইগার্সদের শ্রীলংকান সেনাবাহিনীর উপর সরাসরি আক্রমনে ৫ সেনা কর্মকর্তা ও ৩৩ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় । ফলশ্রুতিতে জাতিগত দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে , যেই দাঙ্গায় প্রায় তিন হাজার নিরীহ তামিল নাগরিক মারা যায় । ফলশ্রুতিতে সরকার বিদ্বেষী মনোভাব ছড়িয়ে পড়ে প্রত্যন্ত তামিল এলাকাগুলোতেও । হাজার হাজার তামিল নারী পুরুষ যোগ দেয় LTTE তে । ঠিক এসময়ই ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণ তামিল মানুষকে উজ্জীবিত করতে পেরেছিলেন। শোনা যায়, কোন পরিবারে যদি ২ টি সন্তান থাকে একটি সন্তানকে এলটিটিইতে পাঠানো বাধ্যতামূলক ছিল। নাবালক যোদ্ধার সংখ্যা তাই ছিল প্রচুর। কেউ না কেউ যুগ্ধে মারা পড়ত। ফলে বংশানুক্রমে সরকারের প্রতি একটি ঘৃণা জাগিয়ে রাখার চেষ্টা ছিল প্রভাকরণের। এ কাজে তিনি শতভাগ সফল হয়েছিলেন।

এসময় শ্রীলংকাকে অস্হিতিশীল করার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সুযোগের সদ্ব্যবহার করে । ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্হা RAW ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সরাসরি তামিলদের অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে । ১৯৮৪ সালে LTTE সমমনা অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপ গুলো নিয়ে গঠন করে Eelam National Liberation Front . তামিলদের অর্থায়নের অন্যতম উৎস ছিলো প্রবাসী তামিল এবং ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার এবং জনগণ ।

বহুমাত্রিক তামিল টাইগার বাহিনীতে পুরুষদের পাশাপাশি ছিল অসীম সাহসী নারীরাও। কমান্ডোদের সাথে প্রভাকরণ ও তার স্ত্রী (মাঝে)

মজার বিষয় হচ্ছে – তামিল যোদ্ধারা ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেও তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর শ্রীলংকায় প্রবেশের ঘোর বিরোধী ছিলো । ১৯৮৭ সালে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এবং শ্রীলংকান প্রধানমন্ত্রী জয়াবর্ধনের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । চুক্তির ১৩ টি শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিলো – তামিল এলাকাগুলো একত্রীত করে স্বায়ত্বশাসন প্রদান , তামিল ভাষাকে স্বীকৃতি প্রদান , রাজ্য সরকারের ক্ষমতায়ন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর শ্রীলংকায় প্রবেশ । ভারতের গোয়েন্দা সংস্হা RAW ভারত সরকারকে নিশ্চিত করে যে , LTTE প্রধান ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণ ভারতীয় সেনাবাহিনীর শ্রীলংকায় প্রবেশে মারাত্মক ক্ষুব্ধ হয়েছেন । ভারত এবার অন্য চাল চালে ! তারা ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত অপারেশন পাওয়ান পরিচালনা করে । এসময় তামিল যোদ্ধারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ শহর জাফনার নিয়ন্ত্রণ হারায় ঠিকই কিন্তু গেরিলা আক্রমণ চালাতে থাকে অবিরাম । তিন বছরে ভারত তাদের প্রায় এক হাজার সৈন্য হারায় LTTE র সাথে সম্মুখযুদ্ধে । একই সাথে শ্রীলংকাতেও ভারত বিদ্বেষী জনমত তৈরি হতে দেখে ভারত সরকার ১৯৯০ সালে সৈন্য বাহিনী সরিয়ে নিয়ে যায় । ভারত তার সৈন্য বাহিনী সরিয়ে নিলেও LTTE চূড়ান্ত প্রতিশোধ নেবার প্রতিজ্ঞা করে এবং তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৯১ সালের ২১ শে মে তামিলনাড়ু রাজ্যে এক নির্বাচনী জনসভায় এক তামিল আত্মঘাতী নারী হামলা কারী ফুলের মালার মধ্যে লুকানো বোমার বিস্ফোরন ঘটিয়ে হত্যা করে রাজীব গান্ধীকে । রাজীব গান্ধী হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৯৯৩ সালে মে দিবসে শ্রীলংকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রেমাদাসাকেও আত্মঘাতী এক তামিল হামলাকারী হত্যা করে । ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মিছিল LTTE হামলা চালালেও প্রাণে বেঁচে যান সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যাডাম চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা। তবে তার ডান চোখটি অকেজো হয়ে যায়। একই দিনে আরেকটি নির্বাচনী র‍্যালীতে হামলা চালালে ৩৮ জন নিহত হন তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল লাকি আলাগামা নামের সাবেক এক জন সেনাপ্রধানও ছিলেন। তামিল জাতি থেকে আগত এক জন সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত পররাষ্ট্র মন্ত্রী লাক্সমান কাদিরগামারকে ২০০৫ সালের ১২ আগস্ট তার বাসভবনে গুলি করে হত্যা করে LTTE কমান্ডোরা !

পরবর্তীতে শ্রীলংকান সরকার বাধ্য হয়ে LTTE কে শান্তির প্রস্তাব দিলে LTTE তা প্রত্যাখ্যান করে এবং বিশাল জনগোষ্ঠীকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে । ২০০১ সালে LTTE কলম্বোর বিমান বন্দরে আক্রমন করলে বহু প্রাণহানী ঘটে এবং পর্যটন শিল্প হুমকীর মুখে পড়ে । ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নরওয়ে সরকারের প্রচেষ্টায় LTTE এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয় । তামিল বিদ্রোহীরা রাজ্য সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির দাবী তুলে এবং সরকার প্রত্যাখ্যান করলে শান্তি আলোচনা বন্ধ হয়ে যায় । দূর্ভাগ্যজনক ভাবে ২০০৪ সালে LTTE র পূর্বাংশের বিভাগীয় কমান্ডার করোনা সৈন্যসহ সরকার পক্ষে যোগ দেয়ায় তামিল টাইগার্সদের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন দেখা দেয় ।

২০০৫ সাল পর্যন্ত এলটিটিইর ছিল কেবলই শুভ দিন। তারা ক্রমাগত ভাবে দখল করে চলছিল এলাকার পর এলাকা। সরকারী বাহিনী তেমন কিছুই করতে পারছিলো না। পুরো উত্তরাঞ্চীলয় প্রদেশ আর পূর্বাঞ্চলী প্রদেশের প্রায় সব এলাকাই তখন এলটিটিইর দখলে। তাদের সেই জয়-যাত্রা অব্যাহত থাকলে রাজধানী কলম্বো দখল করতে তাদের খুব বেশী সময় লাগত না। এরই মাঝে ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিজয়ী হন  মাহিন্দা রাজাপাকসে। এই নেতা জয়ী হয়েই শুরু করেন তামিল বিদ্রোহী বিরোধী অভিযান । তার অভিযান ছিল দ্বিমুখী। দেশের বাইরে কুটনীতি আর দেশের ভেতরে পরিকল্পিত হামলা।

প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসার সব চেয়ে বড় সাফল্য কুটনীতিতে । তিনি সারা বিশ্বকে বুঝাতে সক্ষম হন যে LTTE একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠন। ফলে LTTE বর্হিবিশ্বে তার সমর্থন হারায়। প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যা করার পর ভারতের কোনো প্রকার সহযোগিতা আশা করা ছিল LTTE র জন্য এক দুরাশা। ফলে মাহিন্দা রাজাপাকসা যখন মহাপরিক্ল্পনা নিয়ে আক্রমণ করেন তখন এলটিটিই কেবলই পিছু হটতে থাকে । তুখোর নেতা রাজাপাকসা সিনহাল, তামিল আর ইংরেজিতে একটানা বক্তব্য রাখতে পারেন। তিনি একজন দূরদর্শী নেতা। LTTE র বিভাজনের সুযোগে মাহিন্দ্রা রাজাপাকসে সরকার ব্যাপক আকারে সেনা আক্রমন শুরু করে তামিল টাইগার্সদের বিরুদ্ধে । ২০০৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত শ্রীলংকান সেনাবাহিনীর বিরতিহীন আক্রমণ , ভারত সরকার কর্তৃক তামিলনাড়ু উপকূল নৌবাহিনী দিয়ে সিলগালা করে দেয়া , বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়া , অন্তর্কোন্দলে LTTE র অবস্হান নাজুক হয়ে পড়ে ।

২০০৯ সালে এলটিটিই সর্বশেষ মরণ কামড় দেবার চেষ্টা করে । এরই ধারাবাহিকতায় তারা রাজধানী কলম্বোতে বিমান হামলা করে। LTTE বিমান বাহিনী প্রথমে কলম্বোতে অবস্থিত বিমান বাহিনীর সদর দপ্তরে হামলা করার চেষ্টা করে। কিন্তু পাল্টা আক্রমণে বিমানটি বিধস্ত হয় অপর একটি গুরুত্বর্পূণ ভবনের উপর। একাধিক ব্যক্তি নিহত হন। বিমানের চালকও নিহত হন। অপর আক্রমনটি পারিচালিত হয় কলম্বোর বিমান বন্দরে। সেখানে পাল্টা আক্রমণে পরাস্ত হয় এলটিটিই।

ক্রমাগত পরাজয়ের ফলে এ সময় তাদের রাজধানী কিলিনোচ্চিও হাতছাড়া হয়ে যায়। তাদের এক মাত্র ঘাঁটি মোল্লাইতিভু থাকে বাকি। কিন্তু ২০০৯ সালের ১৮ মে এখানে এক ভয়াবহ লড়াইয়ে পরাজিত হন প্রভাকরণ বাহিনী । শ্রীলংকান সেনাবাহিনীর দাবী – একটি এম্বুলেন্সে করে পালিয়ে যাবার সময় নিহত হন কিংবদন্তী ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণ ।
যখন প্রভাকরণ নিহত হন তখনই প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে তার দুবাই সফর অসমাপ্ত রেখে দেশে চলে আসেন। ঘোষণা করেন আনুষ্ঠানিক বিজয়। ঘরে ঘরে উড়ে পতাকা। জরুরী অবস্থা শিথিল করা হয় ।

LTTE র প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণের স্ত্রী , কণ্যা এবং ১২ বছরের শিশুপুত্র বালাচন্দ্রন কে লঙ্কান সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে বলে জেডিএস ( শ্রীলংকান গ্রুপ জার্নালিস্ট ফর ডেমক্রেসি ) এর পক্ষ থেকে প্রমাণ সহ দাবী তোলা হয়েছিলো , যেটা শ্রীলংকান সেনাবাহিনী বারবার অস্বীকার করে আসছে । যদিও এ অস্বীকার মিথ্যাচার। প্রভাকরণের পরিবারের সদস্যদের কোন খোঁজই পাওয়া যায়নি আর।

প্রভাকরণ
তরুণ বয়সে প্রভাকরণ ও তার স্ত্রী ইরাম্বু

ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ জীবনের শেষ সময়েও তামিলদের জন্য সশস্ত্র লড়াই করে গেছেন । মৃত্যুর আগেরশেষ একমাস প্রভাকরণ , তার পরিবার এবং অনুগত LTTE বাহিনীর সর্বশেষ যোদ্ধাদের দলটি নানতিকাদাল হ্রদ ও সমুদ্র বেষ্টিত সামান্য এলাকার মধ্যে শ্রীলংকান সেনাবাহিনী দিয়ে আটকা পড়েছিলো , তথাপি প্রভাকরণ আত্মসমর্পণ করেননি , প্রাণ ভিক্ষা চাননি ।

প্রভাকরণ
২০০৯ সালের ১৯ মে, প্রভাকরণকে হত্যার পর লাশ নিয়ে যাচ্ছে শ্রীলংকান সেনারা

যতোদিন তামিল জনগোষ্ঠী বেঁচে থাকবে ততোদিন তারা ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে । তামিলরা প্রভাকরণকে ‘ তামিল বাঘ ‘ নামেই ডাকে এবং তাদের বিশ্বাস প্রভাকরণের মতো সাহসী , আত্মত্যাগী তামিল বাঘের মৃত্যু হতে পারেনা , ইতিহাস তাকে হয়তো ভিলেন বানাতে চাইবে …… তবে তামিল জনগণের কাছে তিনি অবিসংবাদিত , এক অমর নেতা ।  “যদি কেউ সত্য ও ন্যায়ের জন্য মৃত্যু বরণ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তাহলে একজন সাধারণ মানুষও ইতিহাস তৈরী করতে পারে”- নিজের এই উক্তির মত সাধারণ এক তামিল পরিবারে জন্ম নেয়া প্রভাকরণ ইতিহাস তৈরী করে গেছেন।

লেখকঃ আসিফ শুভ্র
কবি ও লেখক