মাদ্রাসায় রান্না বিষাক্ত খাবার খেয়ে প্রাণ গেল ১ শিশুর, অসুস্থ আর ১৭।

0
মাদ্রাসায় রান্না বিষাক্ত খাবার খেয়ে প্রাণ গেল ১ শিশুর, অসুস্থ আর ১৭।

সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নোয়াখালীতে মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স ও এতিমখানায় রাতের খাবার খেয়ে নুর হাদী নিশান (৯) নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও ১৭ জন ছাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের সকলের বয়সই ৯-১০ বছরের মধ্যে।

বেগমগঞ্জ উপজেলার ৭নং একলাশপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পূর্ব একলাশপুর গ্রামের মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, রাতের খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ায় ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদরাসার ছয় শিক্ষককে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

বেগমগঞ্জ উপজেলার ৭নং একলাশপুর ইউনিয়নের পূর্ব একলাশপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়ার ছেলে নিহত নুর হাদী নিশান মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার নূরানী বিভাগের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার জানান, খাবারের সঙ্গে কোনো বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হয়েছে কি না তা তদন্ত করতে বাকি খাবার জব্দ করা হয়েছে। এ তদন্তের পর দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাদ্রাসা সূত্র হতে জানা যায়, ওই মাদরাসায় মোট শিক্ষার্থী ১২০ জন। এদের মধ্যে প্রথম ধাপে ১৮ জন রাতের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাকিরা আর খাবার খায়নি। মাদরাসায় দৈনিক মোট ৭০ শিক্ষার্থী খাবার খায়।

অসুস্থদের বরাত দিয়ে মাদ্রাসাকর্তৃপক্ষ পক্ষ আরও জানা্য, মাংসে একটু গন্ধ ছিল। এসময়ে অসুস্থদের মধ্যে নিশান মাদরাসাতেই মারা যায়।

মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক ইসমাইল হোসেন বলেন, সোমবার দুপুরে মাদরাসায় মাংস রান্না করা হয়। এশার নামাজের পরে আবাসিক বিভাগের ২০ ছাত্র ওই মাংস দিয়ে রাতের খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১৮জন ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবারই প্রচুর পেটে ব্যথা এবং বমি দেখা দেয়।

অসুস্থদের সঙ্গে আসা মাদরাসার এক শিক্ষার্থী জানান, নুরানির ছাত্ররা যখন ভাত খাচ্ছিল, তখন তারা নামাজ পড়ছিল। হঠাৎ্ত্‌ওই ছাত্রদের চিৎকার শুনে তারা এসে দেখে সবাই বমি করছে। গরুর মাংসগুলো একসঙ্গে দুপুরে রান্না করে আলাদা দুইভাগ করে রাখার জন্যে দুপুরে খাওয়ার পর কারও কোন সমস্যা হয়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘মাদরাসার অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানতে পেরেছি। শুনেছি রাতে বাচ্চাদের যে গরুর মাংস দেয়া হয়, তা তারা দুপুরেও খেয়েছিল। অসুস্থের পর একজন পল্লী চিকিৎসককে মাদরাসায় ডেকে আনাহলে তিনি অসুস্থ ১৮ ছাত্রকে কয়েক ধাপে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণেই ছাত্ররা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে অসুস্থদের মধ্যে নিশান নামে এক ছাত্রকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এছাড়া বাকি ১৭ ছাত্র এখনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

এ দিকে খবর পেয়ে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম খান ও সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার রাতেই হাসপাতালে গিয়ে শিশুদের খোঁজ খবর নেন বলে জানা গেছে।