প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষ দৃষ্টি দিতে গার্মেন্ট মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে পোশাক কারখানার মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ব্যবসা করেন। আপনাদের প্রফিট অবশ্যই আপনারা নেবেন। শ্রমিকদের কল্যাণের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন; এটা অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন শ্রমিকরাইতো আপনাদের কারখানা চালায়। আপনারা আজ যা কিছু উপার্জন করেন, তা এই শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে, সেই কথাটা সব সময় মনে রাখবেন, এই কথাটা আমার অনুরোধ।
তিনি শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেন এবং কোনো রকম উসকানিতে প্ররোচিত না হওয়ার পরামর্শ দেন শ্রমিকদের। শ্রমিক ভাই-বোনদের বলব, যে প্রতিষ্ঠান আপনাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে, আপনাদের আহার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে, সেই প্রতিষ্ঠানটা যাতে ভালোভাবে চলে, সে দায়িত্বটাও কিন্তু আপনাদের শ্রমিকদের।
এই প্রতিষ্ঠান থেকেই আপনি আপনার জীবন-জীবিকার সুযোগ পাচ্ছেন, আপনি অর্থ উপার্জন করছেন সেটা যাতে ভালোভাবে চলতে পারে অন্য কারও, বাইরের উসকানিতে যেন কোনোরকম দুর্ঘটনা সেখানে না ঘটে, সেটা বিশেষভাবে দেখতে হবে সবাইকে।শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির জন্য কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শ্রমিক রাজনীতির নামে কিছু এনজিও করে, আবার তারা শ্রমিক নেতাও সেজে যায়। শ্রমিকরা কত টাকা বেতন, কি পেল… তাতে ভাগ খাওয়ার জন্য নানাভাবে ঘোট পাকায়।এদের হাত থেকে সব সময় দূরে থাকবেন, আপনাদের যা সমস্যা হবে আমরা তো দেখবই। সাম্প্রতিক সময়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
মৃত ও পঙ্গু শ্রমিকদের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত কেন্দ্রীয় তহবিলে রপ্তানি মূল্যের দশমিক শূণ্য তিন শতাংশ হারে অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএয়ের সদস্য ছাড়াও যেসব প্রতিষ্ঠান পোশাক রপ্তানি করে, তাদেরকেও কেন্দ্রীয় তহবিলের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি।
তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন। বিগত অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি বাণিজ্যে মাত্র ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা দেড় দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তিন হাজার ৪৮৩ কোটি ৫০ লাখ (৩৪.৮৩বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অংক আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ কম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে একটা কথা বলতে হবে যে.. রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিদেশের অবস্থাটাও চিন্ত করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোতে.. যেখানে আমরা রপ্তানি করি, তারাও অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই বলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো রপ্তানি আমাদের কিছু কমেছে। এজন্য রপ্তানির নতুন বাজার সৃষ্টির তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।
কোন দেশে কী ধরণের চাহিদা; সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের সমস্ত নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। দেশে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর বাজারেও তৈরি পোশাকের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের নিজের দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমার নিজের দেশের বাজার আরো সম্প্রসারণ হচ্ছে। যত মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে, তত মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে আর আমার নিজের দেশে বাজার সৃষ্টি হবে। এটাও আমাদের জন্য ভালো। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো.. সেখানেও আমাদের বিশাল বাজার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
চলতি অর্থ বছরে বাজেট প্রস্তাবনায় এ শিল্পের জন্য অগ্রিম আয়কর এক শতাংশ ঘোষণা করেও পরবর্তীতে তা কমিয়ে পূর্বের দশমিক সাত শূন্য শতাংশে বহাল রাখার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের জন্য তো আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা যদি আয়কর বা ট্যাক্স তুলতে না পারি, তাহলে আমরা উন্নয়নটা করব কোথা থেকে? আমরা বিদেশের কাছে হাত পেতে বা ভিক্ষা করে চলতে চাই না। আমাদের নিজেদের অর্থের সংস্থান করতে হবে।তৈরি পোশাক শিল্পে পরিবেশবান্ধব কারখানার ক্ষেত্রে আয়করের হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য শ্রমিকদের কল্যাণ। এক্ষেত্রে মালিক, শ্রমিক ও সরকার মিলে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে, সে ধরনের একটা ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। শ্রমিকদের কল্যাণে নেওয়া পদক্ষেপগুলো যেন শ্রমিকদের কাজে লাগে তা নিশ্চিত করতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে ডেটাবেইজের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে অনুরোধও করেন প্রধানমন্ত্রী।
এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্ট কারখানায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৩৪ জন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে সহায়তার চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং বিজিএমইএয়ের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানও বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানে।