মিঠাইওয়ালা

0
মিঠাইওয়ালা

ছেলেটার নাম মানিক, মিঠাইওয়ালা। আমার জানামতে মানিক নাম হয় সুন্দর ছেলেদের। পাতিলের তলার মত গায়ের রঙ, কোন গুণে যে তার নাম মানিক, সেটাই বোধগম্য হয়নি আমার। কোঁকড়ানো চুল, যত্নহীনতার দরুণ ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে, বাবুই পাখির বাসা বললে অবিচার হবে না সম্ভবত। চোখগুলো কেমন জানি, তবে অনায়াসেই দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়। কেমন জানি জুলুজুলু চোখে তাকায়, বানরকে খাঁচায় ভরে সামনে কলা দিলে যেমন হয় আর কি। মানিকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হলো তার হাসি। খুব সুন্দর করে হাসতে পারে সে। কে জানি বলেছিল “পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হল কারও হাসিমাখা মুখ”, এই উক্তিটা বারবার মনে পড়ে তার হাসি দেখলে। কালো মুখে সাদা দাতের হাসিটা দারুণভাবে ঝলমল করে। আগের বছর কলেরাতে যখন গাঁয়ের অনেক লোক মারা গেল, তখন মানিকের বাবাও মারা যায়। তারপর থেকে ছোট বোন আর মা নিয়েই মানিকের পরিবার। মানিকের বাবা যখন মারা যায়, তখন মানিকদের অবস্থা শোচনীয়। একবেলা খেতে পারলে, দু’বেলা না খেয়ে থাকে। মানিকের মা এসে যখন কাজ নিল আমাদের বাড়িতে, তখন তিনবেলা খাবার জোগাড় হলো। মানিকও আসতো আমাদের বাড়িতে, মায়ের কাজে সাহায্য করত। আমার সাথে দেখা হত, কিন্তু কখনো কথা বলত না। ভয় পেত, কর্তার মেয়ের সাথে কথা বলতে নেই। আব্বু তখন কয়েকদিন পরপরই বিদেশ যায় ব্যবসার কাজে। সেবার বিলেত থেকে আসার সময় একটা খেলনা ভালুক নিয়ে এসেছিল। ভালুকটা খুব পছন্দ হয়েছিল আমার। সারা শরীরে কালো লোমশ সুতো, চোখগুলো জ্বলে অন্ধকারে। সারাদিন জড়িয়ে ধরে রাখতাম, লোমশ সুতার জন্য আরামও লাগত জড়িয়ে ধরলে। ভালুকটা এতই পছন্দের ছিল যে, ভালুক পাবার পর থেকে রাতে আম্মুর বদলে ভালুকটাকেই জড়িয়ে ঘুমাতাম। মানিক তখনো মিঠাই বিক্রি শুরু করেনি। তার মায়ের কাজে সাহায্য করতে আমাদের বাড়িতে আসে। একদিন ভালুকটা রেখে একটু বাইরে গিয়েছিলাম, এসে দেখি মানিক কথা বলছে ভালুকের সঙ্গে। “কিরে? খাইছস? হারাদিন তো কুলের বিত্তে থাকস। তরে তো খাওয়ায় না কিচু, হিহিহি।” পেছনে তাকিয়ে যখন আমাকে দেখল, প্রচণ্ড ভয় পেল। একরকম দৌড়িয়েই পালিয়ে গেল আমার সামনে থেকে। কারণটা জানি, আম্মুর কাছে বিচার দিলে শাস্তি পেতে হত তাকে, কিন্তু করিনি সেটা। সেদিন তার জুলুজুলু চোখের মানে বুঝেছিলাম, আমার খেলনাগুলো দেখে তারও খেলতে মন চাইত, কিন্তু পাবে কোথায়? ওইসবের তো অনেক দাম, আব্বু বিদেশ গেলে নিয়ে আসে। পালানোর একসপ্তাহ পর বাড়িতে আসলো মানিক, চুপচাপ তার মায়ের কাজে সাহায্য করে চলে গেল। ভয়ে ভয়ে ছিল, যদি আম্মু ডেকে শাস্তি দেয়, সেজন্যে। তবে জুলুজুলু চোখের মায়াতেই বোধহয় পরেরদিন মানিককে ডেকে আম্মু বুঝবে না এমন কিছু পুরান খেলনা দিয়ে দিলাম। খেলনাগুলো পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিল মানিক, কালো মুখে সাদা দাতের ঝিলিকটা আবারও দেখলাম। কৃতজ্ঞতাসূচক হাসি দিয়ে দাঁড়ায়নি আর, সাথে সাথে খেলনাগুলো নিয়ে চলে গেল। পুটলির ভেতরে কি কি আছে, তা দেখার জন্য অস্থির সে। এরপর থেকে নিয়মিত আসতো আমাদের বাড়িতে, কাজ করত। তারপরেও তাকে আরও কিছু খেলনা দিয়েছিলাম। কিন্তু ভালুকটা যে তার মূল আকর্ষণ ছিল, তা সহজেই বুঝেছিলাম। দুপুরে খেয়ে ভালুকটাকে নিয়ে শুয়েছিলাম। হঠাৎ করে পরিচিত গলার আওয়াজ শুনলাম, “এএএই মিডাই খাইবেন্নি মিডাআআআইই, মিডাই খাইবেন্নি মিডাআআআইই” ঘর ছেড়ে বের হলাম, অবাক চোখে দেখলাম মানিক মিঠাই বিক্রি করছে। হ্যাঁ, মানিকই। ছেলেমেয়েরা ঘিরে ধরেছে তাকে। ভালোকরে দেখার জন্যে কাছে গেলাম। সাদা লুঙ্গি, সাদা শার্ট, মাথায় লাল গামছা বাঁধা, পাকা বাঁশের একটা ফালি কাঁধে, দুইকোনায় দুটো রশি বাঁধা, তাতে ঝুলছে দুটো কাঁচের বাকসো, বাকসের ভিতরে হলুদ আর গোলাপি রঙের মিঠাই। মুহুর্তেই মিঠাইয়ের বাক্স খালি হয়ে এলো, মানিকের মুখে বিজয়ের হাসি। আমাকে দেখে যেন মন খারাপ হল মানিকের। কেন বুঝলাম না, চলে আসলাম। পরেরদিন দুপুরে আবার মানিকের গলা শুনলাম, “মিডাই খাইবেন্নি মিডাআআইই” আম্মুর কাছ থেকে দু’আনা নিতে একটু সময় লাগল। ততক্ষণে ছেলেমেয়েরা ঘিরে ধরেছে মানিককে, আমি যেতে যেতে কিছু মিঠাই বেঁচে থাকল। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখলাম, মানিক মিঠাইগুলো বিক্রি করতে চাইছে না, কেন জানি? তবে ছেলেগুলাও নাছোড়বান্দা, তারা মিঠাই কিনবেই, ক্রমাগত বিরক্ত করছে মানিককে। আমায় দেখে মুখ উজ্বল হলো মানিকের, সাথে সেই নিষ্পাপ হাসি। “আফামনি, আফনার লাইগা রাখছি, ছ্যামরাডি বহুত জালাইতাছে, এডি লইয়া আমারে উদ্দার করেন।” পিচ্চিগুলো কেটে পড়েছে আমায় দেখে, তবে আমার ঘোর কাটেনি তখনও। মানিক আমার জন্যে মিঠাই বিক্রি করেনি, আমার জন্যে রেখে দিয়েছে। আগেরদিন আমায় দেখে মন খারাপ হবার কারণ বুঝলাম, আমার জন্য মিঠাই রাখতে মনে ছিল না বোধহয়। দু’আনা দিতে চেয়েছিলাম, নিল না। ঠোঙ্গায় ভরে মিঠাইগুলো আমার হাতে দিয়ে হাসিমুখে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম সেই হাসি। সত্যিই, হাসিমুখের চেয়ে সুন্দর কোন দৃশ্য স্রষ্ঠা সৃষ্টি করেননি। এই ঘটনার পূনরাবৃত্তি হতো প্রতিদিন, কিছু মিঠাই বিক্রি করত না, সেটা ঠোঙ্গায় ভরে দাম না নিয়েই চলে যেত। একদিন জোর করেই দাম দিলাম, তারপর থেকে দাম দিয়েই খেতাম। কিছু গল্পও করা হত, আস্তে আস্তে বেশ ভালোই মিশে গেলাম তার সাথে। সারাদিন বাড়িতে একা থাকি, একটা খেলার সঙ্গী মন্দ নয়। মানিক এমনিতেও আফামনি ডাকত, তার উপরে বয়সেও ছোট, ছোটভাইয়ের মতোই মনে করা শুরু করলাম, আর বলেছিলাম আর সবার মতো যেন আমায় ‘বুবু’ ডাকে। আম্মু আঁচ করতে পেরেছিল ব্যাপারটা। বলেছিল, আমাদের বংশের মুখে কালি মাখাচ্ছি আমি। কালো আর নীচ জাত একটা ছেলের সাথে খেলধুলা করছি। এইসব কথা মানিকের সামনেই বলেছিলো, মানিক কিছু মনে করেনি। ধনীক শ্রেণির কাছে এইসব শুনে অভ্যস্ত মানিক। কিন্তু আমার কঠিন জবাবের পরে আম্মু বলেনি কিছু, আর আব্বু তো ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত, এতকিছুতে নজর দেবার সময় কই? সকাল-দুপুর স্কুল, বিকেলে মিঠাইওয়ালার সাথে খেলা, দু’আনার মিঠাই আর মিঠাইওয়ালার বুবু ডাক যেন ভাই-বোন না থাকার অভাবটা ঘুঁচিয়ে দিয়েছিলো। আব্বুও সপ্তাহ পর পর আসে একদিনের জন্য, ভালোই কাটছিল। হঠাৎ করেই একদিন মানিক হাঁপাতে-হাঁপাতে এলো, দৌড়িয়েছে বুঝা যায়। জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে রে? অমন হাঁপাচ্ছিস কেন রে?
মিঠাইওয়ালা
কী জয় করে এলি?” “জয় নাগো বু, শহরে বাংগালি মারতাছে পাকিস্তানিরা, শহরের মানু গাঁয়ের দিকে আইতাছে সব, শেখ মুজিব যে? হেই বেডারে দইরা নিছেগা, এহন বেবাক মানু নাকি যুদ্দ করবো, আমিও করাম।” মানিকের কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না, সত্যতা যাচাইয়ের জন্য জিজ্ঞেস করলাম, “কে বলছেরে এইসব কথা?” “পুবপাড়ার মতিন কাকু, কাকু যুদ্দ করবো, আমিও করাম, হুমমম।” যুদ্ধ যেন খেলনা, তার জুলুজুলু চোখে তীব্র আগ্রহ এই খেলনার প্রতি। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। স্কুলও বন্ধ কিছুদিন ধরে। আব্বুও বলে গেছে ঘরের বাইরে বের না হতে। আমার প্রয়োজনও পরে না, মিঠাই নিয়ে বাড়িতেই আসে মানিক। গলায় কর্তৃত্বের সুর এনে বললাম, “চুপ, যুদ্ধ করবে? বুঝিস কিছু? প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবি না, এই পাড়ায় যা বিক্রি করতে পারবি, তাতেই হবে, পুবপাড়ায় যাবার দরকার নেই। বাড়িতে যা, একটু পর খেলতে আসিস।” আমার কথায় আহত হলো মানিক, মুখগোমড়া করে চলে গেল, বিকেলে খেলতে এল না। পরেরদিনও এল না, মনি বলল জ্বর হয়েছে মানিকের। আম্মুর কাছে মিথ্যে বাহানা করে চলে গেলাম মানিককে দেখতে, কিছু টাকাও দিয়ে এলাম মানিকের মায়ের কাছে। জ্বর সেরে ১১ দিন পর যখন এলো, তখনো আনমনা ভাব। মজা করে বললাম, “কী রে, বিয়ে-টিয়ে করলি নাকি? অত চিন্তা কিসের?” “না গো বু, কালকা নাকি অনেক বাংগালি মারছে পাকিরা, তয় বাংগালিরাও মারছে কিছু, যুদ্দ নাকি শুরু অয়া গেছে।” আমিও শুনেছি সে খবর, শহরে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে পাকিস্তানি সেনারা। মানুষ গাঁয়ের দিকে আসছে প্রাণ বাঁচাতে। কিন্তু গাঁয়ে এসেও রক্ষে নেই। আশেপাশের কিছু গ্রামও পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার শিকার হয়েছে। এই এলাকার মধ্যে বিষ্ময়করভাবে আমাদের গ্রামটাই পাকিস্তানি বর্বরতার শিকার হয়নি। মানিকের প্রচণ্ড ইচ্ছা সে যুদ্ধ করবে, দেশের জন্যে, দেশের স্বাধীনতার জন্যে। কিন্তু ও যে এখনও পিচ্চি, সেটাই তাকে বুঝাতে পারছি না। তার কানে বাজে স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদ, ছেলেহারা মায়ের কান্না, বুটের নিচে পিষে যাওয়া কোনো নিষ্পাপ বাচ্চার অর্থহীন চিৎকার, ধর্ষিতার সম্ভ্রম রক্ষার আকুতি। মাঝে মাঝে মানিককে দেখলে ভয় পাই, চোখগুলো লাল হয়ে যায় তার, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে, “বু, এমনে আর কতদিন? আমার সইয্য অয় না, তারা মারতাছে, আমি চায়া চায়া দেকতাছি, পতিশুদ নিমুই আমি।” সেদিন বিকেলে খেলতে এলোনা, এলো সন্ধায়। এসে বললো, “বু, যুদ্দ করবার যাইতাছি, বাইচ্চা থাকলে দেহা অইবো, মাফ কইরা দিস, গেলাম।” কিচ্ছুটি বলতে পারিনি, শুধু অবাক চোখে দেখলাম মতিন কাকার পিছন পিছন চলে গেল, একবার ফিরেও তাকালো না। কি নিষ্ঠুর! তারপর থেকে তিনমাস মানিকের দেখা নেই, কোনোরকম খোঁজও পাইনি। আমাদের গাঁয়ে এখনও আক্রমণ করেনি পাকিস্তানিরা। আজ হঠাৎ করে দুপুরে মানিক আসল। এইটুকু বয়সে জীবনে যত আনন্দ করেছি, সব আনন্দ একসাথে করলেও তার সমান হবে না, যতটুকু মানিককে দেখে পেয়েছি। তবে মানিকের চেহেরা পাল্টে গেছে, দশ বছর বয়স যেন বেড়ে গেছে এই তিনমাসেই। এসে কিছু কথা বলে এমন একটা তথ্য দিলো, যাতে অবাক না হয়ে পারলাম না। আমাদের গাঁয়ে আক্রমন না হবার কারণ নাকি আমার আব্বু, তিনি নাকি পাকিস্তানি সেনাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন, তাদেরকে সাহায্য করছেন, এককথায় তিনি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। মানিকের কথার সত্যতা পেলাম আব্বুর উপর নজরদারী করে। কয়েকদিনের ভেতরেই বুঝে গেলাম, আব্বু প্রত্যক্ষভাবেই স্বাধীনতাবিরোধী। পাকিস্তানি ক্যাম্পে খাবার পৌঁছানো, তাদের আশেপাশে এলাকার দিকনির্দেশনা দেয়া সহ আব্বু বিভিন্ন ভাবেই তাদের সাহায্য করছে। এরপর থেকে মানিক নিয়মিত আসতো, এক-দুইদিন পর পর। এসে বিভিন্ন তথ্য দিত, আর আব্বুর কাজে আমি যদি কিছু বুঝতে পারতাম, তা জানাতাম মানিককে। আমাদের এলাকা ছাড়ার পরও আব্বু পাকিস্তানিদের সাথেই ছিল, তাই পাকদের অনেক কাজের তথ্য আগেই জানতে পারতাম। মানিকের কাজই ছিল আমার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পাকদের মোকাবেলা করা বা আক্রমণ করা, কত তথ্য দিয়ে যে পাকদের আক্রমণ ব্যর্থ করেছি, তার ইয়ত্তা নেই। নভেম্বরের শেষে, পাকদের লেজ গুটানোর সময় এসেছে প্রায়। অনেক জায়গায়ই লাল সবুজের পতাকা উড়ছে। আব্বুর ব্যস্ততা বেড়েছে, নিজের আর পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তিনি, তার সব পরিকল্পনা ভেঙ্গে ধূলিষ্মাত হয়ে গেছে। পাকদের এক বড় কমান্ডার এলো বাড়িতে, আব্বুর সাথে জরুরী মিটিং করল। একপর্যায়ে কয়েকটা গুলির আওয়াজ শুনলাম। পরক্ষণেই বাড়লো গুলির আওয়াজ, প্রচণ্ড গুলাগুলি শুরু হল, কিছুক্ষণ পর সব থেমে গেল। নিচতলা থেকে পরিচিত কণ্ঠের আর্তনাদ ভেসে আসছে, অতি পরিচিত এই কণ্ঠ। সব ভয়-ভীতি ঝেড়ে দৌড়িয়ে নিচে নামলাম। মানিক, আমার ভাই মানিক, তাকে ঘিরে ধরেছে কয়েকজন লোক। মুক্তিযোদ্ধা হবে হয়তো। আমি কাছে গেলাম, মাথাটা কোলে রাখলাম। সে হাসল, বিজয়ের হাসি। অতি নিকটে এই বিজয়। কালো মুখে সাদা দাঁতের হাসিটা ঝলমল করে উঠল। আমি তাকিয়ে আছি, হাটুবেয়ে মানিকের তাজারক্ত পড়ছে। আমি একমনে তার হাসি দেখছি। জ্ঞান ফেরার পর যখন মতিন কাকাকে দেখলাম, তিনি আরেকটা খবর দিলেন। আব্বু-আম্মু দুজনেই মারা গেছেন। আমাদের বাড়িতেই মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন তারা। মানুষ অনুভূতিহীন হয়ে যায় কখনো কখনো, জানি না তখন আমার অনুভূতি ছিলো কিনা। খুব হাসি পেয়েছিলো সেদিন। কারণটা জানি না, জানতে চাইও না। আজ ভাই নেই, বুবু বলে কেউ ডাকে না। কেউ বলে না যে, “বুগো, তুর ভাল্লুকের চোখ আর আমার চোখ একরহম, দুইটাই আন্ধারে জ্বলে, হিহিহি।” ভাই নেই তো কি হয়েছে, লাল আর সবুজ রঙটাই আমার ভাই, স্বাধীনতার রক্তিম পতাকাটা আমার ভাইয়ের প্রতিচ্ছবি। পতাকাটাকে যখন কেউ বিশ্বদরবারে উঁচু করে ধরে, ঝলমলে হাসিটা ভেসে উঠে চোখের কোনে। মানিকের একটা ভাগ্নে আছে, তার নামেই নাম রেখেছি, মানিক। মানিকের জন্য একটা ভালুক কিনেছে তার আব্বু, খেলনা ভালুক। সারা শরীরে কালো লোমশ সুতো, চোখগুলো জ্বলে অন্ধকারে। আমার পিচ্চি ভাইয়ের রক্তাক্ত শার্টটা আজও রেখে দিয়েছি সযত্নে, আমার অনুপ্রেরণা, বেঁচে থাকার অবলম্বন। রক্তাক্ত শার্টটা মানিক দেখে আর বলে “মিতাইওয়ালা, মিতাইওয়ালার শাত।”

লেখাঃ Nur Al Mahmud Mayen

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে