চট্টগ্রামে মিরেরসরাইয়ে নির্মিতব্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল-বেপজার অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী দুই বছরে এখানে ৩৫০টি কলকারখানায় ৫৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগের আশা করছে সরকার। আর কারখানাগুলো দুই বছরের মধ্যে চালু হবে এবং সেখানে পাঁচ লাখ নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।
মিরসরইয়ের সংসদ সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এই চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেয়ার দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জানান, সব অর্থনৈতিক অঞ্চলেই চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে স্থানীয়রা।
বিনিয়োগ আকর্ষণে বুধবার রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেপজার ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টর সামিট’ উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বেপজার এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করেন।
মিরসরাই থেকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল-বেজার জন্য অধিগ্রহণ করা ৩০ হাজার ৭৯ একর জমির মধ্যে বেপজাতে বেপজাকে ১১৫০ একর জমি দেয়া হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে এই জমিতে শিল্প স্থাপন হবে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বলেন, ‘উন্নয়নের মাইলফলক চট্টগ্রামে রচনা করায়, চট্টগ্রামের সকল মানুষের পক্ষ থেকে আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
সেখানে উপস্থিত গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমার আর কোনো কিছু দাবি নেই। আমার একটাই দাবি, শুধু আমার অঞ্চলের বেকার যুবকদের যেন কর্মসংস্থান হয় এখানে।’
পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাইছি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে, সাথে সাথে অর্থনৈতিক অগ্রগতি যেন হয়, সে লক্ষ্য সাধন করতে। আর সে কারণেই আজকে এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি সমস্ত এলাকাভিত্তিক।’
এরপর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দাঁড়িয়েই মিরেরসরাইয়ে বেপজার অর্থনৈতিক অঞ্চলের ফলক উন্মোচন করেন। এ সময় গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, আমার চাকরিটা কই গেল, আমার চাকরি?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই চাকরি হবে। আমরা সমগ্র বাংলাদেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, তার অর্থ হলো, প্রত্যেকটা এলাকায় যে অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে, সে এলাকার ছেলে মেয়েরা অগ্রাধিকার পাবে।’
‘এ ছাড়া অঞ্চল বিশেষে যেসব পণ্য উৎপাদিত হবে, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তারও একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
‘আমাদের কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে। যত্রতত্র যেন শিল্প গড়ে না উঠে। এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এটা আমাদের কৃষিজমির জন্য ক্ষতিকর।’
মিরসরাইয়ে যে জায়গায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, সেটি ছিল একটি চর এলাকা। মোশাররফ হোসেনই এই জমিটির কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমনন্ত্রীকে। আর এ জন্য শেখ হাসিনা তাকে ধন্যবাদ জানান।
‘এটা এমন সুন্দর একটা জায়গা হবে, চট্টগ্রামের পুরো চেহারাটাই পাল্টে যাবে’। এরপর অনুষ্ঠানে বেপজার পক্ষ থেকে প্রধানন্ত্রীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী বেপজা ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টর সামিট উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশে বেপজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি বিভিন্ন পণ্যের প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। তিনি বিভিন্ন পণ্য হাতে নিয়ে দেখেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে তার সঙ্গে ছবিও তোলেন একটি প্রদর্শনী কেন্দ্রের একজন নারী।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এ সময় বক্তব্য দেন।
অন্যদিকে মিরেরসরাইয়ে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা, ব্যবসায়ীরা।