হালদা একটি নদী। চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি এলাকায় ১০৬ কি.মি. লম্বা একটি নদী এবং এশিয়ার মধ্যে মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র। এই মুভিতে এই হালদাই বলা যায় প্রধান চরিত্র। এর আগে পদ্মা নদীর মাঝি এবং তিতাস একটি নদীর নাম মুভি বানানো হয়েছিল নদীকে কেন্দ্র করে। কিন্তু সেগুলোতে নদীর থেকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল নদীর পাড়ের মানুষগুলোর উপরই। তাই বলে বলছিনা হালদা মুভিতে নদীর পাড়ের গল্প ছিলনা। ছিল। তার পাশাপাশি ফোকাস করা হয়েছে হালদা নদীকে। যে নদী পুঁজিপতিদের দখলে পড়ে এখন মরতে বসেছে। লক্ষ লক্ষ মাছের প্রজনন হয় এই হালদা নদীতে, অথচ সেই নদীই আজ ধুকছে।
এ তো গেল নদীর কথা। এবার আসি মাছের কথায়। সরকার আইন করে হালদা নদীতে মাছ ধরতে নিষেধ করে দিয়েছে। কারণ শুধুমাত্র প্রজননের সময়েই প্রচুর মাছ আসে এই নদীতে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও প্রভাবশালীদের ইশারায় অনেক কুচক্রী জেলেরা ডিমওয়ালা বড় বড় মাছে ধরে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে। একটা মা মাছ লক্ষ লক্ষ ডিম, যা থেকে লক্ষ লক্ষ মাছ হয়। কিন্তু লোভে পড়ে অসাধু জেলেরা ঐ ডিমওয়ালা মাছ ধরে। কিন্তু যারা প্রকৃত জেলে, এবং যারা হালদাকে ভালোবাসে তারা মা মাছ ধরাকে ক্ষমার অযোগ্য পাপ মনে করে। এই ব্যাপারটাও খুব সুন্দর ভাবে ফোকাস করা হয়েছে হালদায়।
মুভির একদম প্রথম দৃশ্য থেকেই একটা ভালো লাগা কাজ করছিল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিল অসাধারণ। ঠিক যেখানে যেমনটা দরকার ছিল। তিশার অভিনয়ের কথা কী বলব, পুরাই অস্থির টাইপ অভিনয়। আস্তে আস্তে পরিণত হয়ে ইঠেছে তিশা। আগের সেই একই ঢঙের ন্যাকামো তার মধ্যে এখন ছিটেফোঁটাও নেই। মোশারফ করিম গুণী অভিনেতা। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে মোশারফকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারতো পরিচালক। পর্দায় তিশা আর মোশারফের কেমিস্ট্রি চমৎকার লেগেছে। কি সুন্দরভাবে সাধারণ কথায় তারা ভালোবাসা প্রকাশ করেছে, কোনো ন্যাকামি নেই। তাদের কেমিস্ট্রি দেখলে আপনার বুকেও মোচড় দিয়ে উঠবে। ইচ্ছে হবে কাউকে এভাবে ভালোবাসতে।
জাহিদ হাসানের অভিনয় লা জওয়াব। এখানে তার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে ঠিকভাবে ক্যারেক্টারটা করতে পারতো কিনা আমি জানিনা। ফজলুর রহমান বাবু তো লিজেন্ড। যেকোনো ক্যারেক্টারেই চমৎকারভাবে মানিয়ে নিতে পারেন তিনি। তার জায়গায় অন্য কেউ করতেই পারতো না এরকম ডেডিকেশন নিয়ে।
মুভির প্রত্যেকটা গান সুন্দর। তাছাড়া চিরকুট থেকে বের হওয়ার পর পিন্টুর গলা মনে হয় আরও খুলেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও তার করা।
পরিচালনা, ক্যামেরার কাজ, সাউন্ডের কাজ সবই ভাল ছিল। তবে গল্পটা আমার কাছে একটু দুর্বল লেগেছে। আরও একটু স্ট্রং হতে পারতো। গল্পের দুর্বলতা ছাড়া আর কোনো অসংগতি আমার চোখে পড়েনি। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় করা হলেও খুবই সহজ ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে যেন সহজেই মানুষ বুঝতে পারে। অন্তত আমার অসুবিধা হয়নি বুঝতে। তাছাড়া নিচে সাবটাইটেলও ছিল। তবে সাবটাইটেলে কাজিন বানান ভুল ছিল।
যাইহোক, অনেক কথা বলে ফেললাম। যারা দেখবেন কি দেখবেন না দোটানায় ভুগছেন, তারা দেরি করবেন না। এইরকম একটা মুভি মিস দেয়া উচিৎ হবেনা।
ধন্যবাদ রাব্বী ভাই ও থিয়েটার থ্রেডের সবাইকে এত সুন্দর একটা ইভেন্টের আয়োজন করার জন্য। একদিন আমাদের হাত ধরেই আবার বাংলা সিনেমা তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। সেই প্রত্যাশায়, শুভরাত্রি।
লেখকঃ মাসুম আহমেদ আদি