বাঙালির সিনেমাপ্রীতি বহু পুরনো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যেভাবে এগোয়, একটা সময় পর খেই হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। তবুও সিনেমার প্রতি দর্শকের ভালোবাসা কমেনি। ভালোবাসা বাড়িয়ে দিতে ফেসবুকে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মুভি লাভারস অব বাংলাদেশ নামক একটি গ্রুপ। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা আট লাখের বেশি। দেবী, বেঙ্গল বিউটি, নোলক, শুনতে কি পাও’র মতোন চলচ্চিত্রগুলোর প্রচারণায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ তাদের। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি বিশ্ব সিনেমা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা, সমালোচনার অন্যতম বড়ো ও সুন্দর এই প্ল্যাটফর্মের জন্ম ‘তাসনিম শায়লা জেরি’র হাত ধরে। কর্পোরেট কেবিনে থেকেও যিনি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে হয়ে উঠেছেন প্রিয় জেরি আপু। ‘নিউজ ইনসাইড’- এর বিশেষ সাক্ষাৎকার সেগমেন্টে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জেরি’র গল্প শুনেছেন জহিরুল কাইউম ফিরোজ।
• মুভি লাভারস অব বাংলাদেশ খোলার ভাবনাটা কোথা থেকে এলো?
তাসনিম শায়লা জেরি: তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। ক্লাসের ফাঁকে ক্যান্টিনে আড্ডায় বন্ধুদের সাথে সিনেমা, সিরিজ নিয়ে কথা বলতে বেশ লাগতো। আড্ডায় ভালো ভালো অনেক সিনেমার নাম জানা হতো। গতদিন কে, কোন সিনেমা দেখলো, কোনটা ভালো লেগেছে, কোনটা খারাপ, সিনেমায় কী কী ইলিমেন্ট ছিল সেসব নিয়ে খুব আলাপ হতো। সেখান থেকে মূলত মুভি লাভারস অব বাংলাদেশ খোলার কথা মাথায় আসে। প্রথম দিকে বিষয় টা ক্যাম্পাস কেন্দ্রিকই ছিলো। পরে ধীরে ধীরে পুরো বাংলাদেশের সিনেমা খাদকরা এক হলো। সব সময় চেয়েছিলাম সকল রুচির সিনেপ্রেমীরা যাতে এক টেবিলে বসে আড্ডা দিতে পারি, এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারলে মন্দ হতো না। সেই ভাবনা থেকেই মুভি লাভারস অব বাংলাদেশের জন্ম।
• মুভি লাভারস অব বাংলাদেশ এখন অনেক বড়ো একটা পরিবার। বাংলা সিনেমার প্রসারে ভবিষ্যতে কী কিছু করার পরিকল্পনা আছে এখান থেকে?
জেরি: মুভি লাভারস অব বাংলাদেশ যে দিন জন্ম নিয়েছে, সেদিন থেকেই সবাই মানসম্মত বাংলা সিনেমা নিয়ে কাজ করছি। সিনেমা দেখছি, সিনেমা নিয়ে লিখছি, ইভেন্ট করছি, সিনেমার কলাকুশলীদের সাথে আমাদের প্ল্যাটফর্মের সম্মানিত সদস্যদের যোগসূত্র স্থাপন নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সাপ্তাহিক লাইভ হয়, সেখানেও বিশেষ সিনেমা বা কন্টেন্টকে কেন্দ্র করে প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে কলাকুশলীদের সাথে সদস্যরা মিলে আড্ডা দিয়েছি। আমাদের দেশের যেকোনো কন্টেন্টকে মানুষের যতটা কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব, তার জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করি। দিনশেষে দেশিয় কন্টেন্ট নিয়ে যখন আমাদের প্ল্যাটফর্মে আলোচনার বন্যা বয়, তখন খুশির অন্ত থাকে না।
• বাংলা চলচ্চিত্র কেনো পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন?
জেরি: এই প্রশ্নের উত্তর তো ব্যাপক। অল্প কথায় বলব কী করে! তবে খুব কম বাক্য ব্যয় করে শুধু এতটুকু বলতে চাই, যত্ন আর নিষ্ঠার সাথে সিনেমা বানালে ইন্ডাস্ট্রির এই দুর্দিন আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারবো। সিনেমা হলো টিমওয়ার্ক। কোনো একটা ধাপে যদি কাজের অবহেলা হয় তখন সেটি সার্বিকভাবে সিনেমায় প্রভাব ফেলে। ধরুন, স্ক্রিপ্ট ভালো ছিলো। নির্মাতা বেশ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আর্টিস্ট তার শতভাগ চেষ্টাটা দেননি কিংবা সিনেমা এডিটিংয়ে যাওয়ার পর সব ভেস্তে গেলো। তখন বিষয়গুলো ওই সিনেমায় প্রচন্ড প্রভাব ফেলবে। মোদ্দাকথা৷ যার যা কাজ, তা যত্ন নিয়ে করতে হবে। আমাদের দেশের দর্শক এখন অনেক স্মার্ট। তারা অনেক কিছু বোঝেন। অনেক কিছু ধরতে পারেন। হয়তো গুছিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। এটিকে সিনেমা সংশ্লিষ্টরা নিজেদের প্লাস পয়েন্ট ভাবে। অথচ উচিত হচ্ছে, দর্শকের চোখ ফাঁকি না দিয়ে বরং তাদের চাওয়া পাওয়া বিশ্লেষণ করে ফাইন্ড আউট করা।
• আপনার দেখা বাংলা চলচ্চিত্রের সেকাল একাল…
জেরি: ছোটবেলায় বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিলো বিটিভি। প্রতি শুক্রবার বিকাল তিনটায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসে যেতাম সিনেমা দেখতে। সেইসব দিনের, সময়ের সিনেমার যে ভার ছিলো তা বর্তমান মানদন্ডে পরিমাপ করা ঠিক হবে না। তখনকার সময়ে সিনেমায় গল্প ছিল, চিত্রনাট্য ছিল পরিমিত আর দুর্দান্ত সব আর্টিস্টদের অভিনয় ছিল। সিনেমা দেখা শেষে চোখ ও মন জুড়িয়ে যেতো। সেই তুলনায় একালের সিনেমাগুলো বেশি দিন মনে ঠাঁই পায় না। এখন ধীরে ধীরে কিছু মানসম্মত কাজ শুরু হয়েছে। বাকিটা আরও সময় পার হলেই বলা যাবে।
• আপনার মতে বাংলা ছবির নেক্সট বিগ হিরো কে?
জেরি: আমার মতে একটা ইন্ডাস্ট্রির একজন বিগ হিরো থাকা ঠিক না। এতে ইন্ডাস্ট্রিরই ক্ষতি। আমি চাই অনেক ভালো ভালো আর্টিস্ট এসে এখানে জায়গা করে নিবেন তাদের দক্ষতা দিয়ে। বর্তমানে যারা আছেন তারাও স্ব স্ব অবস্থান থেকে সেরাটা দিবেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি কোন ফ্যানবেইজে বিশ্বাসী না। আমি ভালো সিনেমার ভক্ত। আর সেটি যে কেউই ইন্ডাস্ট্রিকে উপহার দিতে পারেন।